আলোচিত সমালোচিত সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলের সঙ্গে নাম জড়িয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করা ফারজান আরশি তার গ্রামের বাড়ি খুলনায় ফিরে গেছেন। এদিকে দিন দিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় নোবেলকে পুনর্বাসনকেন্দ্রে (রিহ্যাব) ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এই গায়কের পারিবারিক সূত্র।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) নোবেলকে ঢাকার নিকটবর্তী একটি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। মাদকে আসক্ত, নানা বিতর্কিত ঘটনার জেরেই নোবেলকে রিহ্যাবে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি খুলনার একজন তরুণীকে বিয়ের দাবি জানান নোবেল। এরপর ওই তরুণী জানান, নোবেলকে বিয়ে করেননি তিনি। বরং তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কাণ্ড ঘটিয়েছেন এই গায়ক।
যদিও ওই তরুণীর স্বামীর দাবি, নিজের স্ত্রীকে নোবেলের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে দেখেন দু’জন একসঙ্গে মাদক সেবন করছেন। এমনকি তার কাছে ফিরে আসতেও আপত্তি জানান স্ত্রী ফারজান আরশি।
এ ঘটনার পর ওই তরুণী এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, নোবেলের সাথে আমার বিয়ে হয়নি বা কোনো সম্পর্কও নেই। নোবেলের স্ত্রী সালসাবিল আপু এবং সে নিজেই বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দিয়েছেন। যা আপনার বিভিন্ন নিউজে দেখতে পেয়েছেন। আমি যদি নিজের ইচ্ছায় নোবেলের কাছে চলে আসতাম তাহলে স্বামীর সঙ্গে থাকা সব ছবি-ভিডিও ডিলিট করে দিয়েই যেতাম।’
ফারজান আরশি আরও লেখেন, ‘আমি বাসা থেকে এক কাপড়ে বের হয়েছিলাম, যে নোবেলের সঙ্গে দেখা করে চলে আসব। আমার সাথে এক বান্ধবীও ছিল। অনেক ব্যাপার আছে যেটা আপনারা জানেন না। তাই দয়া করে কোনো উল্টাপাল্টা সংবাদ করবেন না।’
বর্তমানে নিজ বাসায় আছেন জানিয়ে আরশি বলেন, ‘আমি নিজের বাড়ি খুলনাতেই আছি। একটু সুস্থ হয়ে আজকেই লাইভে এসে সব বিষয় পরিষ্কার করব। নোবেলের সাথে আমার বিয়ে হয়নি। আমি এখনও নাদিম আহমেদের স্ত্রী। দয়কারে আমাকে সবাই একটু সময় দিন।’
সবশেষ ফারজানা আরশি লেখেন, ‘যারা আমাকে চেনেন তারা অন্তত বুঝবেন। দুইদিন আগে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ছবি তুলে পোস্ট করলাম, দুইদিনে এমন কী হলো সেটাই আমাকে বলতে দিবেন। যদি যাওয়ার ইচ্ছাই থাকতো তাহলে সবকিছু ডিলিট করে দিয়ে যেতাম।’
প্রসঙ্গত, ভারতের জি বাংলার সারেগামাপা মঞ্চ কাঁপিয়েছিলেন বাংলাদেশের ছেলে মাইনুল আহসান নোবেল। মনে হয়েছিল এই গায়কের হাত ধরেই দুই বাংলার সম্পর্ক আরো মজবুত হবে। কিন্তু হয়েছিল ঠিক তার উল্টো। সারেগামাপা মঞ্চ জিতে নেওয়ার পর দেশে ফিরে একের পর এক বিতর্কে জড়াতে শুরু করেন সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেল।
কখনো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি অশালীন মন্তব্য করে আবার কখনো নরেন্দ্র মোদিকে ছোট করে তুমুল সমালোচিত হন নোবেল। এই গায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে আগাম টাকা নিয়ে অনুষ্ঠানে না যাওয়ার, এমন কি ধর্ষণেরও। সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। তার এই অশালীন আচরণের সমালোচনা করেছিলেন প্রাক্তন স্ত্রীও।
একবার একটি কলেজের অনুষ্ঠানে নেশার ঘোরে স্টেজে উঠে গান গাইতে না পারায় দর্শকরা জুতোপেটাও করেছিলেন তাকে। রয়েছে অনুষ্ঠানে না গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার দায়ও। প্রতিমাসে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার মাদক সেবন করেন সংগীত শিল্পী নোবেল, এমনটাই অভিযোগ করেছিলেন নোবেলের প্রাক্তন স্ত্রী সালসাবিলের।
মদ্যপানের প্রতি তার এতটাই আসক্তি, কখনো মদ্যপান করে অসংলগ্ন কথা বলে বিতর্ক তৈরি করে ফেলেন কখনো আবার গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। বারবার থাকতে হয় পুলিশি হেফাজতে। একবার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে অশালীন মন্তব্য পোস্ট করতে দেখে যখন উত্তাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া তখন নোবেল বলেছিলেন তার পেজ হ্যাক হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার পর্দায় নিজেকে বারবার পাল্টে ফেলার দাবিও জানিয়েছিলেন গায়ক, কিন্তু তা হয়নি।এবার চতুর্থ বিয়ে করে সকলকে চমকে দিলেন তিনি।
নোবেলের প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল রিমি। কিছু বছর পরেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর এক আত্মীয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন নোবেল। কিন্তু সেই বিয়েও বেশিদিন টেকেনি। অবশেষে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর সালসাবিলকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু কিছু মাসের মধ্যেই দুজনের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়। সিগারেট, মদ, গাঁজা সব কিছুরই নেশায় নিজেকে মত্ত করে ফেলেন নোবেল। নোবেলকে নেশার জগত থেকে ফিরিয়ে আনার বহু চেষ্টা করেন স্ত্রী, কিন্তু উল্টে কপালে জোটে শারীরিক নির্যাতন।
তৃতীয় বিবাহ বিচ্ছেদের পর ৬ মাস অতিক্রম হতে না হতেই ফের বিয়ে করার খবর রটে নোবেলের। এবার পাত্রী ফারজান আরশি। তিনি পেশায় একজন ফুড ব্লগার। তিনি খুলনার বাসিন্দা। আরশির এটি দ্বিতীয় বিয়ে।
এর আগে নাদিম আহমেদ নামে এক ফুড ব্লগারকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। যদিও সেই ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন স্ত্রীর সঙ্গে একটি অন্তরঙ্গ ছবি পোস্ট করে বিয়ের কথা জানান নোবেল। জানা গেছে, গায়কের স্ত্রীর নাম ফারজানা আরশি। খুলনার বাসিন্দা আরশির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া মারফতই পরিচয় হয় নোবেলের। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দুজনে বেশ কিছুদিন ডেট করেছেন পরস্পরকে। যদিও এখন নোবেলের সাথে তার বিয়ে হয়নি বা কোনো সম্পর্কও নেই বলে দাবি করছেন ফারজানা আরশি।