শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, ১৭ জিলকদ, ১৪৪৬

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন বাঙালির পুণ্যদিন

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস। এদেশে যে হারে একটি বড় দলের প্রধান নেত্রীর ভুয়া জন্মদিন পালন করা হয়েছে, তাতে জন্মদিনের কথা বলতে ভয় লাগে। জাতির জনকের জন্মদিন সবকিছুর উর্ধ্বে অনেক বড় একটি দিন। কিন্তু জাতির জনকের শাহাদাত দিবসকে উপহাস করার জন্য কোন দলের দায়িত্বশীল নেত্রী মিথ্যা জন্মদিন পালন করতে পারেন এটা শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব।
তো বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই, তাঁকে তাঁর স্থান থেকে সরানো কোন বিএনপি বা খালেদা জিয়ার পক্ষে সম্ভব নয়। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তারা বঙ্গবন্ধুর নামই মুঝে ফেলতে চেয়েছিলো বাংলাদেশ থেকে। যেখানে যত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বা অনুষঙ্গ তারা পেয়েছে, উপড়ে ফেলেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্থান তো বাঙালির হৃদয়ে, প্রতিটি বাঙালির হৃদয় জুড়ে বঙ্গবন্ধুর নিত্য জীবন্ত উপস্থিতি। বাঙালির রক্তে, অস্থি মজ্জায়, বাংলাদেশের প্রকৃতি, মাঠ-ঘাট, সবুজ শ্যামল প্রান্তর, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল মানচিত্র ব্যাপে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান- অধিষ্ঠান। সুতরাং এই বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা অসম্ভব এক অপপ্রয়াস। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অবিভাজ্য, অবিচ্ছেদ্য সত্তা। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, বঙ্গবন্ধুও ততদিন বেঁচে থাকবেন।
আজকের এই দিন বাঙালির জন্য পুত পবিত্র একটি পুণ্যদিন। কারণ বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। বাংলাদেশ না হলে বাঙালি জাতি পরিচিতি পেত না। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয়ে বাঙালি আজ যে বিশ্বে মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়ায়, সেটা বঙ্গবন্ধুর কারণেই সম্ভব হয়েছে। বাঙালির বহু বছরের সংগ্রাম বহুদিনের সংগ্রাম বিশ শতকে এসে বঙ্গবন্ধুর মধ্যে পরিপূর্ণতা, সফলতা খুঁজে পেয়েছে। একমাত্র বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণ ঘটিয়ে বাঙালিকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। একারণে বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। একারণে প্রতিটি বাঙালিই বঙ্গবন্ধুর কাছে ঋণী। এই ঋণ অপরিশোধ্য।
১৭ মার্চ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক মহিমাম-িত অনন্য একটি দিন-কারণ এদিন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবির্ভাবে ধন্য হয়েছিলো বাংলাদেশ। আমাদের মধ্যে যাঁরা এদিনটি দেখার সৌভাগ্যের অধিকারী হবেন, তাঁরা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম বলে বিবেচিত হবেন। আমরা হয়তো সেই ভাগ্যবান বাঙালি, যে আমাদের জীবনকালে সেই জ্যোতির্ময় মহাপুরুষের জন্মধন্য দিবসটি প্রত্যক্ষ করতে পারবো। আর একশো বছর পর আবার দিনটিরই দেখা পাবে বাঙালি জাতির অনাগত প্রজন্ম-ততদিনে আমাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যাবে।
সুতরাং জাতির জনকের জন্মশতবর্ষের এই মাহেন্দ্রক্ষণটি আমাদের জীবনে যে অপার আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে এসেছে, তাকে বুকে ধারণ করে আসুন আমরা আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠি। যতটা জাঁকজমক ও বর্ণিল আনুষ্ঠানিকতায় সম্ভব, চলুন আমরা এই মহান দিবসটি উদযাপন করি-ব্যক্তিজীবনে ও জাতীয় জীবনে।
চট্টগ্রাম প্রান্তীয় জেলা হলেও আমাদের এই প্রিয় জেলাটির সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু গভীর আবেগময় হ্যার্দিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। সে আজকের কথা নয়, ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রামের জননেতা এমএ আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর। অতঃপর চট্টগ্রামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর যে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, শুধু পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতেই তার পরিসমাপ্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম থেকেই নিয়েছেন। বস্তুত চট্টগ্রামের হাত ধরেই বঙ্গবন্ধু’র রাজনীতি ও নেতৃত্বের ক্রমবিকাশ ঘটে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন সাধারণ মানুষের জন্মদিন নয়। সাধারণ মানুষের জন্মদিনও ঘটা করে পালন করা হয়। কেক কাটা হয়, বেলুন উড়ানো হয়, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও খানাপিনা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনও যদিন তাদের অনুরূপ অনুষ্ঠানসর্বস্ব হয়, তাহলে তা’ আলাদা কোনো তাৎপর্য বহন করে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান সূচিতে নিশ্চয়ই সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও সৃজনশীলতার ছাপ থাকতে হবে। শততম জন্মদিন হলে তো কথাই নেই।
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন নয়। আগামী বছরই তিনি শতবর্ষে পদার্পণ করবেন। জাতির জনক বলেই আমরা এক বছর পূর্ব থেকে অনুষ্ঠান শুরু করেছি। আগামী বছর হবে মূল অনুষ্ঠান পরেয় বছরও আমরা অনুষ্ঠান করবো। আজ জামালখানে আওয়ামী লীগ নেতাকমীরা যদি দলে দলে এসে জামালখান লোকারণ্য করে তুলতে পারেন, তাহলে তারা বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অনুসারীর পরিচয় দেবেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মা তাতে শান্তি পাবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ক্যান্টনমেন্ট বরকল, শাহজাহান ইসলামাবাদী জিওসি

মুক্তিযুদ্ধের এক কিংবদন্তী শাহজাহান ইসলামাবাদী। দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের তিনিই ছিলেন প্রধান নায়ক। কিংবা এভাবেও বলা যায়, তাঁকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ গড়ে উঠেছিল। তাঁর

বিস্তারিত »

স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের অগ্রসৈনিক মিরসরাইর অহিদুল হক

অহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধে যে অসাধারণ বীরত্ব, অসীম সাহস ও শৌর্যবীর্যের পরিচয় দেন, তা মিরসরাই থানার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে জাতীয় মুক্তির

বিস্তারিত »
বাংলাদেশে পিএইচপির উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রোটন ব্রান্ডের গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধনের পর মোনাজাত করছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ এবং পিএইচপির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সুফি শিল্পপতি মিজানুর রহমান ।

দার্শনিক শিল্পপতি সুফি মিজানুর রহমান পুরুষোত্তম

বাংলাদেশে পিএইচপির উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রোটন ব্রান্ডের গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধনের পর মোনাজাত করছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ এবং পিএইচপির

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে দোহাজারীর বীর চতুষ্টয় : খসরু-জাফর-রতন-কামাল

চট্টগ্রামের সভ্যতা মানুষ ও নদীর যুগ্ম-সৃষ্টি। ঐতিহাসিক কাল থেকে চট্টগ্রামে তিনটি বড় নদী পরিদৃষ্ট হয়। সর্ববৃহৎ কর্ণফুলী, অনতিবৃহৎ হালদা ও শঙ্খ নদী। কর্ণফুলী সদর ও

বিস্তারিত »

ষাটের_দশকের_ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সিরাজুল আলম

কাজী সিরাজুল আলম ষাটের দশকের শেষদিকে চট্টগ্রামের একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা ছিলেন। ৬৯-৭০-এ তিনি ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। তাঁর বাড়ি সীতাকুÐে; তিনি সীতাকুÐে ৬৯-এর

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে_চিকিৎসকদের অবদান ও ডা.শৈবাল কান্তি দাশ

মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের ভ‚মিকা নিরূপণের চেষ্টা করা হয়নি। তবে তাঁরা না হলে মুক্তিযোদ্ধারা, বিশেষ করে গেরিলা যোদ্ধাদের পক্ষে যুদ্ধে সফল হওয়া মুস্কিল ছিল। ইনফ্যান্ট্রি, আর্টিলারি, ক্যাভালরি

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে এ কে খানের ভাই এম আর খান ও তাঁর তিন পুত্রের অন্তর্ধান দিবস

সে এক ঘোর অমানিশার অন্ধকার নেমে এসেছিলো এই বাংলায়। সেই ঘন তমসা ভেদ করে স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষার প্রহর গুণে গুণে কত দুঃখিনি মায়ের প্রাণবায়ু বেরিয়ে

বিস্তারিত »

জালালাবাদের যুদ্ধে চট্টল বিপ্লবীদের কাছে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বাহিনীর পরাজয়

৩০-এর ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার (দামপাড়া, বর্তমানে পুলিশ পাহাড়) দখলের পর ইস্টার্ন রিপাবলিকান আর্মির সদস্যরা অস্ত্রাগারের সম্মুখে সমবেত হয়ে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা

বিস্তারিত »

প্রভাবশালী আ.লীগ নেতা চাচা খালেক এবং ফটিকছড়ির বাদশা বাদশাহ আলম

এম এ খালেক (চাচা খালেক) অতীতে আওয়ামী লীগে এমন কিছু নেতা-কর্মী ছিলেন, যাঁরা পাগলের মতো আওয়ামী লীগকে ভালোবাসতেন। তাঁরা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কিছু বুঝতেন

বিস্তারিত »