স্ত্রী মারা যাওয়ার পরদিনই সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান (৫৬) (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) উত্তরার নিজ বাসায় ঘুমের মধ্যে মারা যান তিনি। তাকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেয়া হলে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সোহানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির উপমহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা।
তিনি বলেন, সোহান দুপুরে খাবার খেয়ে নিজ বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে বাড়ির লোকজন তাকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া পাচ্ছিল না। এরপর দরজা খুলে পরিবারের সদস্যরা উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসক জরুরি মেডিকেল কর্মকর্তা তানভীর ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ৬টা ৪০ মিনিটে সোহানকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। সোহানকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন তারা। মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি।
এর আগের দিন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রেইন স্ট্রোক করে সোহানুর রহমান সোহানের স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
১৯৭৭ সালে নির্মাতা শিবলী সাদিকের সহকারী পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন সোহানুর রহমান সোহান। এরপর শহীদুল হক খানের ‘কলমিলতা’ (১৯৮১), এজে মিন্টুর ‘অশান্তি’ (১৯৮৬) ও শিবলী সাদিকের ‘ভেজা চোখ’ (১৯৮৮) সিনেমাগুলোতে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
১৯৮৮ সালে প্রধান নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সোহানুর রহমান সোহান। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’। তবে তিনি সাফল্য পান ১৯৯৩ সালে। সিনেমার নাম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এই সিনেমার মাধ্যমে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন এবং তারকা খ্যাতি পান প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ, নায়িকা মৌসুমী ও কণ্ঠশিল্পী আগুন।
সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত অন্যান্য সিনেমাগুলো হচ্ছে, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘স্বজন’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’, ‘দ্য স্পিড’ ও ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ ইত্যাদি।
সোহানের ‘অনন্ত ভালোবাসা’ মাধ্যমেই সিনেমায় হাতেখড়ি হয় চিত্রনায়ক শাকিব খানের।
পরিচালক সোহানের মৃত্যুর খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, সোহানুর রহমান সোহানের চলে যাওয়া দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক বেদনাবিধূর অধ্যায়। করোনার ক্রান্তিকাল পেরিয়ে সিনেমা জগৎ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর এই সময় তার মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি।
এর আগের দিন মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন সোহানুর রহমান সোহানের স্ত্রী প্রিয়া।
সালমান শাহ, মৌসুমী, শাকিব খানকে রুপালি পর্দায় নিয়ে আসা চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি সোহান তার নির্মিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বজন’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালবাসা’ এমন সব চলচ্চিত্রের মাঝে বেঁচে থাকবেন, বলেন হাছান মাহমুদ।
এদিকে, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের মরদেহ তার প্রিয় কর্মস্থল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তার বড় মেয়ে সৃষ্টি রহমান।
বুধবার রাতে আরেক খ্যাতিমান পরিচালক কাজী হায়াতের মাধ্যমে সোহানের বড় মেয়ে এই বার্তা পাঠিয়েছেন। ফলে প্রিয় কর্মস্থলে গুণী এই নির্মাতার মরদেহ শেষবারের মতো আর যাচ্ছে না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সৃষ্টি বলেন, যখন বাবা অসুস্থ ছিলেন তখন চলচ্চিত্রাঙ্গণের কেউ তেমন খোঁজখবর নেয়নি। সেজন্য মায়ের ইচ্ছা ছিল, মারা গেলেও যেন মরদেহ এফডিসিতে না নেয়া হয়। এবং সেটাই হবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ইসলামিক রীতি অনুযায়ী পরিচালক সোহানের পরিবার তাড়াতাড়ি মরদেহ দাফন করতে চান। তাই রাতেই মরদেহ টাঙ্গাইলে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। ভোরে জানাজা শেষে ফজরের পরপরই মরদেহ দাফন করা হবে।