আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। দম ফেলানোর ফুসরত পাচ্ছে না প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, ছুটছে ভোটারের দরজায়। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। প্রার্থীদের পাশাপাশি তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা আত্মীয় পরিজন ভোটের মাঠে কোমর বেঁধে নেমেছে। যেটি পূর্ববর্তী নির্বাচনে দেখা মেলেনি। স্ব স্ব প্রার্থীর জন্য ভোট প্রার্থনা করছে, ছুটে যাচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার ভোটারদের কাছে। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়িয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নিরন্তর চেষ্টায়রত।
সংসদীয় আসন নং ২৯৩ চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলে মোট ভোটার ৩,৭০,৭৭৫ জন। তম্মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৯৭,৮৭৬ জন, নারী ভোটার ১,৭২,৮৯৭ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন।
এই আসনে এবার দশজন প্রার্থী থাকলেও প্রচারণায় রয়েছে ৯ জন। দুই দুইবারের সাংসদ আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে রয়েছে। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক), মুজিবুর রহমান (ঈগল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত মহিউল আলম চৌধুরী (মোমবাতি), ন্যাপ সমর্থিত আশীষ কুমার শীল (কুড়েঘর), ইসলামি ঐক্য জোটের শফকত চাঁটগামী (মিনার) খালেকুজ্জামান (বেঞ্চ), আবদুল মালেক আশরাফী (চেয়ার) মামুন আবছার চৌধুরী (আম) ও কংগ্রেস সমর্থিত জিল্লুর করিম শরীফি (ডাব) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
মূলত নয়জন প্রার্থীর সরব প্রচারণা থাকলেও ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়াই হবে ত্রিমুখী। বর্তমান সাংসদ দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহজে বৈতরণী পার হলেও এবার কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি ও দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের বৃহদাংশ, মহিলা আওয়ামীলীগ-যুবলীগ, ওলামালীগ রয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সহ নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত পৌর মেয়রসহ অধিকাংশ চেয়ারম্যান একাত্ম আছে।
অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হলেও প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণ, বেঁড়িবাধ নির্মাণ, একটি কলেজ ও দুটি উচ্চ বিদ্যালয় সরকারীকরণসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন নির্মাণ, করোনাকালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন , বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণসহ সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা, ফায়ার সার্ভিস, বাঁশখালী থানা আধুনিকীকরণ, আওয়ামীলীগের স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করেছে। বাঁশখালীতে ৫০ হাজারের অধিক সংখ্যালঘু ভোটার থাকায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও স্হানীয় কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীদের সাথে দুরত্ব ভোগাবে নিঃসন্দেহে।
অপরদিকে শক্ত প্রতিপক্ষ দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পরীক্ষিত আওয়ামীলীগ নেতা এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ঘনিষ্ট আত্মীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ কবির লিটন ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছে। দীর্ঘদিন রাজনীতি মাঠে সরব থাকায় বাঁশখালীর প্রত্যেক ইউনিয়নে তার বিশাল সমর্থক ও কর্মীবাহিনী রয়েছে। এছাড়াও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল মোস্তফা চৌধুরী সংগ্রাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আকতার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ সোলায়মানসহ বেশ কজন সাবেক বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ট্রাক মার্কার সমর্থনে সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি, শিল্পপতি মুজিবুব রহমান সিআইপির ঈগল প্রতীকের জনসমর্থন সমগ্র বাঁশখালীজুড়ে চোখে পড়ার মতো। উপজেলা রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও উপজেলা আওয়ামীলীগের একাংশ সবসময় সম্পৃক্ত ছিল। বেকারদের কর্মসংস্থান, করোনাকালে সহায়তা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনাসহ সামাজিক কল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড করে আসছে। তাছাড়াও ত্রি-বিভক্ত আওয়ামীলীগের একটি অংশের নেতৃবৃন্দ ও কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তার সাথে রয়েছে।
মূলত এই তিনজনের প্রচারণা, মাইকিং, পোস্টার, ব্যানার, জনসংযোগ, জনসভা ও জনসম্পৃক্ততা অপর ৬ প্রার্থীর চেয়ে ঢের এগিয়ে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি-জামাতের সমর্থিত অনেক মধ্যসারির নেতাকর্মী নির্বাচনী মাঠে আছে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। এই আসনে ত্রিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দেখা দিলেও বাঁশখালীতে বিএনপি-জামাতের শক্ত ঘাঁটি থাকায় জামাত-বিএনপির ভোট পার্থক্য গড়ে দিবে বলে ধারণা করছে অনেকেই।
ইতিমধ্যে নির্বাচনী পরিবেশ সমুন্নত রাখতে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বিপিএম বাঁশখালীর প্রত্যেক প্রার্থী ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে মতবিনিময় ও ব্রিফিং করেছে।
তিনি জানান, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক আইন-শৃংখলা বাহিনী নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে থাকবে।