শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫, ১৩ আষাঢ়, ১৪৩২, ১ মহর্‌রম, ১৪৪৭

মুক্তিযুদ্ধে দোহাজারীর বীর চতুষ্টয় : খসরু-জাফর-রতন-কামাল

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

চট্টগ্রামের সভ্যতা মানুষ ও নদীর যুগ্ম-সৃষ্টি। ঐতিহাসিক কাল থেকে চট্টগ্রামে তিনটি বড় নদী পরিদৃষ্ট হয়। সর্ববৃহৎ কর্ণফুলী, অনতিবৃহৎ হালদা ও শঙ্খ নদী। কর্ণফুলী সদর ও উত্তর চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণকে পৃথক করেছে। শঙ্খ চট্টগ্রামকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলা ও কক্সবাজার জেলা থেকে পৃথক করেছে। হালদা আবার একদিকে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি আরেকদিকে রাউজান ও হাটহাজারীর মধ্যে প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক রচনা করেছে।
দোহাজারী একটি ঐতিহাসিক জনপদ। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে শায়েস্তা খানের পুত্র বুজর্গ উমেদ খান আরাকানিদের পরাজিত করে চট্টগ্রাম দখল করার পর তাঁদেরকে শঙ্খ নদীর দক্ষিণে তাড়িয়ে নিয়ে যান। তারা যাতে শঙ্খ পেরিয়ে আবার চট্টগ্রাম আসতে না পারে সেজন্য তিনি দোহাজারীর প্রতিরক্ষায় তাঁর দু’জন সেনাপতিকে নিযুক্ত করেন। একজন মুসলিম, একজন হিন্দু। মুসলিম সেনাপতির নাম আধু খাঁ, তিনি রোহিলা খÐের পাঠান। হিন্দু সেনাপতির নাম জোরওয়ার সিং। তাঁরা দুজনই প্রত্যেকে ১ হাজার সৈন্যের অধিপতি (মনসবদার) ছিলেন। ১ হাজার সৈন্যের অধিপতি থেকে হাজারী নামের উদ্ভব হয় এবং দুই হাজারী থেকে দোহাজারী নামে উৎপত্তি হয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সপ্তদশ শতাব্দি থেকেও দোহাজারী সামরিক দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিলো। ১৯৩০-৩১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার কালুরঘাট ব্রিজ এবং চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক নির্মাণ করার সময় দোহাজারীতে শঙ্খ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করে।
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যাতে গ্রামাঞ্চলে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদের নেতাকর্মীরা ব্যারিকেড স্থাপন করেছিলেন। যেমন গোমদÐী, শাকপুরা, চরকানাই ফুলতল, পাঁচরিয়া দিঘির পাড়, মনসার টেক, নিমতল, আমজুর হাট, পটিয়া, মোজাফফরাবাদ, গাছবাড়িয়া, সাতবাড়িয়া খান হাট, দোহাজারী, সাতকানিয়া কেরাণীহাট, পদুয়া, আমিরাবাদ বটতল প্রভৃতি স্থানে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিলো। দোহাজারীর ব্যারিকেড ছিলো সবচেয়ে সুসংগঠিত এবং সুরক্ষিত। মোগল -আরাকান বাহিনীর যুদ্ধকালীন সময়ের মত ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালেও দোহাজারী প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। দোহাজারীতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ, বিশেষ করে ছাত্রলীগের শক্তিশালী সংগঠন ছিলো। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী অন্যান্য দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। আবু তাহের খান খসরু যাঁকে ৭৫-এ মুশতাক সরকারের আমলে অস্ত্র উদ্ধারের নামে আটক করে পাহাড়তলী হাজি ক্যাম্পে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন জাফর আলী হিরু, কামাল উদ্দিন আহমদ এবং ডা. রতন কান্তি নাথ।
আবু তাহের খান খসরু, জাফর আলি হিরু, কামাল উদ্দিন আহমদ এবং ডা. রতন কান্তি নাথ চারজনই দোহাজারী সদরের বাসিন্দা। তাঁরা প্রায় সমবয়সী, এক সঙ্গে বড় হয়েছেন এবং লেখাপড়া শিখেছেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে যখন ছাত্র রাজনীতিতে বাঙালি জাতীয়তার উপাদান সংযোজিত হয়, তখন দোহাজারীতে ছাত্রলীগ গঠিত হয় এবং উপর্যুক্ত চারজন ছাত্রই ছাত্রলীগে যোগদান করেন। আবু তাহের খান খসরু বয়সে কিছুটা বড়, কামালও হয়তো তাঁর বয়সের কাছাকাছি ।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুসা দোহাজারীর দরগাহ মাঠে ছাত্র ইউনিয়নের কমিটি গঠন করেন। সেখানে জাফর আলি হিরু, রফিক, আবু তাহের খান খসরু, অধ্যক্ষ রতন কুমার নাথ, আবুল বশর, মোজাহেরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার ফজল করিম সহ অনেকেই ছিলেন। মোহাম্মদ মুসা চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি দোহাজারীর নিকটবর্তী হাশিমপুর গ্রামে। উক্ত কমিটি গঠনের কিছুদিন পর ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘাত বাধে রাজবন্দীদের মুক্তির বিষয়ে; ছাত্র ইউনিয়ন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মুক্তির দাবিতে মিছিল করছিল, অপরদিকে ছাত্রলীগ শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে সংগ্রাম করছিল।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ দোহাজারী ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হয়। সে কমিটিতে রফিক আহমদ সভাপতি ও আবু তাহের খান খসরু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জাফর আলি হিরু হন দপ্তর সম্পাদক। সে সময় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলেন স্বপন কুমার চৌধুরী। তাঁর বাড়ি ছিল সাতকানিয়ায়। সে সময় তাঁর মাধ্যমেই দোহাজারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে যোগাযোগ রাখতেন।
পরবর্তীকালে জেলা ছাত্রলীগ নেতা এসএম ইউসুফ, পটিয়ার চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদ সহ অনেকের সাথে দোহাজারীর ছাত্রনেতাদের যোগাযোগ হয়। সেখানে শামসুদ্দিন আহমদ, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, আবু সৈয়দ, মান্নান সহ অনেকের সাথে তাদের পরিচয় হয় এবং আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সাথেও জাফর আলী হিরুসহ দোহাজারী ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতাদের যোগাযোগ হয়। সে সময় চট্টগ্রাম শহরে বিনোদা ভবন (স্বাধীনতার পর মনসুর ভবন) আবু তাহের খান খসরু, জাফর আলী হিরু সহ দোহাজারীর ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের যাতায়াত ছিল। সেখানে ছাবের আহমেদ আজগরী, মোখতর আহমদ, ইমামুল ইসলাম লতিফি, খায়রুল ইসলাম কক্সি, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, ডাক্তার মাহফুজুর রহমানসহ সে সময়ের অনেক নেতা আসতেন।
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে দোহাজারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটিতে আবু তাহের খান খসরু সভাপতি ও জাফর আলি হিরু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কামাল উদ্দিন সহ সভাপতি ও অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দোহাজারী ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবু তাহের খান খসরুর নেতৃত্বে জাফর আলি হিরু সহ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ সেসময় আন্দোলন সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন।
পরবর্তীকালে তারা ইয়াহিয়া খানের মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন করেন। সে সময়ে রেল চলাচল বন্ধের কারণে অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে মামলা দেয়া হয়েছিল। মার্শাল ল’ কোর্টে তাদের ডাকা হয়েছিল কিন্তু জাফর আলি হিরু সহ ছাত্রলীগ নেতা নেতৃবৃন্দ এতে সাড়া দেননি। তারা মার্শাল’ ল কোর্টে উপস্থিত হননি।
পরবর্তীকালে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হয় মুসলিম হল-এ। সে সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন কিন্তু পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে ছাত্রলীগের সমাবেশ করতে দেয়নি। তখন বঙ্গবন্ধু শাহজাহান হোটেলে যান এবং এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। ছাত্রলীগের সম্মেলনে জাফর আলি হিরু দোহাজারী থেকে ছাত্রদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই তিনি প্রথম বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার দেখেন আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রেসকোর্স ময়দানে ছাত্রলীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে, যেখানে বঙ্গবন্ধুকে তোফায়েল আহমদ ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভ‚ষিত করেছিলেন।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পটিয়ায় জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরী ও পটিয়া-সাতকানিয়া (আংশিক) আসনে প্রাদেশিক পরিষদে মনোনয়ন পান ডাক্তার বি এম ফয়েজুর রহমান। সে নির্বাচনে আবু তাহের খান খসরু, জাফর আলি হিরু, কামাল, রতন ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করে এনেছিলেন। তারা গ্রামে-গঞ্জে বাড়িতে বাড়িতে সেসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য জনগণের কাছে ভোট চেয়েছেন। পোস্টার-লিফলেট বিতরণ করেছেন। নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে কমিটি গঠিত হয়েছিলো, তাতেও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের প্রাধান্য ছিলো। আবু তাহের খান খসরু, জাফর আলি হিরু, কামাল উদ্দিন, অধ্যক্ষ রতন কুমার নাথ, আবুল বশর, আবদুস শুক্কুর প্রমুখ ছাত্রনেতা নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে ছাত্রলীগই নির্বাচন পরিচালনা করেছিলো। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দোহাজারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইসহাক ফকির।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু সাংগঠনিক সফরে কক্সবাজার আসেন। ফেরার পথে আবু তাহের খান খসরুর নেতৃত্বে জাফর আলি হিরু, কামাল, রতনসহ ছাত্রলীগ কর্মীরা দোহাজারীতে বঙ্গবন্ধুকে ফুলের মালা দিয়ে সংবর্ধনা দেন।
মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত দোহাজারীতে আওয়ামী লীগের কর্মকাÐ পরিচালনায় সহায়তা করতেন জনাব আবদুল হক। সে সময় দোহাজারীতে সারের গুদাম ছিল, সেখানে তিনি স্টোর কিপার ছিলেন। আবদুল হক এর বাড়ি গোপালগঞ্জ। তাঁর সাথে বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি দোহাজারীতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতেন।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। দোহাজারীতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সে আন্দোলন সফল করতে ট্রেন-বাস চলাচল বন্ধ করে দেন, রাস্তাঘাট অবরোধ করেন, অফিস-আদালত সব বন্ধ করে দেন। দোহাজারীর বাজারে বাজারে মাইক লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করেন। ৮ মার্চ সকালে রেডিও থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করা হলে দোহাজারীতে সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে মাইক লাগিয়ে ভাষণ প্রচার করা হয়। ছাত্রনেতা আবু তাহের খান খসরু সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জাফর আলি হিরু, অধ্যক্ষ রতন কুমার নাথ, কামাল উদ্দিন এবং আরো অনেকে সংগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়ন থেকেও সদস্য ছিলো। দোহাজারী পুরাতন ইউনিয়ন কাউন্সিল ভবন ছিলো সংগ্রাম কমিটির অফিস।
অসহযোগ আন্দোলন চলাকালেই পূর্ব দোহাজারী মায়ার মার দিঘির মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। আনসার কমান্ডার শামসুল আলম ট্রেনিং দেন। সেখানে আবু তাহের খান খসরু, জাফর আলি হিরু, অধ্যক্ষ রতন কুমার নাথ, কামাল উদ্দিন সহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রাথমিক ট্রেনিং নেন। ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। দোহাজারীর ছাত্রলীগ নেতা- কর্মীরা গাছবাড়িয়া থেকে সাতকানিয়া কেরানী হাট পর্যন্ত দোকানে দোকানে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর সমগ্র দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। চট্টগ্রামে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর বাহিনী বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। এসময় বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর বাহিনীর সদস্যরা কালুরঘাটে প্রতিরোধ ব্যুহ রচনা করে। কালুরঘাটের পূর্বদিকে চরখিজিরপুর, কধুরখীল হাইস্কুল এবং পূর্ব গোমদÐীতে তারা অবস্থান নেয়। দোহাজারী থেকে আবু তাহের খান খসরু ও জাফর আলী হিরুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ যুদ্ধে লিপ্ত বাঙালি সেনাদের জন্য রসদ সংগ্রহ করে কধুরখীল স্কুলে পৌঁছে দেন।
পাঞ্জাবীরা যখন শহর দখল করে নিতে শুরু করে, তখন মানুষ গ্রামের দিকে সরে যেতে থাকে। সে সময় শঙ্খ নদীর ব্রীজে খসরু, জাফরসহ ছাত্রলীগ কর্মীরা অবস্থান নেন। শহর থেকে আর্মি সহ অসংখ্য মানুষ গ্রামের দিকে ছুটে আসতে থাকে। তাদেরকে খাবার ও পানি সরবরাহ, অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়াও যারা আমিরাবাদ, কক্সবাজার যাবেন তাদের গাড়ির ব্যবস্থা করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
৩০ মার্চ চান্দগাঁও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী বোমা বর্ষণের পর মেজর শওকত আলী সেখানকার ট্রান্সফরমারটা ট্রাকে করে দোহাজারী নিয়ে আসেন। দোহাজারী আওয়ামী লীগ সভাপতি বজলুর রহমান ও রবিউল ইসলাম খানের তত্ত¡াবধানে ট্রান্সফরমারটি রাখা হয়। পরে তাঁরা সেটি বান্দরবান দিয়ে আগরতলা পৌঁছে দেন।
১১ এপ্রিল কালুরঘাট প্রতিরক্ষা অবস্থানের পতনের পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক পথে পাকিস্তানি বাহিনী দক্ষিণ দিকে আসতে থাকলে আবু তাহের খান খসরু, জাফর আলি হিরু, অধ্যক্ষ রতন কুমার নাথ, কামাল, সুনীল প্রমুখ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ দোহাজারী ত্যাগ করে ধোপাছড়ি চলে যান। সেখানে তাঁরা ১০/১৫দিন সিরাজ খানের খামার বাড়িতে অবস্থান করেন। তাঁরা গোলার মার পাহাড়ে প্রাইমারি স্কুলে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাঁরা এপ্রিলের মাঝামাঝি আবু তাহের খান খসরুর বোনের বাড়ি থেকে নৌকা যোগে বান্দরবানের কাছ দিয়ে ভারতে যান। সে সময় তাদের সাথে বাজালিয়া, জামিজুরি ও ধর্মপুরের প্রায় ১০০০০ শরণার্থী ছিল। ভারতের যে জায়গায় তাঁরা যান তার নাম বাজিতং, সেখানে একটি বিএসএফ ক্যাম্প ছিলো। তাঁরা ঐ ক্যাম্পে রিপোর্ট করেন। তাঁরা যাওয়ার সময় দুটি রাইফেল ও গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। অস্ত্রগুলি তাঁরা বিএসএফ ক্যাম্পে জমা দেন। পরে বাজিতং ক্যাম্প থেকে তাঁরা ডিমাগিরি যান। সেখানে পরিচিত কোন আওয়ামী লীগ নেতা বা এমএনএ, এমপিএকে পেলেন না। শুধু ফজল করিম চেয়ারম্যান নামে একজন পরিচিত লোকের দেখা পেলেন। হাজার হাজার শরণার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধা সেখানে অপেক্ষমান ছিলো। দোহাজারী থেকে যে মুক্তিযোদ্ধারা গিয়েছিলেন, তাঁদেরকে একটি প্রাইমারি স্কুলে অন্যান্য শরণার্থীদের সাথে রাখা হয়েছিলো। ২/৪ দিন পর তাঁরা সেখান থেকে লুংলেহ (বর্তমানে মিজোরাম) যান। সেখানে টাউন হলে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয় দেলোয়ার, তাহের, সোনালী ব্যাংকের নুর মোহাম্মদ, এমএনএ আবু ছালেহ এবং পদুয়ার ছাত্রলীগ নেতা মৌলভী সরওয়ার কামালের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে তাঁরা আবার ডিমাগিরিতে চলে আসেন। ঢিমাগিরিতে দোহাজারী সাতকানিয়া ও পটিয়ার ৫০/৬০জন মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিংয়ের জন্য রিক্রুট করা হয়। দোহাজারী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার এম কে বড়–য়াও সেখানে ছিলেন। এই বড়–য়া ডাক্তার কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধে আহত ক্যাপ্টেন হারুন আহমদ চৌধুরীকে প্রথমে গাছবাড়িয়া আনা হলে চিকিৎসা করেন। বড়–য়া বাবুর বাড়ি হারলায়। ডিমাগিরি আর্মি ক্যাম্পে তাঁকে মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পরে তিনি আর্মিতেই চাকরি করেন এবং কর্নেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
ডিমাগিরিতে দোহাজারীর মুক্তিযোদ্ধারা ৭ মাস সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখানে ৩১ জাঠ রেজিমেন্ট ডেল্টা কোম্পানিতে প্রায় ২০০ জন ট্রেনিং-এ অংশগ্রহণ করেন। সে কোম্পানির কমান্ডিং অফিসার (সি ও) ছিলেন নন্দলাল সিং। তাদেরকে রাইফেল, ৩৬ গ্রেনেড, এসএলআর, এসএমজি, এলএমজি, ২ ইঞ্চি মর্টার, ৩ ইঞ্চি মর্টার, ইনার্গা গ্রেনেড, এক্সপ্লোসিভ, মাইন, জিএফ গ্রেনেড, রাইফেল চালানো শেখানো হয়। মাঝে মাঝে তাঁদেরকে অপারেশনেও পাঠানো হতো।
অক্টোবরে তাঁদেরকে লুংলেহ আর্মি হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এক মাস পর ১১নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের সেক্টরে পাঠানো হয়। ১১নম্বর সেক্টর ছিল রৌমারী-চিলমারী-রংপুর এলাকায়। ট্রেনিং শেষে আবু তাহের খান খসরু-কে কমান্ডার এবং জাফর আলি হিরো-কে ডেপুটি কমান্ডার করে ৩২ জনের একটি গ্রুপকে সেনাবাহিনীর সাথে ১১ নম্বর সেক্টরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আবু তাহের খান খসরুর নেতৃত্বে থাকা গ্রুপটি সেখানে আন্দোলন করেন। অপরিচিত জায়গায় তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চাইছিলেন না। পরে কর্নেল ওসমানী এসে তাদের আগরতলায় পাঠান এবং সেখান থেকে তাদেরকে আবার হরিণায় পাঠানো হয়।
পরবর্তীকালে সেখান থেকে নভেম্বরের শেষের দিকে দোহাজারী, সাতকানিয়া ও চকরিয়ায় তিনটি গ্রæপ সহ পটিয়ার আহমদ নবী, মহসিন ও ইব্রাহিম গ্রæপ, বাঁশখালীর মাহবুব, আবু তাহের ও সাতকানিয়ার জলিল বকশু গ্রæপ একসাথে দেশে প্রবেশ করে। খসরু-হিরুর গ্রæপের নম্বর ছিলো ১৫৪।
দেশে প্রবেশের পর যুগ্যাছোলা, ফটিকছড়ির খিরাম, রাউজানের কচুবন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প হয়ে কর্ণফুলী পার হয় আবু তাহের গ্রুপ। বোয়ালখালীর জ্যেষ্ঠপুরা ক্যাম্পে স্বল্পকাল অবস্থানের পর তাঁরা কেলিশহর হয়ে পটিয়া প্রবেশ করেন এবং পটিয়ার মধ্য দিয়ে জঙ্গল হাশিমপুর এলাকায় উপনীত হন। জঙ্গল হাশিমপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাঞ্জাবিদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। সেখানে পাঞ্জাবীরা তাদের ঘিরে ফেলে। মাগরিবের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার ওপেন করে। সে যুদ্ধে জলিল বকশু গ্রুপের সুভাষ কান্তি মজুমদার ও বিমল কান্তি মজুমদার শহীদ হন। পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধারা ধোপাছড়ি গিয়ে আশ্রয় নেন। ১৩ ডিসেম্বর সকালে দোহাজারীতে আবু তাহের খান খসরু ও জাফর আলী হিরুর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযোদ্ধারা দোহাজরীর রেলওয়ে হলে ক্যাম্প করেন।
যুদ্ধশেষে জাফর আলী হিরু পড়াশোনায় ফিরে যান। তিনি চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন। সে সময় ছাত্রলীগ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। মুজিববাদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র। জাফর আলি হিরু বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র সমর্থন করে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রনেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে (পরবর্তীকালে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন এবং দু’বার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হন) আহবায়ক করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন মনিরুল ইসলাম হিরু (সদস্য সচিব), আবু তাহের খান খসরু, ইব্রাহিম বিন খলিল, অধ্যাপক দিলীপ কান্তি দাশ, অধ্যক্ষ রতন কান্তি নাথ প্রমুখ।
এই কমিটি সমগ্র দক্ষিণ জেলায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রপন্থি ছাত্রলীগের শাখা গঠন করে সম্মেলন আহবান করে। সম্মেলনে সাতকানিয়ার ইব্রাহিম বিন খলিলকে সভাপতি ও পটিয়ার মনিরুল ইসলাম হিরুকে সাধারণ সম্পাদক এবং বোয়ালখালীর আ হ ম নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। জাফর আলী হিরু দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম হিরুকে সভাপতি, আবু তাহের খান খসরুকে সাধারণ সম্পাদক এবং অধ্যাপক দিলীপ কান্তি দাশকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে জাফর আলী হিরু জাসদে যোগদান করেন এবং চন্দনাইশ থানা জাসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সভাপতি নির্বাচিত হন আবু তাহের খান খসরু। সেসময় জাসদ নেতৃবৃন্দ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসভবন ঘেরাও করার কারণে সারা দেশে অনেক জাসদ নেতা কর্মী গ্রেফতার হয়েছিল। পটিয়ায় জাফর আলী হিরু, মাহবুবুর রহমান, আবুল হোসেন ও টুকুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখন জাফর আলি হিরু পাঁচদিন চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন। ডাক্তার ফয়জুর রহমান এমপি সে সময় তাদের জামিনে বের করে আনেন।
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পরে ১০ অক্টোবর মুশতাক সরকার অস্ত্র উদ্ধারের নামে আবু তাহের খান খসরু, শামসুদ্দিন, মোতাহের সহ অনেককে ধরে নিয়ে যায়। পাহাড়তলী হাজি ক্যাম্পে বন্দী অবস্থায় নির্যাতনের মুখে আবু তাহের খান খসরু শাহাদাত বরণ করেন।
১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাফর আলি হিরু জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সে সময় ১৮ দফা বাস্তবায়ন পরিষদের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। প্রথমে তিনি জনদল, পরে জাতীয় পার্টিতে যান। তিনি জাতীয় পার্টি চন্দনাইশ থানার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সভাপতি ছিলেন আবু বক্কর। পরবর্তীকালে দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির তিনি প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে এরশাদ যখন ক্ষমতাচ্যুত হয়, তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় হননি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক জাফর আলি হিরু ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার দোহাজারী ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৃত আবদুল মুসা সওদাগর। তিনি দোহাজারীর একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি নিজ গ্রাম দোহাজারীর হাজারী বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তাঁর দাদা মরহুম আবু তালেব।
জাফর আলি হিরু পিতামাতার প্রথম সন্তান, তাঁর আরো দু’ভাই এবং দু’বোন রয়েছে। ভাই মোহাম্মদ আলী রাজু, বিএ পাস (প্রয়াত)। বোন শাহীন আকতার ম্যাট্রিক পাস। সাতকানিয়া থানার মৈষামুড়া গ্রামের হাফেজ আহমদের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন ব্যাংকার, মারা গেছেন। এরপর ভাই আজগর আলী সেলিম, ইন্টার পাস। তিনিও সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত। সর্বকনিষ্ঠ বোন পারভীন আকতার, ম্যাট্রিক পাস। তাঁর বিয়ে হয়েছিলো রাঙ্গুনিয়ায়, সে বিয়ে টেকেনি।
জাফর আলি হিরু শৈশবে দোহাজারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে দোহাজারী জামিজুরি আর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন এবং ডিগ্রিতে ভর্তি হন। কিন্তু রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় সেসময় তিনি ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেননি। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীকালে জনাব হিরু মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং চন্দনাইশ থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক নিযুক্ত হন। ২০১০ ও ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ কমান্ডার হিসেবে নির্বাচিত হন। সে সময় থেকেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চন্দনাইশ থানা কমান্ডের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জাফর আলি হিরু ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে হিরু কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঠিকাদারি ছেড়ে দেন এবং পিতার ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর স্ত্রী মিসেস শাহনাজ জাফর, তাঁর বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া গ্রামে। বৈবাহিক জীবনে তাদের দুটি সন্তান। শাজনিন জাফর মুন, তিনি বিজিএমইএ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। শাহরিয়ার জাফর মাইন, তিনি ড্যাফোডিল ইউনির্ভাসিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন।
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

মুক্তিযুদ্ধ যাঁরা শুরু করেছিলেন তাঁরা চলে গেছেন, হারিছই আছেন একা

চট্টগ্রাম শহরে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ করেছিলেন, তাঁরা চলে যাচ্ছেন। সাতজন ছিলেন তাঁরা, পাঁচজন ইতিমধ্যে তাঁদের প্রভুর ডাক পেয়ে এ গ্রহ ছেড়ে চলে গেছেন প্রভুর সন্নিধানে।

বিস্তারিত »

আওয়ামী লীগ, বাঙালি জাতিসত্তার নির্মাণ ও বাংলাদেশ একসূত্রে গাথা

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৩ বছরের অবিরাম সংগ্রাম এবং অবশেষে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকেই

বিস্তারিত »

সুলতান কুসুমপুরী ও তাঁর কোম্পানি কমান্ডার হাবিলদার আবু’র মুক্তিযুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ১৩জন এমপি সম্মুখ যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তারা সেনা কর্মকর্তাদের ন্যায় মুক্তিযুদ্ধে তাদের গ্রæপকে কমান্ড করেন। এই ১৩ জন এমপি

বিস্তারিত »
প্রদ্যোৎ কুমার পাল

৭১-এর দুরন্ত গেরিলা প্রদ্যোৎ কুমার পাল

প্রদ্যোৎ কুমার একজন অসম সাহসী বীরের নাম। মুক্তিযুদ্ধে এই দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা দক্ষিণ চট্টগ্রামের রণাঙ্গণ মাতিয়ে রেখেছিলেন তাঁর অসীম সাহস ও পরাক্রম দিয়ে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চারটি

বিস্তারিত »

দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ক্যান্টনমেন্ট বরকল, শাহজাহান ইসলামাবাদী জিওসি

মুক্তিযুদ্ধের এক কিংবদন্তী শাহজাহান ইসলামাবাদী। দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের তিনিই ছিলেন প্রধান নায়ক। কিংবা এভাবেও বলা যায়, তাঁকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ গড়ে উঠেছিল। তাঁর

বিস্তারিত »

স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের অগ্রসৈনিক মিরসরাইর অহিদুল হক

অহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধে যে অসাধারণ বীরত্ব, অসীম সাহস ও শৌর্যবীর্যের পরিচয় দেন, তা মিরসরাই থানার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে জাতীয় মুক্তির

বিস্তারিত »
বাংলাদেশে পিএইচপির উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রোটন ব্রান্ডের গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধনের পর মোনাজাত করছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ এবং পিএইচপির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সুফি শিল্পপতি মিজানুর রহমান ।

দার্শনিক শিল্পপতি সুফি মিজানুর রহমান পুরুষোত্তম

বাংলাদেশে পিএইচপির উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রোটন ব্রান্ডের গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধনের পর মোনাজাত করছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ এবং পিএইচপির

বিস্তারিত »

ষাটের_দশকের_ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সিরাজুল আলম

কাজী সিরাজুল আলম ষাটের দশকের শেষদিকে চট্টগ্রামের একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা ছিলেন। ৬৯-৭০-এ তিনি ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। তাঁর বাড়ি সীতাকুÐে; তিনি সীতাকুÐে ৬৯-এর

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে_চিকিৎসকদের অবদান ও ডা.শৈবাল কান্তি দাশ

মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের ভ‚মিকা নিরূপণের চেষ্টা করা হয়নি। তবে তাঁরা না হলে মুক্তিযোদ্ধারা, বিশেষ করে গেরিলা যোদ্ধাদের পক্ষে যুদ্ধে সফল হওয়া মুস্কিল ছিল। ইনফ্যান্ট্রি, আর্টিলারি, ক্যাভালরি

বিস্তারিত »