দলগুলো নিয়মিত বাজার তদারকি করবে।নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অবাধ সরবরাহ ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সস্প্রতি মতবিনিময় সভা করেছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। সেই সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৯ অনিয়মের শাস্তি
দৈনিক ক্রয়-বিক্রয়ের মূল্য ও পরিমাপের তথ্য প্রদান: আমদানিকারক/ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে প্রতিদিন কত টন/লিটার পণ্য সরবরাহ বা বিক্রয় করা হয় তার প্রতিদিনের তালিকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর কাছে প্রেরণ করতে হবে।
সঠিক রশিদ ব্যবহার করা: সকল ব্যবসায়ীকে তাদের আমদানি/ক্রয়কৃত পণ্যের সঠিক রশিদ সংরক্ষণ করতে হবে। ক্রয়কৃত পণ্যের রশিদ চাওয়া মাত্র প্রদান করতে হবে। তদারকি দল চাওয়া মাত্র সঠিক রশিদ দেখাতে বাধ্য থাকবে।
মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন: বাজার ও মার্কেটের দোকানে নির্ধারিত পণ্যসামগ্রীর মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। ভর্তুকি/পাইকারি মূল্যে বিক্রির ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙাতে হবে।
ওজনে কম দেওয়া যাবে না: বাজারে ভোগ্যপণ্য মাপার বাটখারা/মাপার যন্ত্র বিএসটিআই অনুমোদিত হতে হবে এবং ওজনে কম প্রদানের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভেজাল খাদ্য বিক্রি করা যাবে না: অপরিচ্ছন্ন জায়গায় প্রস্তুতকৃত ইফতার সামগ্রী এবং ভেজাল খাবার বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রেস্টুরেন্টের সামনে খোলা বাজারে বিক্রিত ইফতার সামগ্রী স্বাস্থ্য ও মানসম্মত হতে হবে।
টিসিবির ডিলাররাই বিক্রি করবেন পণ্য: চট্টগ্রাম জেলায় জনসংখ্যা অনুপাতে সিটি করপোরেশন সহ উপজেলাসমূহে মোট টিসিবি’র উপকারভোগী ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮২ জন। তাঁদের মধ্যে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি’র নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হবে। টিসিবি’র পণ্য চট্টগ্রাম চেম্বার/মেট্রোপলিটন চেম্বার এবং কাউন্সিলর ট্রাকসেলে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক সমন্বয় করবেন।
কাপড়ের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে: মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ তাদের মার্কেট তদারকি করবেন। ব্যবসায়ীরা ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬ ও অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ আদেশ ১৯৮১’ এর বিধান অনুযায়ী ডিলিং লাইসেন্স গ্রহণ করবেন। সমিতির অফিসের সামনে একটি অভিযোগ বক্স থাকবে এবং ক্রেতা সাধারণের প্রদত্ত অভিযোগসমূহ উক্ত সমিতির নেতৃবৃন্দ নিষ্পত্তি করবেন। কাপড় বা অন্য কোনও ক্রয়কৃত পণ্য ক্রেতা কর্তৃক অনতিবিলম্বে ফেরত দিতে চাইলে তা বিক্রেতাকে গ্রহণ করতে হবে। তবে পণ্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে দোকানদার কোনও দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না।
চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান: রমজানে পণ্যবাহী যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে কোনও চাঁদাবাজি বরদাস্ত করা হবে না। ব্যবসায়ীরা অযথা হয়রানি কিংবা চাঁদাবাজির শিকার যেন না হয়, সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোনও ধরনের চাঁদাবাজি, মার্কেটে অনিয়ম ও অপরাধ পরিলক্ষিত হলে অভিযোগ বক্সে, মোবাইলে -৩৩৩, ৯৯৯, ১৬১৫৫, ১৬১২১ নম্বরে অভিযোগের তথ্য প্রেরণ করতে হবে। আমদানি/উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা কোনও খুচরা দোকানদার কর্তৃক একটি পণ্যের সঙ্গে আরেকটি পণ্য বিক্রয়ে বাধ্য করা যাবে না।
সবজির দাম বাড়ানো যাবে না: কাঁচাবাজারে সার্বক্ষণিক সবজির একই মূল্য রাখতে হবে। কোনভাবেই হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধি করা যাবে না। কেউ যদি হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি করে, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসব অনিয়ম ঠেকাতে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তদারকি দলের সদস্যরা। বুধবার (১৫ মার্চ) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানের নেতৃত্বে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিনব্যাপী নগরের বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তারা বাজারে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পান। যারা অনিয়ম করেছেন, সবাইকে দিতে হয়েছে জরিমানা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পণ্যের গুণগত মান, সরবরাহ, ভেজাল প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে থাকবে। পাইকারি ও খুচরা বাজার আমরা নিয়মিত তদারকি করবো, যাতে মাঝখানে অন্য কেউ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে ফায়দা নিতে না পরে।
তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য কোনও প্রকার মজুত এবং কালোবাজারি করলে কোনভাবে বরদাস্ত করা হবে না। পণ্যের মান এবং দাম নিশ্চিত না করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে, যার মাধ্যমে রমজানের প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এতে ভোক্তা অধিকার ও বিএসটিআই সহযোগিতা করবে।-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম