অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের হাত থেকে কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
বুধবার (৩০ আগস্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
সুজন বলেন, কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।কর্ণফুলী নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকায় শত শত ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অনেকে নামে মাত্র ইজারা নিলেও বেশির ভাগ সিন্ডিকেট ইজারা না নিয়ে বালি উত্তোলন করছে বলে জানা যায়। আর এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। যারা আইনকানুনের কোনরকম তোয়াক্কা করছে না।
আবার অনেক সময় এসব সিন্ডিকেটের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেরও খবর পাওয়া যায়।এসব কারণে কর্ণফুলী নদীর আশপাশের অনেক বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গনও দেখা দিচ্ছে।
অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে কর্ণফুলী নদীর গতিপথ অবাঞ্চিতভাবে পরিবর্তন হওয়ার আশংকা রয়েছে। যে কোনসময় হুমকিতে পড়তে পারে কর্ণফুলী নদীর উপর স্থাপিত তৃতীয় সেতু।
বিশেষ করে বেশি হুমকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক হৃদপিণ্ড চট্টগ্রাম বন্দর। কর্ণফুলী নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। এতে করে চট্টগ্রামের বন্দরের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে বলে বারবার আশংকা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞগণ। ইতোমধ্যে নদীতে পলি জমে বন্দরের জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানো বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এই নদী চট্টগ্রাম বন্দরের লাইফলাইন।কর্ণফুলী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। আর কর্ণফুলীর গতিপথ পরিবর্তন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদীভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতিও হুমকির মুখে বলে মন্তব্য করেন সুজন।তাই যেকোন মূল্যে কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করতে এখনই বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন সুজন।
তিনি আরো বলেন কর্ণফুলী নদীতে চলাচল রত ফেরিতে প্রায়শই ধাক্কা দেয় বালুবাহী অবৈধ বাল্কহেডগুলো। এতে করে নদীতে চলাচল রত ফেরি প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মূখীন হচ্ছে। যে কোন সময় বালুবাহী অবৈধ বাল্কহেডগুলোর ধাক্কায় জান ও মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশংকা রয়ে যায়। বালুবাহী বাল্কহেডের কারণে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। তাই কর্ণফুলী নদীতে চলাচলরত এসব অবৈধ বাল্কহেডগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করারও দাবী জানান তিনি।
সুজন আরো বলেন এদেশের মৎস্য সম্পদের এক সময় অন্যতম প্রধান উৎস ছিল কর্ণফুলী নদী। বেশ কয়েকবছর ধরে কর্ণফুলী নদীতে চিংড়ী পোনা আহরনের নামে নির্বিচারে লক্ষ লক্ষ দেশীয় মাছের পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে।
অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, যে ছোট ছোট জালে চিংড়ী পোনা আহরণ করার পাশাপাশি দেশী মাছের পোনাগুলোকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। এতে করে প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদখ্যাত কর্ণফুলীর মিঠা পানির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে।
এক সময় যে নদীতে দেশীয় টেংরা, পাবদা, রিটা, কাচকি, ফাইস্যাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো কতিপয় অর্থলিপ্সু ব্যক্তির লোভের কারণে সেসব মাছ আজ বিলুপ্ত।
সামুদ্রিক মাছের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলেও কর্ণফুলী নদীর ব্যাপারে মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর সম্পূর্ণ উদাসীন।তাই অতিসত্বর চিংড়ী পোনা আহরণের নামে এসব দেশীয় মাছের পোনা আহরণকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান খোরশেদ আলম সুজন।