চট্টগ্রামের রাজনীতির একটি বর্ণাঢ্য আকর্ষক চরিত্র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া, চট্টগ্রামের অভিভাবক সংস্থা পৌর কর্পোরেশনের একবার প্রশাসক ও একবার মেয়র, দেশে উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের শুরুতেই প্রথম ধাপে তাঁর জন্মস্থান বাঁশখালী উপজেলা থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হলে তাঁর প্রথম চেয়ারম্যান পদ অলংকৃত করার সৌভাগ্য অর্জন ইত্যাদি ঘটনা যদি সাফল্যের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, তাহলে বলতে হয় সাফল্যের ডালা কানায় কানায় উপচে পড়েছে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর জীবনে।
যাঁরা রাজনীতি করেন, মন্ত্রিত্বই যদি একজন রাজনীতিবিদের শেষ গন্তব্য হয়ে থাকে, তাহলে রাজনীতিবিদ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর সেই ইচ্ছাও পূর্ণ হয়েছে। যখন তিনি চট্টগ্রাম পৌর কর্পোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন, তখন তাঁকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। পূর্ণমন্ত্রীও হতে পারতেন কিন্তু তিনি সেটা চাননি, চাইলে সে ইচ্ছাও অপূর্ণ থাকতো না। কেন মন্ত্রী হতে চাইলেন না। সেটাই মাহমুদুল ইসলাম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। চট্টগ্রামের মানুষ ‘Home sick’ অর্থাৎ ঘরকুনো, তিনিও তার ব্যতিক্রম নন। মন্ত্রী হলে ঢাকায় থাকতে হবে, সেটাই হয়তো মন্ত্রিত্বে তাঁর অনীহার কারণ। যে কারণে তিনি ঢাকায় গিয়ে জাতীয় রাজনীতিও করেননি।
চট্টগ্রামের অতীত ও বর্তমানের অন্যান্য রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর পার্থক্য হলো তিনি একই সঙ্গে রাজনীতিবিদ ও সমাজবিদ অর্থাৎ সমাজসেবক। সকলের মধ্যে তেমন দেখা যায় না। রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক এমন যুগ্ম জীবনের উদাহরণ ছিলেন যাত্রা মোহন সেন, বাকলিয়ার দুই মাস্টার কাজেম আলী ও আমান আলী (খান বাহাদুর), ফজলুল কাদের (খান বাহাদুর), মহিম চন্দ্র দাশ, ত্রিপুরা চরণ চৌধুরী, আবদুল হক দোভাষ (খান বাহাদুর), সৈয়দ মকবুল হোসেন (খান বাহাদুর), আবদুচ ছত্তার (খান বাহাদুর), নুর আহমদ চেয়ারম্যান, শেখ রফিউদ্দিন সিদ্দিকী, বদি আহমদ চৌধুরী (খান বাহাদুর), সালারে জিলা শেখ মোজাফফর আহমদ (শহীদ), আমীর হোসেন দোভাষ, ফজল করিম, সিরাজুল হক মিয়া।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর পরিবার থেকেই রাজনীতি ও সমাজসেবার উত্তরাধিকার লাভ করেছিলেন। তাঁর পরিবার বাঁশখালীর একটি প্রধান রাজনৈতিক পরিবার। বাঁশখালী থানার বৈলছড়ি গ্রামের ‘উজির বাড়ি’ নামে প্রসিদ্ধ যে বাড়ি তাঁর ‘আতুর ঘর’, সে বাড়িও এক কিংবদন্তী, অনেক ইতিহাসের আকর। একাদশ বা দ্বাদশ শতাব্দী পূর্বের বাংলার রাজনীতি যখন রাজা-বাদশাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো, তখনই শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘উজির বাড়ি’র যোগাযোগ। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর দ্বাদশ বা একাদশ ঊর্ধ্বতন পুরুষ মোহাম্মদ খান বাংলার নবাব শায়েস্তা খানের উজির ছিলেন। সেখান থেকেই উজির বাড়ি নামকরণ হয়েছে। সুতরাং মাহমুুদুল ইসলাম চৌধুরীর ধমনীতে রাজ বংশের রক্ত ফল্গুর মত প্রবহমান।
বাঁশখালীতে বহু খ্যাতকীর্তি রাজনীতবিদের জন্ম হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মনীষী শাহ বদিউল আলম, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর পিতা খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক আসহাবউদ্দীন আহমদ, জাকেরুল হক চৌধুরী, নজির আহমদ চৌধুরী মূলত সাংবাদিক হলেও রাজনীতিতেও বিচরণ ছিলো তাঁর, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতি আরম্ভ হয়, তখন শেখ মুর্তজা আলী প্রকাশ ছোট মিয়া ও পেলু বাবু’র ন্যায় জমিদার বংশের অধস্তন পুরুষরাও সে রাজনীতিতে দাখিল হন, তাঁরা এবং শ্রমিক নেতা রাইসুল আলমের নামও উল্লেখ করা যেতে পারে।
৬২-তে মার্শাল ’ল প্রত্যাহারের পর ছাত্র আন্দোলনের ডঙ্কা বেজে উঠলে বাঁশখালী থেকে তাতে ছাত্রনেতা বখতেয়ার নূর সিদ্দিকী, মৌলভী সৈয়দ আহমদ (শহীদ), মোখতার আহমদ, দানেশ আহমদ চৌধুরী (পরে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর ভগ্নিপতি হন), শাহ-ই-জাহান চৌধুরী, শ্রমিক নেতা তপন দত্ত, সুলতান উল কবির চৌধুরী, ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী এবং মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীরা তাতে যোগ দিয়ে বাঁশখালীর রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ করেন। উজির বাড়ির চৌধুরীদের প্রতিষ্ঠিত বৈলছড়ি নজমুন্নেছা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অধরলাল খাস্তগীরও বিখ্যাত কৃষক নেতা ও বামপন্থী নেতা ছিলেন।
খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী বিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে রাজনীতিতে যোগদানের পর থেকে উজির বাড়ি হয়ে ওঠে বাঁশখালীর রাজনীতির তীর্থক্ষেত্র। ‘উজির বাড়ি’ থেকে একে একে বেরিয়ে আসেন রাজনীতিবিদ অলিউল ইসলাম চৌধুরী সুক্কু মিয়া, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী। তাঁরা সবাই খান বাহাদুরের আত্মজ, তাঁর জামাতা দানেশ আহমদ চৌধুরীও তাঁর সময়ে চট্টগ্রামের একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ছিলেন।
সুক্কু মিয়া খান বাহাদুরের দ্বিতীয় পুত্র, তিনি একজন জাতীয় রাজনীতিবিদ, একটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রধান। খান বাহাদুরের প্রথম পুত্র নুরুল ইসলাম চৌধুরী পিতার কাছ থেকে সমাজসেবার দীক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি একজন সুখ্যাত সমাজসেবক ছিলেন, দীর্ঘদিন বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীকে নিয়ে এই আলোচনা, তাঁর কথা পরে সবিস্তারে বলা যাবে। খান বাহাদুরের কনিষ্ঠ সন্তান রায়হানও একজন ছাত্রনেতা ছিলেন। ৬৯-৭০-এ রাজনীতিতে প্রবৃত্ত হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া পর্যন্ত তিনি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও আন্দোলন সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন।
‘উজির বাড়ি’ থেকে আরো জন্ম নেন রফিক আহমদ চৌধুরী (সমাজসেবার জন্য খান সাহেব উপাধি প্রাপ্ত)। তিনি খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরীর ছোট ভাই এবং মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর চাচা। রফিক আহমদ চৌধুরীর কন্যা কামরুন্নাহার জাফর (প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন) ও পুত্র ফরহাদ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ) ‘উজির বাড়ি’র গৌরবের ইতিহাসকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর ‘রাজমোহনী’ আছে, হয়তো রাজরক্ত বহন করেন বলেই। তিনি ক্ষমতায় থাকলেও এবং না থাকলেও মিডিয়ার হাত থেকে তাঁর নিস্তার নেই। তিনি এমনই এক Crowd-puller যে, থাকলে যেমন, ক্ষমতায় না থাকলেও তাঁর থেকে পেছনে ধাবিত হয় সাংবাদিক, পাপারাজিরা, ছেঁকে ধরে মানুষ; মোট কথা তাঁকে সবসময় পাদপ্রদীপের আলোতে দেখা যায়।
সক্রিয় রাজনীতি যখন করেন, তখন যেমন তিনি আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন, সক্রিয় রাজনীতি থেকে যখন দূরে সরে থাকেন, তখনো সময়ে অসময়ে মানুষের জল্পনা-কল্পনায় আলোচিত চরিত্রের নাম অবশ্যই আদি ও অকৃত্রিম মাহমুুদুল ইসলাম চৌধুরী। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় একজন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীই ফোকাস।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে। পিতা আমিরুল হজ খান বাহাদুর, রাজনীতিবিদ জমিদার, সমাজ সংস্কারক ও পার্লামেন্টারিয়ান, মাতা রহিমা বেগম।
বদি আহমদ চৌধুরী ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার আইন সভার সদস্য (গ.খ.ঈ.) (নির্বাচনী এলাকা: রাঙ্গুনিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত) নির্বাচিত হন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে হজ্জ্বব্রত পালনকারী অবিভক্ত বাংলার হাজিদের নেতৃত্বদানের জন্য ‘আমিরুল হজ’ উপাধি লাভ করেন ।
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে বদি আহমদ চৌধুরীকে জনসেবার স্বীকৃতী স্বরূপ ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে অবিভক্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। পরবর্তীকালে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনী এলাকা বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বৃহত্তর নোয়াখালী, বৃহত্তর ত্রিপুরা (কুমিল্লা) ও বৃহত্তর সিলেট থেকে জমিদারদের প্রতিনিধি হিসেবে বদি আহমদ চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার আইনসভার সদস্য (M.L.C.) নির্বাচিত হন।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে বৈলছড়ী নজমুন্নেছা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৬৯ ও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে যথাক্রমে এইচ এস সি ও ডিগ্রি পাস করেন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্র জীবনেই মাহমুদুল ইসলামের নেতৃত্বের গুণাবলীর প্রকাশ ঘটে। চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নের সময় তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে জে এম সেন হলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেম সভাপতি ও ছাবের আহমদ আজগরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই কমিটির কার্যকাল ছিলো।
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম সফরে এসেছিলেন। পলোগ্রাউন্ডে তাঁকে ছাত্র-জনতা বিরাট সংবর্ধনা প্রদান করে। এই সংবর্ধনাকে সফল করতে মাহমুদুল ইসলাম সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিরাট ছাত্র মিছিল নিয়ে তাঁরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। চট্টগ্রামের কর্মসূচি শেষে বঙ্গবন্ধু পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে যোগদানের জন্য সন্দ্বীপে যান। এসময় মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হন। সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বক্তৃতা করেছিলেন।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী যখন ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন তখন আগরতলা মামলা বাতিল, রাজবন্দির মুক্তি এবং ছাত্র-সমাজের ১১ দফা আদায়ের জন্য বাংলাদেশে তুমুল আন্দোলন চলছিলো। আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে আইয়ুব খান ক্ষমতাচ্যুত হন, আগরতলা মামলা বাতিল হয় এবং বঙ্গবন্ধু সহ সকল রাজবন্দি মুক্তি লাভ করেন। চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার জন্য ছাত্রনেতা আবদুল মোবারক, শওকত হাফিজ খান রুশ্নি, এবিএম নিজামুল হক, আবদুল্লাহ হারুন (শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক), জালালউদ্দিন আহমদ উদ্যোগ নিয়েছিলেন, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, ইমামুল ইসলাম লতিফি, কাজী মনিরুজ্জামান মন্টু প্রমুখও তাদের সঙ্গে সে উদ্যোগে সামিল হয়েছিলেন।
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে ৭১-এর ২৫ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজ স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্ভেদ্য দুর্গ হয়ে উঠেছিলো। তখন কলেজ থেকে রাজনীতি রাজপথে চলে গিয়েছিলো, জনগণ ছাত্রদের আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিলো। এসময় মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন চলমাল আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট সংগঠক। চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামো টেকনাফ থেকে শুভপুর সন্দ্বীপ এবং তিন পার্বত্য জেলাব্যাপী বিস্তৃত ছিলো। তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজার জেলা স্বাধীনতার পরে হয়েছে। স্বাধীনতার পূর্বে সেগুলি এক একটি মহকুমা ছিলো।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ আজিজের স্বাধীনতার গুপ্ত মন্ত্র নিয়ে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বৃহত্তর চট্টগ্রামে সাংগঠনিক সফর করে ছাত্র সমাজকে আসন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। ৭১-এর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করলে বাংলাদেশে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো, আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী জলে স্থলে অন্তরীক্ষে সাঁড়াশী আক্রমণ শুরু করলে শহরের সে প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়বে এবং পাকিস্তানি বাহিনী গ্রাম দখল করার জন্য ধাবিত হবে, তখন গ্রাম থেকেই তাদের বিরুদ্ধে সত্যিকার প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলতে হবে, এটা অনুমান করেই মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী গ্রামে চলে গিয়েছিলেন।
গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত, পাকিস্তানি বাহিনী সেখানে সহজে প্রবেশ করতে পারবে না, আর মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর জন্মস্থান বাঁশখালী ছিল আরো অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ একটি জনপদ। তিনি সেই প্রাকৃতিক সুবিধাকে মুক্তিযুদ্ধের কাজে ব্যবহার করার জন্য গ্রামে ছাত্র ও কৃষকদেরকে সংগঠিত করা শুরু করেছিলেন।
ষাটের দশকের ছাত্রনেতাদের মধ্যে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর কৃতিত্ব সর্বাধিক। ষাটের দশকে তাঁর সিনিয়র ও সমসাময়িক অন্য কোন নেতা তাঁদের জীবনকালে এমন কীর্তি স্থাপন করতে পারেননি। ছাত্র রাজনীতির শেষে যখন তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনীতিতে পদার্পণ করেন, তখন তিনি একজন নবীন রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাঁর যোগ্যতা ছিলো, মেধা ছিলো, বুদ্ধি ছিলো, দূরদর্শিতা ছিলো এবং তিনি পরিশ্রম করতে পারতেন।
এগুলি রাজনীতিতে সিদ্ধি লাভের জন্য তাঁর বিশেষ গুণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলো। যার ফলে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম পৌর কর্পোরেশনের শাসক ও মেয়র, বাঁশখালীর প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সিনিয়র সদস্য হতে পেরেছিলেন।
১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য বিনা বেতনে অবৈতনিক প্রফেসর হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। একই বছর তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহকুমা এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের উত্তর মাহকুমা কোর্টের অবৈতনিক প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট এর দায়িত্ব পালন করেন ।
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯৬ পর্যন্ত বিএনপিবিরোধী সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের তিনি ছিলেন শীর্ষস্থানীয় নেতা। এসময় তার পাঁচলাইশস্থ বাসভবন ছিল সংগ্রাম পরিষদের প্রধান কার্যালয়। প্রয়াত আওয়ামী নেতা এমএ মান্নান, এবিএম মহউদ্দিন চৌধুরী, ইসহাক মিয়া, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিত্য যাতায়াত ছিল মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর বাসভবনে।
বলাবাহুল্য, ’৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএ সহ চট্টগ্রামের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের সিবিএ রাজনীতি ছিল মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে।
তিনি ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে YOUNG MAN LEADERSHIP TRAINING এর আওতায় আমেরিকান সরকারের আমন্ত্রণে ROLE OF CONGRESS IN USA এর উপর ৫ সপ্তাহের কোর্সে অংশ গ্রহণ করে মানুষের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার, প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্য, বিচার ব্যবস্থা, CONGRESS এবং SENATE এর আইন প্রণয়ন তথা ক্ষমতার পদ্ধতি, গণ-মাধ্যমের ভূমিকা, প্রাদেশিক সরকার ও গভর্ণরের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং সর্বোপরি আমেরিকার সংবিধান প্রণয়নে ১২ বৎসর ব্যাপী ভূমিকার ইতিহাসের উপর সার্বিক জ্ঞান অর্জন করেন ।
তিনি ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চে COMMONWEALTH PARLIAMENTARY ASSOCIATION এর আমন্ত্রণে বৃটিশ পার্লামেন্টের ওয়েষ্ট মিনিষ্টার SYSTEM এর উপর PRACTICE AND PROCEEDURE OF PARLIAMENT এর উপর ৪ সপ্তাহের কোর্স সম্পন্ন করেন । এই সময় তিনি বৃটিশের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, প্রথানমন্ত্রী মর্গারেট থেচার এবং লর্ড মেয়র অব লন্ডন এর সাথে মতবিনিময় করেন । বৃটিশ গণতন্ত্রের উপর তিনি HOUSE OF LORDS, HOUSE OF COMMONS এর আইন প্রণয়ন সহ বৃটিশ সরকারের শাসন ব্যবস্থার উপর জ্ঞান অর্জন করেন ।
তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে COMMONWEALTH PARLIAMENTARY ASSOCIATION এর সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব প্রদান করেন । দক্ষিণ আমেরিকার BARBADOS নগরীতে পৃথিবীর প্রায় ৮৫ দেশের পার্লামেন্টের স্পীকারগণের নেতৃত্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসাবে আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যানডেলার কারাবন্দি হতে মুক্তি প্রদানের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মাহমুদুল ইসলাম ব্যবসায়িক সমাজের নেতা হিসাবে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণে বেলজিয়াম, হল্যান্ড, ডেনমার্ক ও ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন । তিনি ওইঋই এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে ব্যবসায়িক ডেলিগেশনের নেতা হয়ে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে ভূটান, খ্রিস্টাব্দে সালে ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের LOS ANGELES, WASHINGTON, NEW YORK সহ বিভিন্ন শহরে আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য প্রদান করেন।
রাজনীতিতে তাঁর অর্জন ও সাফল্যের ফিরিস্তি বেশ দীর্ঘ। তিনি ১৯৮৯-২০০০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি, বি.এন.পি ও জাগদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। প্রথম শ্রেণীর অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কর্মরত এবং সাব-ডিভিশন ম্যাজিস্ট্রেট এর অনুপস্থিতিতে সময়ে সময়ে সাব-ডিভিশন ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮০-১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে মহকুমা পর্যায়ে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন, রেল মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন, ১৯৭৯-৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন, ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত স্থানীয় সরকার পর্যালোচনা কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন, ১৯৮৬-৮৭ খ্রিস্টাব্দে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত পুরাতন কাপড় ও সি.আই.সিট আমদানী কমিটি চট্টগ্রাম জেলার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন, বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ ও আলাওল ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পরিষদের চেয়ারাম্যান, ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে যোগদান এবং ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ ও চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় অভিষিক্ত প্রথম ব্যক্তি।
শহরের মেয়র এবং গ্রামের এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী শহর ও অবহেলিত-অনুন্নত গ্রামের উন্নয়ন করার যে সুযোগ পান তা কাজে লাগিয়ে তিনি উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেন।
চাঁনপুর হতে টৈটং পর্যন্ত রাস্তাটি জেলা পরিষদের অধীনে একটি কাঁচা মাটির রাস্তা ছিল। তিনি উদ্যোগ নিয়ে এই রাস্তাকে জেলা পরিষদ হতে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে হস্তান্তর বা অধিভুক্ত করেন। চাঁনপুর হতে টেটং পর্যন্ত সম্পূর্ণ এই কাঁচা মাটির রাস্তার উপরে সেই সময়কালে কয়েকটি শুধুমাত্র কাঠের ব্রিজ ছিল । জলদীর দক্ষিণে টৈটং পর্যন্ত সমস্ত বাঁশের সাঁকু তাঁর আমলে পাকা সেতুতে রূপান্তরিত করা হয়।
বাঁশখালী হতে মানুষ নদী পথে সাম্পানে বা লঞ্চে একদিন একরাত সময় ব্যয় করে ২য় দিনে চট্টগ্রাম শহরে আসত। শুষ্ক মৌসুমে ৪/৫ মাসের জন্য জলদী ও গুনাগরি হতে পুরনাদিনের ভাঙ্গা জিপে করে সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী, কালুরঘাট হয়ে শহরে যাওয়া আসা করত। তাঁর উদ্যোগে ১৯৭৯-১৯৯০ মেয়াদে মধ্যে তিনি ৩ (তিন) বার সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় বাঁশখালীর সমস্ত সেতু পাকা করা হয়। বাঁশখালী চানপুর হতে নাপোড়া পর্যন্ত রাস্তার সমস্ত ব্রীকসলিং কাজ সম্পূর্ণ করা হয়। গুণাগরি হতে জলদী পর্যন্ত রাস্তায় কার্পেটিং করা হয়। সেতু নিমার্ণের লক্ষ্যে ১৯৯০-৯১ খ্রিস্টাব্দে তৈলারদ্বীপে তাঁর দ্বারা ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়।
তিনি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র হওয়ার সুবাদে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সাহায্যে কর্ণফুলী নদীর উপর প্রথম লোহার সেতু (বর্তমানে শাহ আমানত সেতু) নির্মাণ করা হয় এবং সেই হিসাবে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট হতে শাহ-আমানত সেতু হয়ে নতুন একটি রাস্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের বদান্যতায় নির্মাণ করতে সক্ষম হন।
তিনি মেয়র থাকাকালে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষের জন্য চট্টগ্রাম শহরে একমাত্র বাস টার্মিনাল (বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনাল) নির্মাণ করা হয়। সেই বাস টার্মিনালই এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে, রাজধানী, উত্তরবঙ্গ ও রাঙামাটি ইত্যাদি এলাকায় যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শহরে অন্য কোন বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়নি।
বাঁশখালীতে শিক্ষিত বেকারদের চাকরিদাতা হিসাবে তাঁর কোন তুলনা নাই। তিনি এমপি বা মেয়র থাকাকালে কয়েক হাজার ছেলে মেয়েদের চাকরি প্রদানের সময় অন্যান্য সংস্থা ব্যতীত শুধু সিটি কর্পোরেশনেই একমাত্র বাঁশখালীর ৮২৫ জন ছেলেমেয়েকে চাকরি দিয়েছেন। চাকরি দেয়ার কারণে তাঁকে মামলার আসামী হতে হয়েছিল। অথচ তিনি বাঁশখালীবাসীকে সহায়তা করেছিলেন মাত্র।
তাঁর একক প্রচেষ্টায় কোন বিদেশী অনুদান ছাড়া ১৯৯৯ খিস্টাব্দে জাতীয় পার্টির একমাত্র মন্ত্রীর সহায়তায় তৈলারদ্বীপ সেতু নির্মিত হয়। ২০০৬ খিস্টাব্দে ঐ সেতুর উপর টোল বা টেক্স বসিয়ে দেওয়া হয়। একই শঙ্খ নদীর উপর দোহাজারী সেতু, খোদারহাট সেতু, ডলুব্রীজ এবং তৈলারদ্বীপ সেতু বিদ্যমান । সেখানে কোন সেতুর উপর টোল নেই। কিন্তু তৈলারদ্বীপ সেতুর উপর বাস, ট্রাক, সিএনজি টেক্সি, মোটর সাইকেল, মহিষ, গরু-ছাগল ইত্যাদি সব কিছুর উপর টোল আদায় শুরু হয়। ২০০৬ থেকে ২০১৬ পযর্ন্ত দীর্ঘ ১১ বৎসর এই টোলের ব্যাপারে বাঁশখালীর মানুষ অনেক নেতার স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দেননি । মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সর্বশেষ এই টোল আদায়কে অবৈধ দাবি করে বাঁশখালীর জনগণের স্বার্থে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে রিট মামলা দায়ের করেন । সে রিট মামলার কারণে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে সেতু টোলমুক্ত হয়েছে। প্রায় দু’মাস সতুতে টোল ছিল না। কিন্তু বাঁশখালীর কিছু কু-চক্রী মহল সরকারকে ভুল বুঝিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়েরের পর টোল পুনরায় চালু হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার জন্য চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজ ময়দানে ১৯৮৯ খিস্টাব্দে যে “বিজয় মেলা” চালু হয়, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সেই মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই বিজয় মেলা আজ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি দেশের বাইরেও প্রচলিত আছে ।
এমএ মান্নান, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সর্বশেষ আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রামের অভিভাবকস্থানীয় এসব নেতৃবৃন্দের একে একে অন্তর্ধানের পর রাজনীতিতে নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করার জন্য সময় হয়তো নতুন প্রত্যাশা নিয়ে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর কড়া নাড়ছে।