নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরির দায়ে চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকার গ্র্যান্ড সিকদার হোটেলসহ চার প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১১ মার্চ) চলা অভিযানে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সোবহান।{সূত্রঃ দৈ/ আজাদী,২৮ ফেব্রুয়ারি’২৪}।
জানা যায়, স্টোর রুমের তেলাপোকার ছড়াছড়ি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য গ্র্যান্ড সিকদার হোটেলকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরির দায়ে চান্দগাঁও থানাধীন কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকার থাই ফুডকে ১ লাখ টাকা, চান্দগাঁও পাঠানিয়া গোদা এলাকার আল হাসান বেকারিকে ২ লাখ টাকা, খাবারে লেবেল না দেয়ার দায়ে অক্সিজেন এলাকার প্যাছাজিও ফুডকে ১লাখ টাকাসহ মোট ৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বেকারিগুলোতে বিভিন্ন সময়ে নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি এবং খাদ্যে ভেজাল বন্ধের জন্যে অভিযান চালানো হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ের অভিযানে একই ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া যায়।
প্রকৃতপক্ষে অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না ।এদের মন-মানসিকতা এমন হয়ে গেছে যে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ জরিমানা করবে আর তাঁরা জরিমানা দিয়ে দেবে। ব্যক্তি লোভ-লালসা, অতি মুনাফার কারণে জরিমানার অংক খুব একটা তাঁদের গায়ে লাগে না। বাঙালি জাতি এখন সবকিছুতেই গা-সওয়া হয়ে গেছে।
বিশুদ্ধ এবং পুষ্টিকর খাদ্য মানুষের জীবন ধারণের জন্য অন্যতম মৌলিক অধিকার। বিশুদ্ধ খাদ্য যেন এখন সোনার হরিণ। হোটেল-রেস্তোরাঁর চোখ ঝলসানো সাজ-সজ্জা, আলোর ঝলকানির কোথাও কোনো কমতি নেই।কিন্ত অন্দরমহল তথা রান্নাঘরের পরিবেশ নোংরা, অস্বাস্থ্যকর। অনেকক্ষেত্রে এক ঘরেই রান্না-বান্নার ব্যবস্থার পাশাপাশি শৌচাগার অবস্থিত থাকে। ফ্লোর ভেজা, ইঁদুর ও তেলাপোকার রাজত্ব।
খাদ্য সংরক্ষণ বা ডিপ ফ্রিজে পচা-বাসি খাবারের পাশাপাশি রান্না করা এবং কাঁচা মাছ-মাংস তরি-তরকারি, পিপারমেন্ট, সোডা ও বেকিং পাউডারসহ বিভিন্ন ধরণের উপকরণ একসঙ্গে বা পাশপাশি রাখা হয়।ট্যালো, ফ্যাটি এসিড ও ইমউসাইল্টিং, টেক্সটাইল রঙ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বা কেমিক্যাল, ক্ষতিকর কীটনাশক, ফরমালিন, মনোসোডিয়াম, ইথোফেন, চক পাউডার, ইউরিয়া, মার্জারিন, পশুর চর্বি, খনিজ তেল, ন্যাপথলিন, ডিডিটি, সাইক্লোমেট, কাঠের গুঁড়ো, ইটের গুঁড়ো, পোড়া মুবিলসহ বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে খাদ্যে ভেজাল করা হয়।
এসব উপরের তলা থেকে রাস্তার টং দোকান কোথাও বিন্দুমাত্র হেরফের হয় না। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য মানুষের কিডনি লিভার, হৃৎপিণ্ড, অস্থিমজ্জা নষ্ট হচ্ছে।পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, হাঁপানি এগুলো অনেক বেড়ে যাচ্ছে। দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি হারাচ্ছে। নোংরা পরিবেশে তৈরি এবং ভেজাল খাদ্য একটি জাতিকে সত্যিকার অর্থে ক্রমশ পঙ্গুত্ব এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি অদূর ভবিষ্যতের জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিরাট হুমকি। জরিমানা করে এসব অসাধু দুষ্টু চক্রকে প্রতিরোধ করা যাবে না। ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিরতরে বন্ধ করা, জেল জরিমানা করার পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করা সময়ের দাবী।
মোহাম্মদ মন্জুরুল আলম চৌধুরী
লেখক প্রাবন্ধিক