মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২ কার্তিক, ১৪৩২, ৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

মুক্তি৭১ ডেস্ক

রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরো বহুগুণ বাড়াতে বৈশ্বিক সম্প্রদায় বিশেষ করে আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে উদ্ভূত এই (রোহিঙ্গা) সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরো বহুগুণ বাড়াতে হবে, সব বিকল্পের মধ্যে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনই সবচেয়ে কার্যকর।’

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘তারা কি আমাদের ভুলে গেছে?’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক ইভেন্ট আয়োজন করে। ইভেন্টটি সঞ্চালনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

শেখ হাসিনা তার প্রথম ও দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, ‘আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন বিষয়টি সমাধান করে এবং এই দুর্দশাগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের জীবনধারণের জন্য আমাদের মানবিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এই বিষয়টিকে তাদের এজেন্ডার শীর্ষে রাখে।’

তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘এই জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত, নিয়মে পরিনত করা এবং ঘৃণ্য নৃশংসতাকারী অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য চলমান এবং প্রচলিত আইনি এবং বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ছয় বছর ধরে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের মর্মান্তিক বিতাড়নের ঘটনা দেখে আসা বিশ্বকে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের স্থায়ী দুর্ভোগের কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে তাঁরা আজ এখানে সমবেত হয়েছেন।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি নির্মম হত্যাকান্ডের কারণে কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

এরপর থেকে আমরা আমাদের মাটিতে তাদের আশ্রয় এবং তাদের মৌলিক ও মানবিক সেবা দিয়ে আসছি। আমি আমাদের সকল অংশীজন এবং বন্ধুদের তাদের সংহতির পাশাপাশি মানবিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

ইস্যুটি এখন স্থবিরতার পর্যায়ে পৌঁছেছে উল্লেখ তিনি বলেন, গত ছয় বছরে একজন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেনি।

বাংলাদেশে তাদের দীর্ঘ উপস্থিতি কেবল তাদের আরও হতাশার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন এটি কক্সবাজারের পরিস্থিতিকেও অনিশ্চিত করে তুলছে। ‘আশ্রয়দাতা সম্প্রদায় আজ তাদের উদারতার শিকারে পরিণত হয়েছে,’ বলেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের চাহিদার প্রতি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি মানবিক সহায়তা পরিকল্পনায় ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের অভাব স্পষ্ট।

তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য অনেক কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা যে, রেকর্ড পরিমান উচ্চতায় পৌঁছেছে সে বিষয়ে তারা অবগত আছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব রোহিঙ্গাদের ভুলে যেতে পারে না কেননা ২০১৭ সালে তাদের দেশত্যাগ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না এবং তারা কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে নিপীড়ন ও বিতারণের শিকার হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিকারে এগিয়ে আসতে সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। তাদের ভরণপোষণের জন্য মানবিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটিই সব কিছু নয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা মিয়ানমারে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিশ্চিত জীবন যাপন করতে পারবে। এবং এর জন্য আমাদের সমস্যাটির মূলে গিয়ে সমাধান করতে হবে, যা মিয়ানমারেই রয়েছে।’

তাদের নিজ দেশে সুরক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দরকার যাতে বাড়িঘর থেকে তাদের পালাতে না হয়। তিনি বলেন, এখানে উপস্থিত অনেক দেশ আছে যারা কয়েক দশক ধরে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। তার বিশ্বাস মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরব বাংলাদেশের সাথে একমত হবে।

এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য আশ্রয় দেওয়া কখনোই বাংলাদেশের জন্য একটি বিকল্প ছিল না উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ যেখানে জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব রয়েছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি ইতিমধ্যেই জলবায়ু-প্ররোচিত অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার দ্বারা অতিরিক্ত চাপে পড়েছে।

তিনি বলেন, এর পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ উপস্থিতি আমাদের জনগণের জন্য গুরুতর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তাজনিত প্রভাব ফেলেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির হিসেবে পরিচিত এই আশ্রয় শিবিরের কারণে ৬ হাজার ৮০০ একর সংরক্ষিত বন ধ্বংসের ফলে কক্সবাজারের জীব বৈচিত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে আমরা মিয়ানমারের সাথে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছি তার দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে তাদের মনোযোগ দিতে হবে।

“আমরা মায়ানমারের সাথে ছোট ব্যাচে যাচাইকৃত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য কাজ করছি। প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ এবং স্বেচ্ছামূলক হয় তা নিশ্চিত করার জন্য, রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের মধ্যে একাধিকবার আলোচনার করা হয়েছে,” তিনি বলেন।

তার মতে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রথম ব্যাচের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পথ দেখাতে এবং প্রক্রিয়ার ফাঁক-ফোকরগুলো পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

“পাইলট প্রত্যাবাসন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষতে আশা বাঁচিয়ে রাখবে। আমি আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকারীদের রাখাইনে পুনরায় একত্রিত হতে সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে,” তিনি বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাখাইনে মানবিক ও উন্নয়ন সংস্থার উপস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ আস্থা তৈরির ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, “আঞ্চলিক দেশগুলো, বিশেষ করে আসিয়ান সদস্যরা, মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে, নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে পারে। এএইচএ কেন্দ্রের ব্যাপক প্রয়োজন মূল্যায়নের ভিত্তিতে, প্রত্যাবর্তনকারী রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করে ছোট সম্প্রদায় ভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবেলায় অব্যহত আন্তর্জাতিক মনোযোগ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ার ওপর দৃষ্টি বজায় রাখা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং যতক্ষণ না নৃশংসতার জন্য দায়ী অপরাধীদের জবাবদিহি করা না হয়, ততক্ষণ আরও নিপীড়নের ঝুঁকি থেকেই যাবে।

এছাড়া, তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নির্যাতিতরা এবং জীবিতরা সত্যিকার অর্থে তাদের অতীত আর ফিরে পাবে না এবং বিচার না পেলে তারা গঠনমূলকভাবে মিয়ানমারে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও ফিরে যেতে পারবে না।

শেখ হাসিনা বলেন,‘আমার দেশ জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং আমরা আইসিজে, আইআইএমএম এবং আইসিসি-র সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। আমি অন্য সকল সদস্য রাষ্ট্রকে এই বিষয়ে কাজ

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

নিরাপত্তাঝুঁকি মেট্রোরেল

ঢাকায় দেশের প্রথম ও ব্যয়বহুল মেট্রোরেল প্রকল্পে নিরাপত্তাঝুঁকি দেখা দিয়েছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারী নিহত হওয়ার পর ব্যাপক

বিস্তারিত »

সাভারে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

ঢাকার সাভারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। গত রোববার রাত ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত বিরুলিয়া

বিস্তারিত »

পরীক্ষা করাতে পাঠাতেন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অনিয়ম ও চিকিৎসা সেবায় হয়রানির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট রোববার

বিস্তারিত »

ব্যয়বহুল মেট্রোরেলে নিরাপত্তাঝুঁকি

গত রোববার (২৬ অক্টোবর) মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যয়বহুল এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, ছবি: জাগো নিউজ ঢাকায় দেশের প্রথম

বিস্তারিত »

মাজার-দরবারে যে হামলা হয়েছে তা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে

মাজার-দরবারে যে হামলা হয়েছে তা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ

বিস্তারিত »

বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে বিশ্বে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে

একতরফা সিদ্ধান্ত ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে বিশ্বে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘের ৮০তম

বিস্তারিত »

সৌদি ওমরাহতে যাওয়ার আগে রিটার্ন টিকিট বাধ্যতামূলক করলো

এখন থেকে সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গেলে রিটার্ন টিকিট কাটতে হবে ও যাত্রার সময় চেক-ইন কাউন্টারে ফিরতি টিকিট দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যথায় যাত্রীকে বোর্ডিং

বিস্তারিত »

বাজারে কিছুটা স্বস্তি এনেছে শীতের সবজি, কমছে ডিমের দামও

পুরোদমে শীতের আবহ এখনো তৈরি না হলেও এরইমধ্যে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে শীতকালীন শাক-সবজির। যে কারণে গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দামে স্বস্তি ফিরেছে। গত সপ্তাহের তুলনায়

বিস্তারিত »

চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানার এলাকা থেকে শামীম মাসুদ (২৬) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত  রোববার (১৯ অক্টোবর) থানার বে-টার্মিনাল এলাকা থেকে

বিস্তারিত »