আইসিসির এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। বৃহস্পতিবার ( ২৮ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানায় বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইসিসির বার্ষিক পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সৈকতকে আন্তর্জাতিক আম্পায়ার প্যানেল থেকে এলিট প্যানেলে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এলিট প্যানেলে জায়গা পাওয়ায় বেশ উচ্ছ্বসিত সৈকত। পারিবারিক কারণে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন বাংলাদেশের সেরা এই আম্পায়ার। তার আগে আইসিসিকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘ আইসিসি এলিট প্যানেলে নাম লেখানো খুবই সম্মানের। আমার দেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এই প্যানেলে আসতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ। আমার ওপর যে আস্থা রাখা হয়েছে তার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি অনেক বছর ধরেই মোটামুটি অভিজ্ঞতা পেয়েছি এবং আরও চ্যালেঞ্জিং অ্যাসাইনমেন্টের জন্য প্রস্তুত।’
এক বিবৃতিতে এমন অর্জনের জন্য আইসিসি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) ধন্যবাদ জানান- শরফুদ্দৌলা। বলেন, ‘আইসিসি ও বিসিবিকে ধন্যবাদ, আমাকে সমর্থন জোগানোর জন্য। সহায়তা ও নির্দেশনার জন্য আমার অন্য সহকর্মীদেরও ধন্যবাদ। আমার পরিবার ও বন্ধুদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই আমাকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য।’
শরফুদ্দৌলাকে অভিনন্দন জানিয়ে আইসিসি’র প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালারডাইস বলেন, ‘আইসিসি এলিট প্যানেলের আম্পায়ার হওয়ায় শরফুদ্দৌলাকে অভিনন্দন। বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এ প্যানেলে আসার অর্জনের স্বীকৃতি দিতে চাই।
আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার-ক্রিকেট ওয়াসিম খান (চেয়ারম্যান), সাবেক খেলোয়াড় ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, নিউজিল্যান্ডের সাবেক আম্পায়ার টনি হিল এবং কনসালট্যান্ট অফিসিয়েটিং এক্সপার্ট মাইক রিলেকে নিয়ে গঠিত সিলেকশন প্যানেল যাচাই-বাছাইয়ের পর ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল থেকে শরফুদ্দৌলাকে এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন।
এর আগে গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সৈকত। যেখানে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি নিরপেক্ষ একটি সিরিজেও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। গত জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দায়িত্ব পালন করেন আম্পায়ার সৈকত।
২০১০ সালে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক আম্পায়ারিংয়ে অভিষেক হয় শরফুদ্দৌলার। বাংলাদেশি আম্পায়ারিং ইতিহাসে একাধিক কীর্তি গড়া সৈকত এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরুষদের ক্রিকেটে ১০টি টেস্ট ম্যাচ, ৬৩ ওয়ানডে এবং ৪৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারিং করার অভিজ্ঞতা আছে সৈকতের।
অন্যদিকে মেয়েদের ক্রিকেটে ১৩ ওয়ানডে ম্যাচ এবং ২৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন সৈকত। এ ছাড়া পুরুষদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে ১০০টি ম্যাচ পরিচালনা করারও কীর্তি আছে তার।
২০০৭ সালে বরিশাল বিভাগ ও সিলেট বিভাগের মধ্যকার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আম্পায়ার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হয় শরফুদ্দৌলার। আর ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক প্যানেলে ঢুকলেও তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। বাংলাদেশের ১০ম আম্পায়ার হিসেবে মিরপুরে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সৈকতের। এখন পর্যন্ত পুরুষদের ১০টি টেস্ট ম্যাচ, ৬৩টি ওয়ানডে এবং ৪৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে কাজ করেন তিনি। একই সঙ্গে মেয়েদের ১৩টি ওয়ানডে ও ২৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনা করেন সৈকত।
২০১৭ ও ২০২১ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের অংশও ছিলেন সৈকত। এছাড়া ২০১৮ সালের নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০২৩ সালের ভারত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো পুরুষদের বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করেন বাংলাদেশের এই আম্পায়ার। পুরো বিশ্বকাপে মোট ৫টি ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া আরও তিনটি ম্যাচে টেলিভিশন আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সৈকত।
আম্পায়ারিংয়ে আসার আগে পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন সৈকত। ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন তিনি। যেখানে ৩ ম্যাচে ৬ উইকেট নেন। হংকং, কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস, প্রত্যেক ম্যাচেই জোড়া উইকেট শিকার করেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০টি ম্যাচ খেলেন সৈকত। ঢাকা মেট্রোপলিসের হয়ে যেখানে তার শিকার ৩১ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট নেন দুইবার। ৪৫ রান খরচায় ৬ উইকেট সৈকতের সেরা বোলিং ফিগার। ২০০১ সালে পেশাদার খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে শেষ ম্যাচ খেলেন তিনি।
একই দিনে ম্যাচ রেফারিদের এলিট প্যানেলে সাত সদস্য থেকে একজন কমিয়েছে আইসিসি। এক্ষেত্রে বাদ পড়েছেন ইংল্যান্ডের ক্রিস ব্রড। ২০০৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসা ব্রড পরিচালনা করেছেন ১২৩টি টেস্ট, ৩৬১টি ওয়ানডে ও ১৩৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি।
আইসিসি এলিট প্যানেল আম্পায়ার: কুমার ধর্মসেনা (শ্রীলঙ্কা), ক্রিস্টোফার গ্যাফফানি (নিউজিল্যান্ড), মাইকেল গফ (ইংল্যান্ড), অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টক (দক্ষিণ আফ্রিকা), রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ (ইংল্যান্ড), রিচার্ড কেটেলবরো (ইংল্যান্ড), নীতিন মেনন (ভারত), এহসান রাজা (পাকিস্তান), পল রাইফেল (অস্ট্রেলিয়া), শরফুদ্দৌলা ইবনে সৈকত (বাংলাদেশ), রড টাকার (অস্ট্রেলিয়া), জোয়েল উইলসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
আইসিসি এলিট প্যানেল ম্যাচ রেফারি: ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া), জেফ ক্রো (নিউজিল্যান্ড), রঞ্জন মাদুগালে (শ্রীলঙ্কা), অ্যান্ড্রু পাইক্রফট (জিম্বাবুয়ে), রিচি রিচার্ডসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), জাভাগাল শ্রীনাথ (ভারত)।