কিংবদন্তি রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন) । বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছেন স্বজন ও ঘনিষ্টজনেরা।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। বর্তমানে শিল্পীর মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আছে।
শামীম আরা নীপা বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদি মহম্মদ মারা গেছেন। তিনি আত্মহত্যা করেছেন কিনা এখনও নিশ্চিত না। আমরা তার বাড়িতে এসেছি।
স্বজনরা জানান, আজও অন্যদিনের মতো তিনি সংগীত চর্চা করেছেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ তার ঘরের দরজা বন্ধ দেখা যায়। পরে রাতে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সাদি মহম্মদ ১৯৫৫ সালে জন্ম নেন। সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। ২০০৭ সালে আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার শ্রাবণ আকাশে ও ২০১২ সালে তার সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সাদি মহম্মদ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। তার বাবার নাম শহীদ সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিম উল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।
একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ, সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ।
সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিমউল্লাহকে।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান। এরপর থেকেই নাকি নানা কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এই সংগীত তারকা। সাদি মহম্মদের ভাই শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশের একজন নৃত্যশিল্পী।