১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতির আবেদন পর্যালোচনা করতে বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস (সিএমএইচআর)-এর হলোকাস্ট এবং গণহত্যা বিষয়ক কিউরেটর ড. জেরেমি মেলভিন মেরন। সপ্তাহখানেকের বাংলাদেশ সফরে জেরেমি বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সাক্ষাৎ শেষে তিনি কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছেন। গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে চ্যালেঞ্জ হিসেবে জেরেমির ভাষ্য, গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে প্রমাণ সংরক্ষণ বড় চ্যালেঞ্জ। ডকুমেন্ট প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমি দেখেছি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কিছু ভালো কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা কিছু ডকুমেন্ট ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করতে পেরেছে। শুধু ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করলেই চলে না, পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তাদের গল্পের প্রয়োজন হবে।
গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আশাব্যঞ্জক কাজ করছে জানিয়ে জেরেমি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর যে কাজটি করছে তা খুবই আশাব্যঞ্জক। কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস হলোকাস্টের সঙ্গে তারা অংশীদারিত্ব তৈরি করেছে, যা এ বিষয়বস্তু তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে ভালো সম্পর্ক নির্মিত হচ্ছে। কেবল কানাডার মধ্যে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নয়, ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে, যা স্বীকৃতি আদায়ের পথকে সহজ করবে।
বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়টি অজানা ছিল বলে জানান গণহত্যা বিষয়ক এ কিউরেটর। জেরেমির ভাষায়, এটি আমার কাছে অনেকটাই অজানা ছিল। এখন আমি প্রতিদিন জানা এবং শেখার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে এখানে আমার সফরের সময় যা পাব, সেগুলো আমার দেশে নিয়ে যাব এবং আমার সহকর্মীদের কাছে তুলে ধরব। বিষয়টি সামনে কীভাবে নিয়ে আসা যায়, সে উপায় বের করা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করব।
তিনি বলেন, স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়টি একটি প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়া যে চলমান আছে, সেটি আমি বলতে পারি। কেননা, আমি জানি কানাডায় বাংলাদেশি সম্প্রদায় অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে গণহত্যার বিষয়ে স্বীকৃতি চেয়েছে, তারা বিষয়টি তুলে ধরছে।
আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে অনেক সময় রাজনৈতিক সহযোগিতা জরুরি বলে জানান গণহত্যা বিষয়ক কিউরেটর জেরেমি। তিনি বলেন, গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করে নিতে অনেক সময় রাজনৈতিক বিবেচনার দরকার পড়ে। এজন্য বিষয়টি দেশে-বিদেশে তুলে ধরতে হয়। তখন রাজনীতিকদের নজরে আসে। যখন সত্য ঘটনাগুলো বারবার তুলে ধরা হবে, তখন রাজনীতিকরা বিষয়টিতে গুরুত্ব দেবেন। তখন স্বীকৃতি আদায় করতে সহজ হয়। এক কথায়, গণহত্যার বিষয়টি যতটা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে ততই স্বীকৃতি আদায়ে উপকার পাওয়া যাবে।
গণহত্যার স্বীকৃতির পেতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে জেরেমি বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো সহজ উত্তর নেই। এসময় জেরেমি কানাডার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কানাডার বিষয়টি ধরুন। উদাহরণ হিসেবে আমি বলতে পারি, আমাদের আদিবাসীদের গণহত্যার ইতিহাসের কথা। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও আদিবাসীদের গণহত্যার স্বীকৃতি বিষয়টি বিতর্কিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে অনেকে বিতর্ক তুলেছে, প্রচুর আলোচনা হয়েছে। একটা সময় রাজনৈতিক মহল বিষয়টি আমলে নেয়। শেষ অবধি সেটি গ্রহণও করে। গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়টি কিন্তু তৃণমূল থেকে শুরু হয়েছিল, আদিবাসীরা এ আলোচনা তুলেছিল এবং আস্তে আস্তে সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল।
সিএমএইচআরের হলোকাস্ট এবং গণহত্যা বিষয়ক কিউরেটর ড. জেরেমি সাত দিনের সফরে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় আসেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সফরে তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা ও সংলগ্ন যেসব এলাকায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, সেই স্থানগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। একইসঙ্গে ১৯৭১ সালের গণহত্যায় নিহত পরিবারের সদস্য ও গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া নির্যাতিতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জেরেমি।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) গণহত্যা বিষয়ক কিউরেটর জেরেমির ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।