কেউ কি ভেবেছিলো কক্সবাজারে ট্রেন যাবে ?
কেউ কি ভেবেছিলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গ হবে এবং সেই সুড়ঙ্গ পথই কর্ণফুলীর পানি পাড়ি দিয়ে এপার ওপার করা যাবে।
কেউ কি ভেবেছিলো কক্সবাজাররে মহশেখালীর মাতারবাড়ি ধলঘাট এলাকায় বঙ্গোপসাগররে তীর ঘেঁষে ১ হাজার ৩১ একর জায়গায় নির্মিত হবে গভীর সমুদ্রবন্দর।
কেউ কি ভেবেছিলো মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়িতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মিত হবে এবং সেই টার্মিনাল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সারাদেশে আলো ছড়াবে ?
কেউ কোনদিন এসব কথা ভাবেনি, কখনো না, কস্মিনকালেও না।
যিনি এসব কথা সবার আগে ভেবেছেন কে তিনি ? কে সেই সাপ্নিক, যাঁর স্বপ্নে কক্সবাজারের অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছিলো ?
কে তিনি যিনি অনেক পেছনে থেকে অনেক আগের কথা, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করতে পারেন? আজকে বসে যাঁর দূর দৃষ্টিতে ধরা পড়ে অনেক পরের সম্ভাবনার চিত্র?
সেই স্বাপ্নিক রাষ্ট্রনায়ক আমাদের প্রিয় নেত্রী, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, প্রাচ্যের দুহিতা, বাংলার চিরন্তর নারীর কোমল মূর্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
প্রাচীন উপকথায় আছে কক্সবাজার হলুদ ফুলের দেশ, রম্যা নগরী। কক্সবাজারের মাটির সন্তান, বর্তমানে বাংলা একাডেমীর মহা পরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা’র কবিতার ভাষায় ‘দুরিয়া নগর’। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ক্ষুদ্র পার্বত্য প্রদেশটি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামের স্মৃতি বহন করে নামধারণ করেছে কক্সবাজার। হিরাম কক্স (১৭৬০-১৭৯৯) একজন ব্রিটিশ কূটনীতিক, যিনি ১৮ শতকে বঙ্গ ও বার্মায় কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশের কক্সবাজার শহরটির নাম তার নামে নামকরণ করা হয়।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধ্যাদেশ, ১৭৭৩ জারি হওয়ার পর ওয়ারেন্ট হোস্টিং বাঙলার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তখন হিরাম কক্স পালংকির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান হাজার বছরেরও পুরানো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন। এবং শরণার্থীদের পুণর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেন কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই মারা (১৭৯৯) যান। তার পুণর্বাসন অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর নাম দেয়া হয় কক্স সাহেবের বাজার। যা পরে কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থান হওয়ায় রুগ্ন স্বাস্থ্যের মানুষ স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য কক্সবাজারে হাওয়া বদল করতে আসতো। অন্যান্য শ্রেণির মানুষ ছুটিছাটায় অবকাশ যাপনের জন্য, বেড়ানোর জন্য কক্সবাজার আসতেন। এখনো আসেন। কিন্তু কক্সবাজারের যে বিশাল এক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা বুঝতে পারেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি কক্সবাজারকে পর্যটন রাজধানী ঘোষণা করেন। সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের অপরিসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। একটি সী পোর্ট দিয়ে লী কুয়ান সিঙ্গাপুরকে পৃথিবীর অন্যতম ধনী রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। বঙ্গোপসাগরের ডীপ সী পোর্টও বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো চাচ্ছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে। সে লক্ষ্য অর্জনে ডীপ সী পোর্ট হয়তো বিরাট সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখা ছাড়াও কক্সবাজার হয়তো অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। ঘুংধুম দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের সাথে বাংলাদেশের সংযুক্তি, কক্সবাজার রেললাইন, ডীপ সী পোর্ট, পর্যটন রাজধানী এসবকিছু হয়তো কক্সবাজারকে দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে। এক্ষেত্রে চিনের বেল্ট এন্ড রোড ইনশিয়েটিভ-এর কথাও মনে করা যেতে পারে। কক্সবাজার এমন একটি কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত যে, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চিন, কম্বোডিয়া, লাওস, পিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এমনকি ব্রুনাই, ভিয়েতনামেরও অর্থনৈতিক যোগযোগ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একাই একটি দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য যত কিছু প্রয়োজন, সবকিছু করে ফেলছেন। ভবিষ্যতে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন বা আসতে চান তাদের করার জন্য আর কিছুই বাকি রাখছেন না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেজন্য মনে হয় এটা আমরা বলতে পারি যে, আমাদের আর কোন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়োজন নেই।
একজন প্রধানমন্ত্রী একাই যদি একটি দেশকে সমুহ ধ্বংস ও বিনষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন, গভীর খাদের কিনারা থেকে পতনোম্মুখ দেশের অর্থনীতিতে ক্রেন দিয়ে টেনে তোলার মতো উত্তোলন করে শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি ও সমৃদ্ধির উর্ধরোহনে এক একটি সোপান অতিক্রমে করে অনন্য উচ্চতায় উপনীত করতে পারেন, এমন ভিশনারি ডাইনামিক প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের আছেন, তখন অন্য প্রধানমন্ত্রীতে কাজ কি?
শেখ হাসিনা এক কথায় পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা-চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডীপ সী পোর্ট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণ, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ও চালু, চার, ছয় আট লেন করে রাস্তা প্রশস্তকরণ, অসংখ্য ছোটবড় ব্রিজ নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্প যেভাবে সম্পন্ন করেছেন, তার একটি প্রকল্প যদি একজন প্রধানমন্ত্রী সম্পাদন করতে পারেন, তাঁর জীবন ধন্য হয়ে যাবে। আর শেখ হাসিনা অনেক প্রধানমন্ত্রীর কাজ একাই সম্পন্ন করে চলেছেন; সমস্ত মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, এখনো করে যাচ্ছেন। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প করে দেশকে পারমাণবিক যুগে উন্নীত করেছেন। করোনা অতিমারির চ্যালেঞ্জ সাফল্যজনকভাবে মোকাবেলা বিনামূল্যে ৩ কোটি ডোজ টীকাদান করেছেন। এছাড়া সরকার মানুষের কল্যাণের বিভিন্ন রকম ভাতা ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এসব কর্মসূচির আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা, সরকারি শিশু পরিবারে এতিম শিশু প্রতিপালন ও পুনর্বাসন, ক্রীড়া পরিদপ্তরের মাধ্যমে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ক্রীড়া সামগ্রী প্রদান, কাবিখা / কাবিটা / টিআর (সাধারণ ও বিশেষ), কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচি ওএমএস, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (৪০ দিনের), ইউপি দফাদার ও মহল্লাদারদের সম্মানী ভাতা প্রদান, দুস্থ ও এতিম শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, পল্লী মাতৃকেন্দ্র (আরএমসি), শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি বিতরণ, সেলাই মেশিন বিতরণ, ইউনিয়ন পরিয়দ চেয়ারম্যান/ সদস্যদের সম্মানী ভাতা প্রদান, প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ, ধরন ও মাত্রা নিরূপণ এবং সনদ ও পরিচয়পত্র প্রদান, বিদেশে মৃত প্রবাসী কর্মীদের লাশ দেশে ফেরত আনাসহ বকেয়া ও ক্ষতিপূরণ আদায় এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান, ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস আক্রান্ত রোগীর আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি, যুব সংগঠনের মাঝে অনুন্নয়ন খাতের অনুদান প্রদান, আবাসন/আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিবাসীদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পোর্ট্রেট সরবরাহ ও বিতরণ, দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদান কর্মসূচি, উদ্যোক্তাদেরকে ঋণ সহায়তা প্রদান, ভবঘুরে ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন, নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীদের ঋণ প্রদান ও স্বাবলম্বীকরণ, যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ, আইনের সংঘাতে ও সংস্পর্শে এবং সাজাপ্রাপ্ত শিশুদের উন্নয়ন কার্যক্রম, এসিডদগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম, ক্রীড়া অফিসের মাধ্যমে ক্রীড়া ক্লাব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ক্রীড়াসামগ্রী প্রদান, সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন ঋণ ও অগ্রিম পরিশোধ, চিকিৎসা সমাজসেবা কার্যক্রম, পল্লী সমাজসেবা (আরএসএস) কার্যক্রম, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও বিতরণ করা, সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন বিতরণ, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ঋণ/আর্থিক সহায়তা প্রদান, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ভাতা কার্যক্রম, ভিজিএফ/ত্রাণ/মানবিক সাহায্য কর্মসূচি, ভিজিডি কর্মসূচি, ফেয়ার প্রাইস (ন্যায্যমূল্য), প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি, স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতির মধ্যে অনুদান বিতরণ (বামকপ), কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রম, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রম, যুব ঋণ প্রদান, খাদ্যশস্য সংগ্রহ, থোক বরাদ্দ / বিশেষ অনুদানের অর্থ ছাড়করণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান, মহিলা ও শিশু-কিশোরী নিরাপদ হেফাজতিদের আবাসন (সেফহোম), নিবন্ধনকৃত বেসরকারি এতিমখানায় ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট প্রদান, ভিজিএফ/ত্রাণ/মানবিক সাহায্য বিতরণ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলাদের ভাতা কার্যক্রম ও ঋণ কার্যক্রম ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে শেখ হাসিনা একজন কল্যাণময় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। একজন দাশর্নিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ স্বীকৃতি ও সম্মান লাভ করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনার সরকার আমাদের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়ন করেছেন, আমাদের আর কোন সরকারের দরকার নেই। শেখ হাসিনার সরকার আমাদের দেশকে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ রূপান্তরিত করেছেন। নির্বাচন হলে ভালো, না হলেও ক্ষতি নেই। নির্বাচন হলে জনগণ আবার শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকেই নির্বাচিত হরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবেন এবং দেশ পরিচালনার সুযোগ দেবেন।