শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২, ২০ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

গুজবে কান দেবেন না, দেশের অর্থনীতি এখনো স্থিতিশীল : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকে তারল্য নিয়ে কোনো অপপ্রচারে কর্ণপাত না করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক উন্নত দেশ বিপদের মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অনেক উন্নত দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপদে এবং সমস্যার সম্মুখীন, তাদের রিজার্ভ কমছে। সে অবস্থায় আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে পেরেছি।’

সোমবার ( ৫ ডিসেম্বর) মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ ও ‘আমর্ড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স’ এর গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে যখনই দেশ একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায় তখন সকলের কাছে (স্বার্থান্বেষী মহল) এটা পছন্দ হয় না, এটা হলো বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর কোভিডের আগে আওয়ামী লীগ তুলেছিল ৮ শতাংশের ওপরে। কিন্তু কোভিড-১৯ ও এর পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনে অনেক উন্নত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধনী দেশগুলোও আজকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায়ও বাংলাদেশকে এখনো আমরা স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।

এ সময় নানা কথা বলে ভয়-ভীতি ছড়ানোর অপচেষ্টায় কান না দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন এই সংকটে অনেক ধনী দেশ জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরাও নানা পদক্ষেপ নিই। অথচ জ্বালানি নিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে পক্ষে টানা হচ্ছে।

দেশের অতীত ও বর্তমান রিজার্ভের তুলনামুলক চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সালে একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় রিজার্ভ পেয়েছিল মাত্র ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন তাঁর সরকার সেই রিজার্ভ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার যখন সরকার গঠন করে তখন রিজার্ভ পায় ৫ বিলিয়ন ডলার যেটাকে টানা সরকারে থাকায় তাঁরা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হন।

তিনি বলেন, করোনার সময় যাতায়াত ও আমদানি বন্ধ ছিল। এ জন্য রিজার্ভ জমে যায়। পরে সব চ্যানেল খুলে গেলে আমাদের আমদানিতে রিজার্ভ ব্যয় করতে হয়েছে। ভ্যাকসিন কেনা, টিকা গবেষণায় অর্থ দেয়াসহ করোনা চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় করতে আমাদের অনেক টাকা লেগেছে। এগুলোর জন্য আমাদের ডলার খরচ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন কেবল মাত্র ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে তখন তাঁর সরকার ১২শ’ কোটি টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন আনার জন্য বুকিং দেয় এবং দেশের মানুষের জন্য ঝুঁকি নেয়। অথচ অনেক উন্নত দেশও বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়নি। সে সময় দেশের ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণীকে তাঁর সরকার যে আর্থিক প্রণোদনা দেয় তাতেও অর্থ ব্যয় হয় এবং তৃণমূল পর্যায়ে অর্থ সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। ফলে করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি অর্থনীতিও ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ এবং স্যাংশনের কারণে ইতোমধ্যে আমদানি ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে গম একসময় ২শ ডলারে পাওয়া যেত তা এখন ৬শ ডলারে কিনতে হচ্ছে। যে পরিবহন ব্যয় ৮শ ডলার ছিল তা ৩ হাজার ৮শ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু এখানে রিজার্ভ খরচ করতে হলেও তাঁর সরকার দেশের জনগণের কথা বিবেচনা করে কোন কার্পণ্য করেনি। পাশাপাশি সরকারের রপ্তানি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধিতে তাঁর সরকারের আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতা কেবল মাটি ও মানুষকে পুঁজি করেই একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। সেটা সকলকে মনে রাখার মাধ্যমেই এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বিলাসিতা পরিহার করে সকলকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহবান জানান। কারণ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে। বিশ্বটা এখন গ্লোবাল ভিলেজ এবং একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। সেটা মাথায় রেখেই তিনি সকলকে সাশ্রয়ী হবার অনুরোধ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম। তখনো অনেকে মুচকি হেসেছিল। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে একটা দৃষ্টান্ত। গ্রামে বসে ছেলে-মেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ডলার আয় করে। এই সুযোগ আমরা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমার ও আমার পরিবারের সবার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক অপবাদ দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রমাণ হয়েছে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিজের অর্থে পদ্মা সেতু করবো। তখন অনেকে বলেছে, এটা কখনো সম্ভব নয়। অনেক দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে যখন আলোচনা করেছি, তখন বলেছে, এটা সম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অসম্ভবকে সম্ভব করাই বাঙালির চরিত্র। এটা আমরা করতে পারবো। এটা আমরা করেছি’। যে কোন দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এজন্য দেশে যেমন মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে তেমনি বিদেশের শান্তি রক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, এটা সবসময় মনে রাখতে হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে। কাজেই আমাদের দেশের মান মর্যাদা সবসময় সমুন্নত রাখা এবং তাদের পাশে থাকা ও সহযোগিতা করা সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে থাকি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ভূমিহীন ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর-বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। এ কাজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অবদান রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আজকের গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে সনদপ্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি কোর্স পরিচালনাকারি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স, ডিএসসিএসসিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) গভর্নিং বডির ১৯তম যৌথ সভায় যোগ দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনডিসি ও ডিএসসিএসসির চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

জাতিকে ওয়াদা দিয়েছি একটা সুষ্ঠু-সুন্দর ভোট উপহার দেবো: সিইসি

জাতিকে সুষ্ঠু-সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য একটা নির্বাচন উপহার দেওয়ার ওয়াদা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তবে সুন্দর ভোট

বিস্তারিত »

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ছাড়লেন

দুইদিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে ঢাকা ছাড়লেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে ২২ থেকে ২৪

বিস্তারিত »

হার্ট ও ফুসফুসে সংক্রমণ বেগম জিয়ার

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হার্ট ও ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছে। রোববার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য

বিস্তারিত »

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার প্লট বরাদ্দে অনিয়মে রায় ২৭ নভেম্বর 

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা সরকারি জমি বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র এবং আসামি পক্ষের

বিস্তারিত »

নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা নেই

নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে

বিস্তারিত »

সেনাবাহিনী-বিজিবি-পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা

বিস্তারিত »

আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায়ের জানানো হবে

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় কবে ঘোষণা করা হবে, সেই তারিখ জানা যাবে আজ। আজ (১৩ নভেম্বর)

বিস্তারিত »

পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে

প্রিপারেটরি স্কুল লক্ষ্য করে দুটি মোটরসাইকেলে করে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে চার ব্যক্তি। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে প্রিপারেটরি স্কুলে দুটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

বিস্তারিত »

ঢাকায় বিজিবি মোতায়েন

রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আজ বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা

বিস্তারিত »