ত্রয়োদশ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বোলারদের কচুকাটা করে ‘মধুর প্রতিশোধ’ নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ৮২ বল আর নয় উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে তাঁরা। এমন ম্যাচ দেখে মনে হতেই পারে, ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে হারার জেদটাই দেখিয়েছে টম লাথামের দল।
তাছাড়া দিনটি ইংলিশ বোলারদের জন্য বিভীষিকাময়-ই বলা চলে। কেননা তাদের বোলারদের রীতিমতো উড়িয়ে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই ইতিহাসের অনন্য নজির দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। কনওয়ে-রবীন্দ্র ২৭৩ রানের জুটি গড়েছেন। যা নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সবোচ্চ রানের রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ ২০৩ রানের জুটি ছিল মার্টিন গাপটিল ও উইল ইয়াংয়ের।
২৮৯ রানের লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে দলীয় ১০ রানেই উইল ইয়ংকে হারায় নিউজিল্যান্ড। ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে লেগ সাইডে সুইং করিয়েছিলেন স্যাম কারান। সেই বল তাড়া করতে গিয়ে নিজের খেলা প্রথম বলেই ইন সাইড এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইয়ং।
এরপর ওয়ান ডাউনে নামিয়ে দেয়া হয় রাচিন রবীন্দ্রকে। এরপর নিউজিল্যান্ডকে আর কোনো বেগ পেতে দেননি কনওয়ে ও রাচিন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে নিউজিল্যান্ড জয় পেয়েছে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। আদিল রশিদকে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে চার মেরে মাত্র ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন কনওয়ে।
পরের ৫০ রান পেতে তিনি খরচা করেছেন ৫০ বল। যা চলতি বিশ্বকাপের প্রথম কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে দায়িত্ব নিয়ে খেলে দলের সঙ্গে নিজের রানটাও বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন কনওয়ে। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ১২১ বলে ১৫২ রান করে। ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া রাচিন ৮২ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সেঞ্চুরির স্বাদ পান। ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটার শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৯৬ বলে ১২৩ রান করে।
এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াই মাঠে নামে বিশ্বক্রিকেটের দুই পরাশক্তি দল। যেখানে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম।
ম্যাচের শুরুটা ভালই ছিল ইংলিশদের। ওভারপ্রতি প্রায় ৬ গড় নিয়ে শুরু থেকেই জস বাটলারের দল রান তুলছিল। দ্বিতীয় বলেই ছয় হাঁকিয়ে রানের খাতা খুলেন জনি বেয়ারস্টো। ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারে আসে ১২ রান।
অপরপ্রান্তে তার ওপেনিং সঙ্গী ডেভিড মালান রান পেতে কিছুটা হিমশিম খেয়েছেন। যার ধারাবাহিকতায় চাপে পড়ে কিউই পেসার ম্যাট হেনরির করা ইনিংসের অষ্টম ওভারে তিনি পা হড়কান। উইকেটরক্ষক টম ল্যাথামকে তিনি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৪ রানে (২৪ বল)।
এরপর থেকে ইংলিশদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফলাতে শুরু করেন বাঁ-হাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার। যা তিনি পুরো ইনিংসজুড়ে ধরে রেখেছিলেন। স্বাভাবিকভাবে খেলতে থাকা বেয়ারস্টোকে নিজের প্রথম শিকার বানান স্যান্টনার। তার বল লং অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ড্যারিল মিচেলের হাতে। তার আগে ৩৫ বলে ৩৪ রান করেন বেয়ারস্টো। এরপর সেই ধাক্কা সামলে ইংলিশদের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন হ্যারি ব্রুক ও রুট। স্বাভাবিক মেজাজে খেলতে থাকা রুটের অপরপ্রান্তে ব্রুক আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালাতে থাকেন। কিন্তু সেই মনোভাবই কাল হলো তার। রাচিন রবীন্দ্র’র বলে দু’টি চার এবং একটি ছক্কা মারার পরের বলেই আবার বড় শট খেলতে গিয়ে ব্রুক উইকেট দিয়ে বসেন। ২৫ রান (১৬ বল) করে তিনি তালুবন্দি হন ডেভিড কনওয়ের।
ম্যাচে মাত্র তিন ওভারের জন্য আক্রমণে এসেছিলেন অনিয়মিত বোলার গ্লেন ফিলিপস। এর ভেতরই তিনি গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নেন, প্রত্যেকটিই আবার বোল্ড। তার প্রথম শিকার মঈন আলি। মাত্র ১১ রানেই ইংলিশ অলরাউন্ডার ফিলিপসের বলে নিজের স্টাম্প হারান। দলীয় ১১৮ রানেই ৪ উইকেট হারানো ইংলিশদের বড় সংগ্রহের স্বপ্ন তখন শঙ্কায় পড়ে যায়। তবে স্বপ্ন জোড়া লাগানোর চেষ্টায় নামেন অধিনায়ক বাটলার ও রুট। দুজনে মিলে জুটি গড়েন ৬০ রানের। এর ভেতর রুট ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৭তম ফিফটি তুলে নেন।
তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকা বাটলারও হাঁটতে থাকেন ফিফটির পথে। দুটি করে চার-ছয়ে একশ স্ট্রাইকরেটও ধরে রাখেন ইংলিশ অধিনায়ক। ম্যাট হেনরির করা কিছুটা লাফিয়ে ওঠা বল খেলতে গিয়ে বাটলারের ব্যাট ছুঁয়ে যায় কিপারের হাতে। ফলে ৪৩ রানেই (৪২ বল) থামে তার ইনিংসটি। এরপর লিয়াম লিভিংস্টোন ও রুট আউট হয়ে যান অল্প সময়ের ব্যবধানে। লিভিংস্টোন ২০ রানে আউট হন বোল্টের বলে। ফিলিপসকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান রুট। তার আগে তিনি ৮৬ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন।
তার বিদায়ের পর আর কেউই সেভাবে ইংল্যান্ডকে আশা দেখাতে পারেনি। ক্রিজে থিতু হতে পারেননি স্যাম কারানও। শেষদিকে আদিল রশিদের ছোট্ট ক্যামিওতে ইংল্যান্ড লড়াইয়ের পুঁজি পায়।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিনটি উইকেট পান ম্যান হেনরি। মিতব্যয়ী বোলিংয়ে স্যান্টনার নেন দুই উইকেট। এছাড়া ফিলিপস দুটি এবং একটি করে শিকার করেছেন বোল্ট ও রবীন্দ্র।