অবশেষে ইন্টার মিয়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন লিওনেল মেসি। বুধবার (৭ জুন) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টার দিকে প্যারিসে তার বাসায় দুটি স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি ইন্টার মিয়ামিতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। খবর: গোল ডটকম।
মেসির আমেরিকান মেজর সকার (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মিয়ামিতে যাওয়ার এ ঘোষণার মধ্যদিয়ে অবসান হলো সপ্তাহব্যাপী চলা সব আলোচনা, জল্পনা-কল্পনার।
এর আগে পিএসজি ছেড়ে সৌদি ক্লাব আল হিলালের সঙ্গে চুক্তি পাকা করে ফেলেছেন- এমন খবরও এসেছিল। এএফপি, ইএসপিএন, রয়টার্সের মতো মিডিয়াগুলোও এ খবর প্রকাশ করেছিল। এরপর জানা গেলো, ‘না, মেসি আল হিলালের সঙ্গে চুক্তি করেননি।’ তার বাবা হোর্হে মেসি দুদিন আগেও বলেছিলেন, ‘মেসি ফিরতে চান বার্সেলোনায়।’
কিন্তু সৌদি ক্লাব আল হিলাল কিংবা বার্সেলোনা- কোনোটাই নয়, মেসি যোগ দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএস লিগের ক্লাব ইন্টার মিয়ামিতে। হঠাৎ করেই সব চিত্র পাল্টে গেলো। যে দুটি ক্লাব মেসির গন্তব্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল, সে দুটি ক্লাব নয়, মেসিকে দখল করে নিলো আলোচনার বাইরে থাকা ইন্টার মিয়ামি।
কেন, কীভাবে ইন্টার মিয়ামিতে গেলেন মেসি? এ নিয়ে এরই মধ্যে নিজেই কথা বলেছেন এই আর্জেন্টাইন তারকা। দিয়ারিও স্পোর্ট এবং মুন্ডো দেপোর্তিভোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মিয়ামিতে যোগ দেওয়া এবং বার্সা ও আল হিলালে না যাওয়ার বিষয়ে অনেক কথাই বলেছেন।
মেসি বলেছেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে, ইন্টার মিয়ামিতেই যোগ দেবো। ইউরোপ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ফাইনাল করে ফেলেছি।’
পিএসজি ছাড়বেন, এটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আরও কিছুদিন আগেই। যে কারণে মেসিকে পেতে চেয়েছে অনেক ক্লাবই। ইউরোপের কোনো কোনো ক্লাবও মেসিকে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তিনি যেতে চেয়েছিলেন শুধু বার্সাতেই।
মেসি বলেন, ‘এটা সত্যি যে, আমার কাছে ইউরোপের অন্য ক্লাব থেকেও প্রস্তাব আছে; কিন্তু আমি যে ইউরোপীয় দলটিতে যেতে চেয়েছিলাম, তা হল এফসি বার্সেলোনা।’
‘বিশ্বকাপ জয়ের পর এবং বার্সায় ফিরতে না পারার কারণে আমার এখন এমএলএস লিগেই যাওয়াটা উচিত বলে মনে করি। কারণ, আমার ফুটবলকে ভিন্ন পথে, ভিন্নভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং নিজের প্রতিদিনের জীবনকে উপভোগ করতে হবে।’
ইন্টার মিয়ামিতে জয়ের ক্ষুদা থাকবে কি না? মেসি বলেন, ‘অবশ্যই, আমার মধ্যে একই ধরনের জয়ের মানসিকতা থাকবে, একই ধরনের খেলার মানসিকতা থাকবে। একই দায়িত্ব অনুভব করবো। আশা করি আরো ভালো করবো, তবে অনেক শান্তভাবে।’
বার্সেলোনাতেই ফিরতে খুব আগ্রহী ছিলেন মেসি। বার্সাও তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। যে কারণে ফাইনান্সিয়াল ভায়াবলিটি প্ল্যান লা লিগা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে পাস করিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু এরপরও কিছু জটিলতা তৈরি হওয়ায় এবং বার্সেলোনার পক্ষ থেকে কোনো গ্যারান্টি না পাওয়ায় মিয়ামিকেই বেছে নেন মেসি।
পুরোনো অভিজ্ঞতা যাতে না হয় সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই বার্সায় ফিরতে চেয়েছিলাম, আমার সে স্বপ্ন ছিল; কিন্তু দুই বছর আগে আমার বার্সা ছাড়ার সময় যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, এরপর আমি আমার ভবিষ্যৎ অন্য কারও হাতে রেখে আবার একই পরিস্থিতিতে পড়তে চাইনি। আমি আমার এবং আমার পরিবারের কথা ভেবে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম।’
মেসির জন্য কিছু খেলোয়াড় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বার্সা। মেসি এটা মেনে নিতে চাননি। তিনি বলেন, ‘যদিও আমি শুনেছি, বলা হয়েছিল যে লা লিগা সবকিছু মেনে নিয়েছে এবং আমার ফিরে আসার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, তবুও আরও অনেক কিছু করতে হবে। আমি শুনেছি, আমার জন্য বার্সা তাদের কিছু খেলোয়াড়কে বিক্রি করতে হবে বা বেতন কমাতে হতে পারে। সত্যটা হলো, আমার জন্য এমন কিছু হোক তা আমি চাইনি।’
তবে বার্সার যে কোনো বিপদে তিনি পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমি বার্সাকে মিস করি। ভবিষ্যতে কখনো কোনো না কোনোভাবে অবদান রাখবো বার্সায় ফিরে গিয়ে! একদিন আমিও আলবা বা বুসির মতো বিদায়ী সম্মাননা পেতে চাই বার্সার কাছ থেকে।’
পরিবারকেই বেশি সময় দিতে চান মেসি। তিনি বলেন, ‘আমি এমন একটি মুহূর্তে আছি যেখানে আমি একটু ফোকাস থেকে বেরিয়ে আসতে চাই এবং আমার পরিবার সম্পর্কে আরও ভাবতে চাই। আমি দুই বছর কাটিয়েছি যেখানে (পিএসজি), সেখানে আমি পারিবারিক পর্যায়ে এতটাই খারাপ ছিলাম যে আমি এটি উপভোগ করিনি। আমি আমার পরিবার, আমার সন্তান এবং প্রতিদিনের আনন্দের সাথে আবার দেখা করতে চাই। সে কারণেই বার্সেলোনা ছেয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল কিছুটা।’
টাকার বিষয়টাকেও খুব বেশি আমলে নেননি মেসি। নিলে সৌদি আরবে যেতে পারতেন। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি টাকার ব্যাপার হতো তাহলে আমি আরবে বা অন্য কোথাও যেতে পারতাম। এটি আমার কাছে অনেক অর্থের মতো মনে হয়েছিল এবং সত্য হলো যে আমার সিদ্ধান্ত অন্য কোথাও যায় এবং অর্থের কারণে নয়।’
নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চান মেসি। যে কারণে বার্সায় ফিরতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমি আমার নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম এবং সে কারণেই আমি বার্সায় ফিরতে পারিনি। যদিও আমি এটা পছন্দ করতাম, এটা হতে পারে না।’
বার্সা প্রেসিডেন্টের চেয়ে কোচ জাভির সঙ্গেই বেশি যোগাযোগ ছিল মেসির। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে, আমি প্রেসিডেন্ট লাপোর্তার সাথে খুব কম কথা বলেছি, সর্বাধিক একবার বা দুবার। জাভির সাথে আমার অনেক যোগাযোগ আছে। জাভির সাথে, আমার ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমরা খুব উত্তেজিত ছিলাম। আমরা যোগাযোগ বজায় রেখেছিলাম।’
‘অনেক কিছু বলা হয়েছে, অনেক কিছু ফাঁস হয়েছে, অনেক মিথ্যা বলা হয়েছে; কিন্তু আমি এটার বাইরে গিয়ে যা বলা হচ্ছে তা অস্বীকার করতে পারি না।’