তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের তোপে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৪ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৮ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ।
১৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ রানে ৭ বলে ১০ রান করে আউট হন রনি তালুকদার। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত।
শান্তকে সঙ্গে নিয়ে শুরুরে ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন লিটন দাস। তবে দলীয় ৩৮ রানে ফের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৪ বলে ১৯ রান করে সাজঘরে ফিরে যান শান্ত।
ক্রিজে এসে কিছুটা আগ্রসী ব্যাটিং করতে থাকেন সৌম্য সরকার। লিটনকে সঙ্গে নিয়ে ২৯ রানের জুটি গড়েন তিনি। তবে দলীয় ৬৭ রানে ১৫ বলে ২২ রান করে আউট হন সৌম্য।
এরপর ক্রিজে আসা তাওহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন লিটন দাস। তবে দলীয় ৯৬ ও ৯৭ রানে জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
হৃদয় ১৮ বলে ১৯ ও আফিফ হোসেন ৬ বলে ১ রান করে আউট হন। তবে একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করতে থাকেন লিটন। শেখ মেহেদীকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন এই টাইগার ওপেনার।
শেষ পর্যন্ত ৮ বল হাতে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। লিটন ৩৬ বলে ৪২ ও শেখ মেহেদী ১৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকে।
এর আগে টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে পাঠান অধিনায়ক শান্ত। তার বোলিংয়ের এ সিদ্ধান্তকে ঠিকভাবে কাজে লাগান মেহেদী ও শরিফুল।
ম্যাচের প্রথম ওভারেই ৩ বল খেলে রানের খাতা খুলতে না পারা সেফার্টকে বোল্ড করেন মেহেদী। ওই ওভারে আসে মাত্র ১ রান। দ্বিতীয় ওভারে চমক দেখান শরিফুল।
শরিফুলের প্রথম বলে রান নিতে ব্যর্থ হন কিউই ব্যাটসম্যান ফিন অ্যালেন। আর দ্বিতীয় বলে সৌম্যের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তাতে ১ রানেই দুই ওপেনারের বিদায় ঘটে। ওভারের তৃতীয় বল সরাসরি আঘাত হানে গ্লেন ফিলিপসের প্যাডে। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে মাঠ ছাড়তে থাকেন ফিলিপস। পরে টিভি আম্পায়ার তাকে এলবিডব্লিউ ঘোষণা করেন। ফিলিপস রানের খাতা না খুলেই সাজঘরে ফেরেন।
১ রানেই ৩ উইকেট পতনের পরে ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করেন ড্যারিল মিচেল ও মার্ক চ্যাপম্যান। তবে তাদেরও বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি মেহেদী। ১৫ বলে ১৪ রান করা মিচেলকে বোল্ড করে এই জুটির ইতি টানেন তিনি। অন্যদিকে তখনও রানের গতি ঠিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন চ্যাপম্যান। তবে ৯.২ ওভারে রিশাদ এনে দেন স্বস্তি। ১৯ বলে ১৯ রান করা চ্যাপম্যানকে তানজিম সাকিবের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠান রিশাদ। তাতে ৫০ রান তুলতেই কিউইরা হারিয়ে বসে ৫ উইকেট।
দলের এমন বিপদের সময়ে একাই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন জেমস নিশাম। একে একে সতীর্থরা বিদায় নিলেও তিনি চার-ছয়ের মার হাঁকিয়ে রানের খাতাকে সচল রাখেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে থামিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২৯ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কার মারে ৪৮ রান করে বিদায় নেন নিশাম। এর আগে দলের রান গিয়ে দাঁড়ায় ১১০ এ।
শেষদিকে বেশ কয়েকটি মিস ফিল্ডের ঘটনা দেখা যায়। এর মধ্যে দুটি ক্যাচও মিস করে বাংলাদেশ। অন্যদিকে অ্যাডাম মিলনের ১২ বলে ১৬ রানের ইনিংস নিউজিল্যান্ডকে আরও একটু সমৃদ্ধ করে। সবমিলিয়ে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ১৩৪ রান।
১৩৫ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অ্যাডাম মিলনের বলে পুল করতে গিয়ে বল তুলে দেন রনি তালুকদার। টাইমিং করতে না পারায় ক্যাচ চলে যায় সাউদির হাতে। আর তাতেই দলীয় ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রনি করেন ৭ বলে ১০ রান।
এরপরে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও ভালো করার আভাস দিয়ে আউট হন। বাংলাদেশের অধিনায়ক ফেরেন ১৪ বলে ১৯ রান করে। এরপরে লিটনের সঙ্গে জুটি গড়তে আসেন সৌম্য সরকার। দলীয় ৬৭ রানে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য।
লিটনের সঙ্গে ২২ বলে ২৯ রানের জুটিটা বড় করতে ব্যর্থ হন সৌম্য। ৮.৪ ওভারে বেন সিয়ার্সের বলে লাইন মিস করেন তিনি। তাতে সরাসরি বল গিয়ে উইকেটে আঘাত করে। ১৫ বলে ২২ রান করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। ২০২২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন সৌম্য। সেই ম্যাচে তিনি করেছিলেন ১৭ বলে ২০ রান। এবারও তেমনই এক ইনিংস খেলে ফেরেন বাংলাদেশি এই ব্যাটসম্যান।
সৌম্যের পরে আশা দেখিয়ে ফেরেন তাওহীদ হৃদয়। তিনি করেন ১৮ বলে ১৯ রান। আর আফিফের বাজে আউট দলকে ফেলে দেয় বিপদে। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আফিফ ১ রান করে আউট হন। তবে শেষদিকে মেহেদী হাসানকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন ওপেনার লিটন দাস। ৩৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কার সাহায্যে ৪২ রান করে লিটন অপরাজিত ছিলেন। আর মেহেদী অপরাজিত ছিলেন ১৬ বলে ১৯ রান করে।