বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসকে আমরা যেভাবে মোকাবেলা করেছি ঠিক একইভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে ডেঙ্গুও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট)সকালে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজনের নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দফতরে মতবিনিময়ের সময় নেতৃবৃন্দ এমন প্রত্যাশা করেন।
এসময় খোরশেদ আলম সুজন বলেন, দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রামেও প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য হারে ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বিধায় এ থেকে পরিত্রাণে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।
তাই জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বোপরি সকলের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
সুজন আরো বলেন, উল্লেখযোগ্য হারে ডেঙ্গুরোগী বেড়ে যাওয়ায় সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিকভাবে রোগীর চাপ বেড়েছে। ফলত অনেক রোগী বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।
‘দেখা যাচ্ছে যে প্রাইভেট ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন টেস্টের নামেও রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ১৪ দল সরকারি সংস্থাসমূহ এবং জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করছে বিধায় এ থেকে পরিত্রাণে বেসরকারি হাসপাতালের লাগাম টেনে ধরতে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য)’র প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সরকারের অংশ। তিনি সরকারগৃহীত পদক্ষেপসমূহ ১৪ দল নেতৃবৃন্দের নিকট উপস্থাপন করে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলার পাশাপাশি উপজেলায় অবস্থিত হাসপাতালগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে শহরে রোগীর চাপ না বাড়ে। সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দিচ্ছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিষয়ে কিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় টেস্টের নামে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। এসব বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সাথে বৈঠক করার কথা জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু পরিস্থিতি একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই এসব বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন সভা সমাবেশে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখার অনুরোধ জানান তিনি। বিশেষ করে বাসা-বাড়ির ছাদে, ফ্রিজের পিছনে ও এসির জমানো পানি ঘনঘন পরিষ্কার করা এবং নিজ নিজ আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
১৪ দলের এ সমন্বয়ক এসময় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ এর সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় অতিপ্রয়োজনীয় তরল স্যালাইন, প্যারাসিটামল এবং সাপোজিটরের সংকটেরও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই ওষুধের দোকান থেকে অনেকটা চড়া দামে রোগীদের এসব প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান তিনি।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাথে সাথে ওষুধের বাজার মনিটরিং করার নির্দেশনা প্রদান করেন এবং যেকোন মূল্যে এসব প্রয়োজনীয় ওষুধ রোগীদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার নির্দেশ দেন। এরপর ১৪ দল নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সাথে মতবিনিময়ে মিলিত হন।
নেতৃবৃন্দ এসময় জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করে ডেঙ্গু ওয়ার্ডসহ বিভিন্নওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। নেতৃবৃন্দ ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গিয়ে ভর্তিকৃত রোগীদের সাথে স্বাক্ষাৎ করেন।১৪ দল নেতৃবৃন্দ হাসপাতালের চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং কিভাবে চিকিৎসা-সেবার মান আরো বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জসিমুদ্দিন বাবুল, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, উপ-পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. ইফতেখার আহমেদ, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ুয়া, ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিটুল দাশগুপ্ত, গণআজাদীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মাওলানা নজরুল ইসলাম আশরাফী, ন্যাপ মহানগর কমিটির সভাপতি বাপন দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল্লাহ মজুমদার, সাম্যবাদী দলের আহবায়ক অমূল্য বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি (জেপি) চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডা. বেলাল মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন হাওলাদার, বিভাগীয় টিবিএক্সপার্ট ডা. বিপ্লব পালিত, জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হোসাইন, পি.এ টু বিভাগীয় পরিচালক(স্বাস্থ্য)মুহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।