আজ: রবিবার ১১ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

কাঁদালে তুমি মোরে

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

কল্লোলের কণ্ঠ চিরতরে থেমে গেল। যেন একটি অনাঘ্রাত কুসুম ঝরে গেল। ভালো করে ফোটার আগেই বৃন্তচু্যুত হলো।
ওর পুরো নাম সন্জয় মহাজন কল্লোল। ওর বড় ভাই শিমুল মহাজনও আমার খুবই ¯েœহভাজন। আমি যখন পূর্বকোণে ছিলাম, তখন পূর্বকোণের সূত্রেই দু’ভাই আমার সান্নিধ্যে চলে আসে। দু’ভাই-ই পূর্বকোণে সাংবাদিকতা করেছে। কল্লোল তো এক সময় শহরে চলে আসে, পূর্বকোণে আমাদের সঙ্গে কাজ করতো। খুব ভালো ছেলে ছিলো কল্লোল। সেজন্যেই আমার খুব আফসোস হচ্ছে, পূর্ণ বিকশিত হবার আগেই, তার সৌরভে আমাদেরকে সুবাসিত করে তোলার পূর্বেই কেন সে হারিয়ে গেল। বিধাতার কোন্ খেয়ালে নীরব হয়ে গেল কল্লোল? কল্লোলদেরই তো এখন আমাদের জন্য শোকগাথা রচনা করার কথা। কিন্তু উল্টোটা হয়ে গেল। এখন আমাকেই কল্লোল জন্য বিলাপ করতে হচ্ছে। হায় এ দুঃখ কোথায় রাখি। এমন জলজ্যান্ত ছেলেটা হঠাৎ উধাও হয়ে গেল।
তার বিয়োগ-ব্যথা আমার বুকে বেশি করে বাজছে কারণ সে আমার খুব ন্যাওটা ছিলো। যখন যা’ বলেছি, বিনা বাক্য ব্যয়ে শিরোধার্য করে নিয়েছে। কখনো বিরক্তি প্রকাশ করেনি, উষ্মা প্রকাশ করেনি। তর্র্ক করতে চায়নি। এমন একটা সাদাসিধে ছেলে যখন চিরদিনের জন্য আখির আড়াল হয়ে যায়, তখন কার না অনুতাপ হয়?
সাংবাদিকতা নিজেই বা কতটুকু জানি। তথাপি পেশায় আগে এসেছি বলে পরে যারা এসেছে তাদেরকে শেখানো নয়, অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করতে হয়েছে। এই হিসেবে কল্লোলকেও হয়তো কিছু শেখাতে চেষ্টা করেছি। সত্যি কথা বলতে কি, কল্লোলকে আমি পুত্রবৎ ¯েœহ করতাম। পূর্বকোণ থেকেও যদি ধরি, তাহলেও আমার সাড়ে তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে এমনি কতজনকে অপত্য¯েœহে, কতজনকে ভ্রাতৃ¯েœহে কাজ করিয়েছি, তার হিসেব রাখিনি। কল্লোলের কথায়, যারা এখন আমার স্মৃতিপটে এসে ভিড় জমাচ্ছে, তাদের মধ্যে অঞ্জন কুমার সেন, অজয় রতন বড়–য়া, আবু তাহের মুহাম্মদ, ওমর কায়সার, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ফারুক ইকবাল, শাহিদ আনোয়ার, অনুপ খাস্তগীর, নাসির উদ্দিন আহমদ, ইত্তেফাকের সাবেক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশীষ সৈকত, প্রথম আলোর ডেপুটি এডিটর কামরুল হাসান, কানাডা প্রবাসী প্রথম আলোর সাবেক বিজনেস এডিটর শওগাত আলী সাগর, কানাডা প্রবাসী মোশাররফ হোসেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সারওয়ার আলম, নিউইয়র্ক প্রবাসী শহীদুল ইসলাম বাচ্চু, পূর্বকোণের বার্তা সম্পাদক ও প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার, একরামুল হক বুলবুল, হাসনাত মোর্শেদ, তৌফিকুল ইসলাম বাবর, রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, পূর্বদেশ-এর চিফ এক্সিকিউটিভ জিয়াউল হক, শামসুল ইসলাম, রতন কান্তি দেবাশীষ, তুষার দেব, সুরেশ দাশ, আলমগীর সবুজ, আলমগীর তপু, মাহবুুবুর রহমান, নাসির হায়দার, লতিফা আনসারী রুনা, আল রাহমান, ইফতেখার, রাহুল দাশ নয়ন, ইকবাল হোসেন, সুবল বড়–য়া, ঢাকার সিনিয়র সাংবাদিক রাজীব নূর, মীর মনিরুজ্জামান, এমএ আজহার, মানিক মুনতাসীর, মতলু মল্লিক, মতিন আবদুল্লাহ, সিরাজুজ্জামান, শরিফুল ইসলাম, পটিয়ার হারুনুর রশিদ, পশ্চিম পটিয়ার জাহের মোহাম্মদ আলাউদ্দিন খান, বোয়ালখালীর ফারজানা ও রাজু দে, আনোয়ারার নুরুল হুদা ও খালেদ মনসুর, রাউজানের অর্জুন কুমার নাথ, জাহেদুল হক ও তৈয়ব চৌধুরী, রাউজানের গশ্চি নয়াহাটের মঞ্জুর কাদের (বর্তমানে এটিএন চট্টগ্রাম ব্যুরোতে কর্মরত), রাঙ্গুনিয়ার পান্থনিবাস বড়–য়া, হাটহাজারীর জাহাঙ্গীর, শিমুল মহাজন, অধ্যাপক শিপক কুমার নাথ, ফটিকছড়ির আবুল বশর মাস্টার (প্রয়াত), জাহেদ কোরেশী ও বিশ্বজিৎ রাহা, নাজিরহাটের ইউনুস, সীতাকু-ের ফোরকান আবু, মোহাম্মদ ইউসুফ, সৌমিত্র চক্রবর্তী, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মিঠু, মিরসরাইর নীরদ বরণ ম-ল, নিজাম উদ্দিন, জয়নাল আবেদিন, আজহার মাহমুদ (বর্তমানে ইত্তেফাকে কর্মরত), এনায়েত হোসেন মিঠু, রাঙামাটির সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, এ্যানি ও হরিকিশোর ত্রিপুরা, বিলাইছড়ির জসিমউদ্দিন, খাগড়াছড়ির জহুরুল আলম, রামগড়ের নিজামউদ্দিন লাভলু, বান্দরবানের এ কে এম জাহাঙ্গীর, মিনারুল হক ও এনামুল হক কাশেমী, টেকনাফের হাফেজ কাশেম, উখিয়ার হামিদ মুহাম্মদ এরশাদ, দর্পণ বড়–য়া, কক্সবাজারের প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, বক্সী, রাসেল চৌধুরী, জিন্নাত, শফিউল্লাহ ও কালাম আজাদ, চকরিয়ার মাহমুদুর রহমান ও জাহেদ চৌধুরী, দোহাজারীর রাজ্জাক, লোহাগাড়ার মনির মাস্টার ও আবুল কালাম আজাদ, সাতকানিয়ার সৈয়দ মাহফুজুন্নবী খোকন ও শহীদুল ইসলাম বাবরÑ এই ক’জনের কথা বলতে পারলাম। আরো অনেকের কাছে হয়তো আমি অপরাধী হয়ে গেলাম, তাদের কথা মনে নেই বলে। তবে আজাদ মঈনুদ্দিন ও জাফর আহমদ রাশেদের কথা মনে পড়ছে। তারা সম্ভবত এখন সাংবাদিকতায় সক্রিয় নেই। আরো মনে পড়ছে শওকত বাঙালি ও মাসুম চৌধুরীর কথা। মাসুম ও শওকত সাংবাদিক হতে চাইলে হতে পারতো। তারা অনেকদিন আমার সঙ্গে ছিলো, তাদের সঙ্গ ভোলা যায় না। একবার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে জাফর ইকবালকে জামায়াত-শিবির মুরতাদ ঘোষণা করলে দেশে যে তীব্র টেনশন সৃষ্টি হয়েছিলো, সেই উত্তেজনার মধ্যে দুটি গাড়ি ভাড়া করে আমি দলবল নিয়ে সিলেট ছুটে গিয়েছিলাম জাফর ইকবাল ও হুয়ায়ুন আহমদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য। অনেকের মধ্যে শুধু পাঁচটি নামই আছেÑসাংবাদিক আসিফ সিরাজ, কবি, সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, কবি, সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, শওকত বাঙালি ও সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ।
কল্লোল ডেস্কে নির্ভরযোগ্য হ্যান্ড হিসেবে গড়ে উঠেছিলো। নিউজ সেন্স ছিল, সংবাদ সম্পাদনায় পাকা হয়ে উঠেছিলো। সে কারণে আমি যখন পূর্বদেশে যাই, তখন জিয়াকে বলেছিলাম কল্লোলকে নেয়ার জন্য। সে নিয়েছিলো। কল্লোলের অনেক সম্ভাবনা ছিলো, একদিন হয়তো বার্তা সম্পাদকও হয়ে যেত। কিন্তু মৃত্যু সকল সম্ভাবনার ওপর যবনিকা টেনে দিয়েছে। কল্লোল চট্টগ্রামের এমন একজন প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক ছিল, যিনি অনেক দূর অব্দি যেতে পারতেন- কিন্তু যমরাজের দয়া হওয়ায় এই সাংবাদিক প্রতিভাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছে চট্টগ্রামের সংবাদপত্র জগত।
কল্লোলের পারলৌকিক শান্তি কামনা করছি।

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

একাত্তরে চট্টগ্রাম শহরের দুর্ধর্ষ গেরিলা অমল মিত্র

মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহর রণাঙ্গণে যেসব সাহসী মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের দুঃসাহসী গেরিলা অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখতেন, তাঁদের মধ্যে অমল অমল মিত্র নামটি তাঁর

বিস্তারিত »

রহমত উল্লাহ চৌধুরী : আওয়ামী লীগের তেজস্বী নেতা রেল শ্রমিক লীগের কিংবদন্তী

আওয়ামী লীগ শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি আরম্ভ করে ১৯৬৯ সালে। সে বছরের ১২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে জাতীয় শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আওয়ামী

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান

৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্র সমাজ ছাড়াও ইপিআর এবং পুলিশ বাহিনী। সেজন্য ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা

বিস্তারিত »

রাউজানে গণহত্যা ও ১৩ এপ্রিলের শহীদেরা

১১ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কালুরঘাট সেতুতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে আটকা পড়েছিলো। তারপর উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের শান্ত পল্লীগুলিতে নরক ভেঙে পড়ে। স্বঘোষিত ক্যাপ্টেন সাকা

বিস্তারিত »

মুক্তিযোদ্ধা সাইফুদ্দিন খালেদ যেন ভুলে না যাই

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে অনেকগুলো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়। সেইসব ঘটনার শোক ও দুঃখের দহন কখনো চট্টগ্রামবাসী ভুলতে পারবে না। দিনগুলো যখন ঘনিয়ে আসে, তখন চট্টগ্রামের

বিস্তারিত »

‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির উদ্ভাবক এবং বঙ্গবন্ধুর প্রথম জীবনীকার

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসামিশ্রিত আন্তরিক সম্বোধনে ‘মুজিব ভাই’, ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে প্রথম

বিস্তারিত »

বৃষ্টি হলেই ডুবছে চট্টগ্রাম, তাহলে জলাবদ্ধতাই কী নগরবাসীর নিয়তি ?

বৃষ্টি হলে পানি উঠে শহরে। সব সময় উঠে, এবারও উঠেছে। দু’তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, জল তো জমবেই। জল জমে জলজট, তারপর জলাবদ্ধতা। বৃষ্টিকে দোষ দিয়ে

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অবদান

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের কোন বিরাম ছিলো না। ৭০-এর নির্বাচন থেকে ৭১-এর অসহযোগ আন্দোলনের শেষদিন ২৫ মার্চ পর্যন্ত সকল

বিস্তারিত »

মাঠের এক প্রান্তে বাঁশের খুটির ওপর কাঠের পাটাতনে তৈরি মঞ্চ। সামনে খড় বিছিয়ে বসে আছে দর্শক। মঞ্চের ওপর দুইপাশে বসে ঢোল, করতাল, মন্দিরা, বাঁশি নিয়ে

বিস্তারিত »