দুই দেশের শক্তির যে পার্থক্য তাতে থাইল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশের হার অনুমেয়ই ছিল। শুক্রবার ব্যাংককে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে থাইল্যান্ড। ১২ বছর আগে ঢাকায় বাংলাদেশকে ৯-০ গোলে হারিয়ে গিয়েছিল থাইল্যান্ডের মেয়েরা।
ম্যাচের পর বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের একটি ভিডিওবার্তা গণমাধ্যমে প্রেরণ করেছে বাফুফে। সেখানে পিটার বাটলার কিছু খেলোয়াড়ের মানসিকতা ও আরচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং কঠোর বার্তা দিয়ে বলেছেন-তিনি আগের মতোই কঠিন থাকবেন এবং অসম্মান ও বাজে আচরণ সহ্য করবেন না।
ম্যাচ আয়োজন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পিটার বাটলার। তিনি বুঝতে পারছিলেন না এটা আদৌ ফিফার টায়ার-১ প্রীতি ম্যাচ কিনা। কোচ বলেছেন, ‘আমি জানি না এটি টায়ার-১ প্রীতি ম্যাচ ছিল কি না। কারণ আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে এমন পরিবেশে খেলেছি, যেখানে আলোর মাত্রা অতটা ভালো ছিল না।’
খেলোয়াড়দের নিয়ে পিটার বলেছেন, ‘এই ম্যাচ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। কয়েকজন ফুটবলার ভুল মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। অমনোযোগী ছিল। এমন অমনোযোগী মনোভাব আমি কিছুতেই সহ্য করবো না। কেউ যদি আমার দলে খেলতে চায়, দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়, তাহলে এমন মানসিকতা নিয়ে আসতে পারবে না যা জাতীয় দলের সঙ্গে মানানসই নয়। হার-জিতের চেয়েও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এটি শেখার প্রক্রিয়া এবং সম্মানের বিষয়।’
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ৬ টি পরিবর্তন করেছেন কোচ। ঋতুপর্ণা, তহুরা, শিউলি আজিম, আফঈদা শামসুন্নাহার, কোহাতি কিসকুকে বসিয়ে দিয়েছেন কোচ। তরুণ যারা নেমেছিলেন তাদের খেলার প্রশংসা করেছেন। কোচ নাম উল্লেখ করে বলেছেন, ‘প্রচুর তরুণ খেলোয়াড়কে সুযোগ দিয়েছি। যেমন শিখা, নবিরণ, জয়নব, সাগরিকা, মুনকি, রিপা ও হালিমা। ম্যাচটি আসলে জাতীয় দলের ম্যাচের মতো লাগেনি। উন্নয়নের একটা ম্যাচের মতো লাগছিল। ভবিষ্যতে এমন ম্যাচ আয়োজনের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। তবে আবারও বলছি, এই ম্যাচ থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। কখনো কখনো হেরে যেওয়া ম্যাচ অনেক কিছু শেখায়।’
কঠিন কথাগুলো শেষদিকে বলেছেন কোচ, ‘এমন খেলোয়াড়দের খেলাতে পেরে আমি খুশি যারা বড় কোনো নাম নয়, কিন্তু সঠিক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামে। তারা কঠোর পরিশ্রম করতে চায়, উন্নতি করতে চায়। কেউ আমার পরীক্ষা নিতে চাইলে নিক। এমনটা আগেও হয়েছে। আবারও হলে আমি নিজের জায়গায় শক্তই থাকব। অসম্মান ও বাজে আচরণ সহ্য করবো না।’
গত বছর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন কোচের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সিনিয়র ফুটবলারদের। এ জন্য ১৮ ফুটবলার বিদ্রোহ করে কোচের অনুশীলন বর্জন করেছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে কোচ বেশিরভাগ খেলোয়াড়কে দলে নিলেও সাবিনা, মাসুরা, কৃষ্ণা, সানজিদা আর সুমাইয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তাদের আর ক্যাম্পেই ডাকেননি।
কিছু জুনিয়র খেলোয়াড়ের প্রশংসা করে কয়েকজনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন পিটার বাটলার। নাম না বললেও এটা সবাই বুঝছেন সিনিয়র কয়েকজনকে ইঙ্গিত করেই হয়তো কথাগুলো বলেছেন। কারণ তিনি পরিস্কার করেই বলেছেন, ‘কেউ আমার পরীক্ষা নিতে চাইলে নিক। এমনটা আগেও হয়েছে। আবারও হলে আমি নিজের জায়গায় শক্তই থাকবো।’
যারা বিদ্রোহ করেছিলেন তাদের মধ্যে ঋতুপর্ণা চাকমা,মনিকা চাকমা, রুপনা চাকমা, তহুরা খাতুন, শামসুন্নহার জুনিয়র, শামসুন্নাহার সিনিয়র, মারিয়া মান্দাসহ ৯ জন থাইল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে ছিলেন।
সিনিয়রদের বসিয়ে নামানো তরুণদের খেলার প্রশংসা করেছেন কোচ। কারা আরচরণ খারাপ করেছেন সেই নামগুলো স্পষ্ট করে না বললেও কোচ বুঝিয়ে দিয়েছেন কাদের ওপর ঝালটা তিনি মেটাচ্ছেন। তাহলে কি বছর ঘুড়তে আবার সিনিয়র ফুটবলারদের সাথে আবার দূরত্ব তৈরি হলো কোচ পিটার বাটলারের?
গত বছর এই অক্টোবর মাসেই বিরোধ শুরু হয়েছিল পিটার বাটলারের সাথে সিনিয়র খেলোয়াড়দের। গত বছর ২০ অক্টোবর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে সিনিয়রদের উপেক্ষা করে একাদশ তৈরি করে হারতে বসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। ১ গোলে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ ইনজুরি সময়ে শামসুন্নাহার জুনিয়রের গোলে সমতায় ফেরে। ২৩ অক্টোবর ভারতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে সিনিয়রদের মতামতের ভিত্তিতে দল তিরি করে ৩-১ জিতে টিকে থাকে বাংলাদেশ। টানা তিন ম্যাচ জিতে সাফের শিরোপা ধরে রেখেছিলেন সাবিনা-কৃষ্ণারা। দেশে ফেরার পরই কোচ-খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। ১৮ ফুটবলার প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বছর কেটে গেলেও হয়তো সেই ঘটনার জের এখনো কাটেনি। এশিয়ান কাপ ও অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের আগে এমন ঘটনা দেশের নারী ফুটবলের জন্য অশনি সঙ্কেত নয় তো?







