চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের উদ্যোগে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস–২০২৩ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় রবিবার (২৬.০৩.২০২৩ ইং) জেলা পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ৭৫ এর পরে ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নাম আর আজকে কেউ মুছতে পারবে না যেখানে মিথ্যা ঘোষক বানানোর চেষ্টা হয়েছিল আজ আন্তর্জাতিকাতিক ভাবেও, আপনারা দেখেন সেই ঘোষকের আর কোনো ঠিকানা থাকছে না। ১৫ আগষ্ট ট্র্যাজেডি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাস থেকে তার নামটা মুছে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা হয়েছে। ঘোষক দাঁড় করানো হয়েছিল। স্বাধীনতার নায়ক দাঁড় করানো হলো। ইতিহাস পাল্টে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হলো, তাঁর (বঙ্গবন্ধু) নামটাও নেওয়া যাবে না। মুক্তিযোদ্ধারা ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছি’ বলার সাহসও পায়নি। তারা সেই সাহস হারিয়ে ফেলেছে। কারণ তখন এটা বললেই নির্যাতন করা হতো। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদারদের চাটুকারিতা করেছে, তারাই সবকিছু বলতে পারত। কারণ, আজকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ নিজেরাই প্রচার করছেন যে, ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্ম না হতো তাহলে আমরা বাঙালিরা জাতি হিসেবে কখনো বিশ্বে মর্যাদা পেতাম না। সম্মান পেতাম না, একটা রাষ্ট্রও পেতাম না। তিনি যে সংগ্রাম চালিয়েছেন তাতে অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে ধীরে ধীরে এদেশে মানুষকে ঐকবদ্ধ করে তাদের স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি আরও বলেন, সত্যকে সত্য বলা নিষিদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধু গ্রাম-গঞ্জ, তৃণমূলে বাঙালিদের একত্রিত করে বাঙালি জাতিসত্তাকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাইকে বাঙালি হিসাবে একই পরিচয়ে পরিচিত করেছিলেন। বর্তমানে স্বাধীনতাবিরোধী এবং তাদের উত্তরসূরিরা দেশে ও দেশের বাইরে ভয়ংকর য়ড়যন্ত্র¿ করছে। তারা অনলাইনে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। তাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে। অস্তিত্বের উৎস ধরে রাখতে হলে বজ্রকণ্ঠ শাণিত করতে হবে। শুধু মুখে মুখে নয়, আত্মায় বিশ্বাসে ও চেতনায় বাঙালিত্ব ধারণ করতে হবে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, যে ভাষণের মধ্য দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনকে সশস্ত্র বিপ্লবে রূপ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, সেই ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। পাকিস্তানিরা এদেশের মানুষের আত্মগরিমা ধ্বংস করে দরিদ্র্য করে দিয়ে গেছে। জাতির পিতা এসে এদেশের মানুষকে আত্মমর্যাদাশীল করতে, স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী করতে চেয়েছেন। আমরাও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। তিনি যা করেছেন, সেগুলোই করে যাচ্ছি। ১৯৭১ এ যে সকল বৃহৎ পরাশক্তি স্বাধীনতাকে মেনে না নিয়ে ১৯৭৩-৭৪ দূর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। ৭১৯১ এ জাতিসংঘে কোন গণহত্যা হয়নি বলেছিল। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল। ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট সৃষ্টিতে যাদের হাত ছিল ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ যাদের আশকারা ছিল। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর গণহত্যা যাদের হাত রয়েছে তারাই নতুন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে সকল বাঙ্গালিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত একটা কালো অধ্যায় ছিল, ২০০১ থেকে ২০০৬ আরেকটি কালো অধ্যায়। আমরা সেখান থেকে উত্তরণ করেছি। জাতির পিতার দেখানো পথে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো: দিদারুল আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সদস্য আবুল কাশেম চিশতী, বোরহান উদ্দিন মোঃ এমরান, মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল আলীম, রওশন আরা বেগমসহ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের কর্মকর্তা–কর্মচারীবৃন্দ।