প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো তৈরি পোশাক কারখানা লিড সনদের গোল্ড থেকে প্লাটিনামে উন্নীত হয়েছে। চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের এনএইচটি ফ্যাশনস বুধবার (১ মার্চ) লিড প্লাটিনামে উন্নীত হওয়ার সনদ পেয়েছে।
শুক্রবার (৩ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে লিড সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু রিসার্টিফিকেশনের ঘটনা এখন পর্যন্ত তেমন একটা ঘটেনি। বাংলাদেশ যে এখন পরিবেশবান্ধব কারখানার ক্ষেত্রে অনেক সচেতন ও আমরা যে অনেক কাজ করছি, তারই প্রমাণ হচ্ছে আজকে প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের এনএইচটি ফ্যাশনস নামের একটি কারখানা ৮৪ পয়েন্ট পেয়ে রিসার্টিফিকেশনের সময় প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি বিরল ঘটনা। পাশাপাশি এটি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ কারখানাটি অনেক সজাগ ও অনেক উন্নতি করেছে বিধায় তারা গোল্ড থেকে প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে।’
এর আগে বাংলাদেশের আরেকটি কারখানা এ মর্যাদা অর্জন করেছিল উল্লেখ করে মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘তবে তারা সংগত কারণে তাদের তথ্যটি কনফিডেনসিয়াল রাখে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এনএইচটি ফ্যাশনসের নাম প্রথমবারের মতো প্রকাশ করতে পারছি। এতে আমাদের দেশের লিড প্লাটিনাম সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৬। ফলে আমাদের গোল্ড সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা কমে ১০৯টি হচ্ছে।’
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে যে আমরা শুধুমাত্র সনদ অর্জনেই ব্যস্ত নই। আমরা সনদ অর্জন করে সেটি ধরে রাখতে পারছি এবং আমাদের অবস্থা আরও উন্নতির দিকে এগোচ্ছে। সুতরাং আজকের এ অর্জন প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে কতটা কাজ করছে এবং শক্তিশালীভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
বিজিএমইএ বিশ্বাস করে যে ভবিষ্যতে যখন কোনো কারখানা রিসার্টিফিকেশনের জন্য আবেদন করবে তখন বাংলাদেশের অবস্থানের আরও উন্নয়ন হবে।
২০১৭ সালে ১১০ নম্বরের মধ্যে ৬৪ নম্বর পেয়ে লিড গোল্ড সনদ পেয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছিল এনএইচটি ফ্যাশনস।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন অ্যানার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। এ সনদ পেতে হলে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণের পরে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও প্রতিষ্ঠানটিতে আবেদন করা যায়। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ পাওয়া যায়।
সর্বশেষ তথ্য বলছে, ১৮৯টি পোশাক ও বস্ত্র খাতের কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে লিড প্লাটিনাম ৬৬টি কারখানা, লিড গোল্ড ১০৯টি, সিলভার ১০টি ও সার্টিফায়েড ৪টি।
ইউএসজিবিসি তথ্যমতে, বর্তমানে শীর্ষ ১৩টির ১১টিসহ বিশ্বসেরা ১০০টি কারখানার মধ্যে ৫২টিরই মালিক বাংলাদেশ। অথচ সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক ও দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতির দেশ চীনে রয়েছে মাত্র ১০টি। তালিকায় ৯টি কারখানা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা আর ভারতে রয়েছে ৬টি করে।