দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা কমে গেছে বলে মনে করছেন অনেক কূটনীতিক। বাংলাদেশ, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তঃসম্পর্কীয় বোঝাপড়া ও আঞ্চলিক স্বার্থের বাস্তবতা এতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তারা। অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ কোনো দেশ বা সংগঠনের নাক গলানোর সুযোগ নেই। সংবিধান নির্দেশিত পথেই হবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেখলেই মনে হয় যেন আমেরিকা একটি ফুঁ দিলেই বাংলাদেশ উড়ে যাবে। এত সহজ না, বাংলাদেশ এত সহজ না। আমাদের ১৭ কোটি মানুষ। আবার আমরা ন্যাশনালিস্ট। আমেরিকার সব সিদ্ধান্ত ভুল হয়।
এবারের বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে এবার যত তৎপর দেখা গেছে, আগে কখনো তা চোখে পড়েনি। এরই মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর, তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব পক্ষই।
এদিকে, টানা ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির কর্মসূচিও হঠাৎ বেড়ে গেছে। নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আসতে থাকেন দেশে। পাশাপাশি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ বিষয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে থাকে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও একের পর এক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ভিসানীতির ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। বাংলাদেশে কেমন ভোট হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে দেশের মানুষই। আগস্টের শেষদিকে এসে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগের খবর প্রকাশের পর, যেন স্তিমিত হয়ে গেছে মার্কিন তৎপরতা।
এ নিয়ে কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান বলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে যেন আমেরিকার সব কথা বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের খুব একটিভ ইয়াং অ্যাম্বেসেডার ঢাকায় আছেন, ভালো মানুষ। তিনিও কিন্তু আর কোন কথা বলছেন না। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তিনি কোন কথা বলছেন না। এমন কি এক পর্যায়ে তিনিতো নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি করবেন সে বিষয়েও কথা বলতে শুরু করেছিলেন। এটাও বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থটা কি?
সরকারি দলের নেতারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বোঝে যে ভালোভাবেই সরকার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর এ অঞ্চলে বাইরের দেশের প্রভাব বিস্তারের যে লড়াই তা তাদের স্বর্থেই, বাংলাদেশের জন্য নয়।
নেতারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ও বিদ্যমান আইনেই সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ভারত বলি, যুক্তরাষ্ট্র বলি, চীন বলি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কারও কোন নাক গলানোর অবকাশ নেই। কারণ সেসব দেশের নির্বাচন নিয়ে আমরা নাক গলাতে যাই না। বাংলাদেশের নির্বাচন দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ি হবে
তবে যেসব ব্যক্তি বা দল নির্বাচন চায় না, দেশের মানুষ তাদের ভালোভাবেই চেনে মন্তব্য করে নেতারা বলছেন, যথাসময়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই হবে ভোট।