মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৫ ভাদ্র, ১৪৩২, ১৬ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেলে’ জয়-পুতুলকে দলীয় নেতৃত্বে আনছেন শেখ হাসিনা

মুক্তি৭১ ডেস্ক

১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে আজ পর্যন্ত, মানে একটানা চুয়াল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে রয়েছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু দলীয় নেতৃত্বে তার অনুপস্থিতিতে কে বা কারা কীভাবে দলের হাল ধরবেন, সেই ‘সাকসেসন প্ল্যান’ বা উত্তরাধিকারের পরিকল্পনা নিয়ে এই লম্বা ইনিংসের কোনো পর্যায়েই তিনি প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি – বা ঠিক কী ভাবছেন, তারও কোনো আভাস দেননি।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, গত বছরের পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের মতো এত বড় একটা দলের সংগঠন যে কার্যত তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল, সেটারও একটা বড় কারণ ছিল এই দুর্বলতা। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দলটির কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করে রেখেছে।

বস্তুত শেখ হাসিনা উপস্থিত না-থাকলে দলের তৃণমূল স্তরের নেতা-কর্মীরা কার কাছ থেকে নির্দেশনা পাবেন, তা নিয়েও ছিল চূড়ান্ত অস্পষ্টতা।

এখন গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত সরকারের ‘অতিথি’ হিসেবে ভারতের মাটিতেই অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা – যেখানে তার গতিবিধি, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা সব ব্যাপারেই অনেক কড়াকড়ি আছে।

এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আর খানিকটা পরিস্থিতির চাপেই তাকে এখন উত্তরাধিকারের এই অমীমাংসিত বিষয়টির ফয়সালা করার দিকে নজর দিতে হচ্ছে।

তা ছাড়া চলতি মাসেই তিনি নিজে আটাত্তর বছর পূর্ণ করবেন, ফলে বয়সেরও কিছুটা তাগিদ তো অবশ্যই রয়েছে।

এখন তাহলে পরিকল্পনাটা ঠিক কী?

বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনা তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল – এই দুজনকেই নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন।

পাশাপাশি এখানে একটা ভূমিকা থাকবে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিরও।

এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তাদের দলীয় নেতৃত্বে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নিয়ে যে ‘মডেল’টা অনুসরণ করছে, আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও নিজের ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঠিক সেটাই করতে চাইছেন দলীয় সভাপতি।

এদিকে, মাত্র মাস দুয়েক আগেও দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) ‘রিজিওনাল ডিরেক্টর’ পদে ছিলেন সায়মা ওয়াজেদ, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তৃপক্ষ তাকে অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে পাঠানোর পর শেখ হাসিনার কন্যা এখন পুরাদস্তুর রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন।

অন্যদিকে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ এখন মার্কিন নাগরিক ও আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা, তবে মায়ের পর দলের প্রধান মুখ ও মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনিই। দেশ-বিদেশের মিডিয়াকে সাক্ষাৎকারও দিচ্ছেন ঘন ঘন।

কিন্তু সায়মা ওয়াজেদ যেহেতু মায়ের সঙ্গে একই শহরে ও একই টাইম জোনে রয়েছেন, শেখ হাসিনাকে তিনি সরাসরি সাহায্য করতে পারছেন অনেক বেশি। অনলাইনে মায়ের দেওয়া ভাষণের খসড়া তৈরিতে, কর্মসূচির ক্যালেন্ডার স্থির করতেও সাহায্য করছেন।

এমন কী, বাইরের দর্শনার্থীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি দেখা করার ক্ষেত্রে যেহেতু অনেক বিধিনিষেধ আছে – তাই সে কাজটাও এখন অনেকাংশেই সায়মা ওয়াজেদের ওপর বর্তেছে। গত দু’মাসে তিনি বেশ কয়েকবার এরকম বৈঠকও করেছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে, তবে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।

ফলে বলা যেতেই পারে, শেখ হাসিনা এখন ধীরে ধীরে অনেক দায়িত্বই ছেলেমেয়ের ওপরে ছেড়ে দিয়েছেন বা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ এই বিষয়ে কী বলছে?

শেখ হাসিনার এই তথাকথিত ‘সাকসেসন প্ল্যান’ নিয়ে বিবিসি বাংলা ভারতে ও ভারতের বাইরে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলেছে।

তারা অনেকেই দলীয় নেতৃত্বে এই ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা’ মডেল অনুসরণ করার বিষয়টি নিয়ে অবহিত এবং বিবিসির কাছে সেটি নিশ্চিতও করেছেন।

কিন্তু এই বিষয়টি আওয়ামী লীগের ভেতরে এতটাই স্পর্শকাতর একটি ইস্যু, যে তারা কেউই এটি নিয়ে ‘অন রেকর্ড’ মুখ খুলতে চাননি।

তবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত দাবি করছেন, এই বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে এখনও কোনো আলোচনাই হয়নি।

আরাফাত বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আপনি যে সাকসেসন প্ল্যানের কথা বলছেন সেটা এখন আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যেই পড়ে না। কে কী পদ-পদবী পেলেন, সেটা এখন ভাবারই সময় নয়। দলের মধ্যেও আমরা এটা নিয়ে এখন কথাবার্তা বলছি না। আপনারা জানেন, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, সেই লক্ষ্যেই সব চেষ্টা নিয়োজিত করা হচ্ছে।’

সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘তবে এটুকু বলতে পারি – সভানেত্রীর পরিবারের সব সদস্য যেমন, তেমনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী যে যেখানে আছেন সবাই এই একটা লক্ষ্যেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন।’

আরাফাতের কথায়ও ইঙ্গিত ছিল, সজীব ওয়াজেদ তো আগে থেকেই ছিলেন – এখন সায়মা ওয়াজেদও আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন।

কেন এখন রাজনীতিতে এলেন সায়মা ওয়াজেদ?

এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তাকে ছুটিতে পাঠানোর পর শেখ হাসিনার কন্যার কাছে এছাড়া আর কোনো অপশন ছিল না।

গত ১১ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকের পদ থেকে সায়মা ওয়াজেদকে অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে পাঠানো হয়। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ক্যাথরিনা বোয়েহমি দায়িত্ব সামলাবেন বলে জানানো হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র মহাপরিচালক টেড্রস এ গেব্রেয়িসুস যে ‘ইন্টারনাল ইমেইলে’ তার কর্মীদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান, সেটির একটি প্রতিলিপি এই প্রতিবেদকও দেখেছেন।

সেই ইমেইলের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, সায়মা ওয়াজেদ ওই পদে থাকলে হু-র সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিল এবং ওই পদে তার নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, সেটা বিবেচনায় নিয়েই তাকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তা ছাড়া বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন আয়বহির্ভূত সম্পত্তি বানানো, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যে সব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এনেছে – সেটাও হু-র ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশ সরকারের মনোভাবের ‘অপ্রত্যাশিত কোনো পরিবর্তন’ না হলে এই ছুটি থেকে অচিরে তাকে ফেরানোর যে কোনো সম্ভাবনাই নেই – সংস্থার একাধিক সূত্র বিবিসির কাছে তাও নিশ্চিত করেছেন।

আর এটা জানেন বলেই সায়মা ওয়াজেদও এখন ‘ফুলটাইম’ মায়ের সঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পড়েছেন, তাকে নানাভাবে সাহায্য করছেন।

অথচ আটই অগাস্ট ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পরও একটি টুইটে সায়মা ওয়াজেদ জানিয়েছিলেন, তিনি হু-র আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

দিল্লিতে তিনি ওই পদে আসেন ২০২৪ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ ছিল পুরো পাঁচ বছরের। সুতরাং ২০২৯র শুরু পর্যন্ত তার ওই পদে থাকার কথা ছিল, আর তিনিও সেই কার্যকাল শেষ করতেই চেয়েছিলেন।

কিন্তু হু-র ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তই তাকে কার্যত বাধ্য করেছে এখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চলে আসতে।

বস্তুত গত মাসেই তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আবার ‘রাজনৈতিক পোস্ট’ করা শুরু করেছেন – যেগুলো ছিল তার নিজস্ব কিছু মন্তব্য-সহ একটি খালাতো বোন টিউলিপ সিদ্দিকের ও অন্যটি বড় ভাই সজীব ওয়াজেদের করা পোস্টের রিটুইট।

হু-র পদে থাকাকালীন যথারীতি তাকে রাজনৈতিক মন্তব্য থেকে দূরে থাকতে হতো – কিন্তু গত কিছুদিনে তার এই সব পোস্ট থেকেই অনেকে ধারণা করছেন যে, সায়মা ওয়াজেদ হয়তো নিজেও জানেন তার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ফেরার রাস্তা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

কংগ্রেসে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেলটা ঠিক কী?

বয়সজনিত কারণে ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য সোনিয়া গান্ধী যতই সক্রিয় রাজনীতি থেকে আড়ালে চলে যাচ্ছেন, ততই কংগ্রেসের নেতৃত্বর হাল ধরছেন তার ছেলে-মেয়ে, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

সোনিয়া গান্ধী অবশ্য এখনও রাজ্যসভার এমপি, পার্লামেন্টেও নিয়মিতই আসেন বা বিরোধী জোটের বৈঠকেও তাকে দেখা যায়।

কিন্তু দলের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন, ধরনা বা সাংবাদিক বৈঠকে এখন প্রধান মুখ অবশ্যই রাহুল গান্ধী। প্রিয়াঙ্কা রয়েছেন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীর ভূমিকায়, কিন্তু তিনি বড় ভাইকে কখনো ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেননি।

বস্তুত ভারতে গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে অনেক চাপ থাকা সত্ত্বেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নিজে কোনো আসন থেকে না লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

তখন একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটা রাহুল গান্ধীর নির্বাচন। এই লাইমলাইট ওর ওপর থেকে এক চুলও সরে যাক, এটা আমি কখনোই চাইব না।’

সেই নির্বাচনে রাহুল গান্ধী দুটি আসনেই জিতলে পরে তার ছেড়ে দেওয়া কেরালার ওয়েনাড থেকে উপনির্বাচনে জিতে লোকসভায় আসেন প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু সেখানেও বিরোধী দলনেতার আসনে রাহুলই আছেন, প্রিয়াঙ্কা দলের একজন সাধারণ ‘ফার্স্ট টাইম এমপি’।

অথচ বড় ভাইয়ের অনেক আগে থেকেই প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে এসেছেন, সেই ১৯৯৯ থেকেই তিনি উত্তরপ্রদেশে মায়ের হয়ে নির্বাচনি প্রচারে যুক্ত থেকেছেন। কিন্তু নির্বাচন মিটে গেলেই তিনি আবার প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে দূরে সরে যেতেন।

আর রাহুল গান্ধী রাজনীতিতে প্রথম পা রাখেন ২০০৪ সালে, যখন আমেঠি আসন থেকে জিতে তিনি প্রথমবার লোকসভার এমপি হন। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এরও বছর তিনেক পরে।

এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধীকে একেবারে সামনে এবং প্রিয়াঙ্কাকে ঠিক তার পেছনে রেখে যেভাবে ভারতের প্রধান বিরোধী দলটি পরিচালিত হচ্ছে – শেখ হাসিনা সেই ‘মডেল’টাই আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে চাইছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

শেখ হাসিনা ও গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠতা

বিগত এক দশকে নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার মধ্যে একটা ‘পার্সোনাল কেমিস্ট্রি’ গড়ে উঠলেও গান্ধী পরিবারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেত্রীর সম্পর্ক অনেক বেশি পুরনো ও অনেক ‘পারিবারিক’। সোনিয়া গান্ধী ও তিনি প্রায় সমবয়সীও, শেখ হাসিনা মাত্রই ন’দশ মাসের ছোট।

গত এক দশকে বিজেপি আমলেও তিনি যখনই ভারতে কোনো সরকারি সফরে এসেছেন, বিরোধী দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বা তার ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা করতে শেখ হাসিনা কখনোই ভোলেননি।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে আসেন, তখন এই দেখা করাকে কেন্দ্র করে একটা মজার ঘটনাও ঘটেছিল।

ওই সফরে দিল্লিতে পা রাখার পর থেকেই তিনি ভারতে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানকে বলে আসছিলেন, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তার একটা বৈঠকের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু রাহুল গান্ধীকে কিছুতেই ধরা সম্ভব হচ্ছিল না।

আসলে ঠিক তখনই রাহুল তার প্রথম ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ নিয়ে ব্যস্ত, যে অভিযান কার্যত তার রাজনৈতিক কেরিয়ারকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছিল। ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত কন্যাকুমারিকা থেকে রাহুল গান্ধীর সে যাত্রা শুরু হয়।

শেখ হাসিনা একটা পর্যায়ে তার রাষ্ট্রদূতকে বলেন, যে কোনোভাবে হোক আপনি ওকে খবর পাঠান আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে চাই।

অবশেষে সে বার্তা পেয়ে ৬ই ডিসেম্বর রাতে চেন্নাইয়ের ফ্লাইট ধরার ঠিক আগে রাহুল গান্ধী দিল্লির মৌর্য শেরাটন হোটেলে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চলে আসেন।

শেখ হাসিনা তার কাছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় তিনি ঠিক কী করতে চাইছেন এবং এই অভিযানটা কীভাবে পরিচালিত হবে। রাহুল গান্ধীকে তিনি এই যাত্রার জন্য শুভেচ্ছাও জানান।

বস্তুত রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রাজনৈতিক জার্নিকে তিনি ‘ফলো’ করছেন দীর্ঘদিন ধরেই, আর এখন আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও সেই একই ধরনের ফর্মুলাই প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন।

দিল্লিতে প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিনোদ শর্মা মনে করেন, আওয়ামী লীগের জন্য এটাই আসলে ‘ন্যাচারাল চয়েস’ বা স্বাভাবিক পছন্দ।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, ‘ভারতে কংগ্রেসের মতোই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগও চিরাচরিতভাবে একটি পরিবারকেন্দ্রিক দল, আর সেই ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’ থেকেই এই দলগুলো নেতৃত্ব তুলে আনতে চাইবে এর মধ্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিজেপির সঙ্গে ইদানীং শেখ হাসিনার যতই সুসম্পর্ক থাকুক, বিজেপি-র মডেল আসলে আওয়ামী লীগের জন্য নয়!’

কোণঠাসা ওবায়দুল কাদের, গুরুত্ব পাচ্ছেন তিন নেতা

নিজের ছেলেমেয়েকে অঘোষিতভাবে দলের নেতৃত্বে একেবারে সামনের সারিতে নিয়ে আসার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ পরিচালনার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি নিজে এই মুহুর্তে ভারতের মাটিতে, দলের শীর্ষ নেতাদেরও অনেকেই এ দেশে – ফলে আওয়ামী লীগের ‘নিউক্লিয়াস’ এখন কার্যত প্রতিবেশী দেশের মাটিতেই।

শেখ হাসিনা, সায়মা ওয়াজেদ দিল্লিতে (বা দিল্লির উপকণ্ঠে), সজীব ওয়াজেদ আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় এবং দলের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ নেতা কলকাতায় – এভাবেই একটি ত্রিভুজাকার যৌথ নেতৃত্বর মধ্যে দিয়ে এই মুহূর্তে দলটির দৈনন্দিন কাজকর্ম চলছে।

কিন্তু কাগজে-কলমে এখনো যিনি আওয়ামী লগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন, সেই ওবায়দুল কাদের দলের এই নতুন কাঠামোতে একেবারেই উপেক্ষিত।

প্রায় দশ মাস আগে ভারতে চলে এলেও তিনি এখনও দলীয় সভাপতির দেখাই পাননি বলে বিবিসি নিশ্চিত হতে পেরেছে।

শেখ হাসিনা বরং বেশি ভরসা রাখছেন দলের তিনজন নেতার ওপর – যারা প্রত্যেকেই আপাতত কলকাতায়।

এরা হলেন বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও একদা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাসিম এবং আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে তাদের সশরীরে দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে। তবে আপাতত তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার কাজটি করছেন সায়মা ওয়াজেদ।

অন্য দিকে সজীব ওয়াজেদের নেতৃত্বে আমেরিকায় আর একটি টিম কাজ করছেন দলের অনুকূলে ‘ন্যারেটিভ নির্মাণ’ (বয়ান তৈরি) এবং বিদেশের সংবাদমাধ্যমে আওয়ামী লীগের বক্তব্য তুলে ধরতে।

৭৬ বছরেরও বেশি পুরনো এই রাজনৈতিক দলটি ইতিহাসে সম্ভবত তাদের সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করে ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন লড়াই‌ করছে। তবে নেতৃত্বের রাশ থাকছে যথারীতি দলটির ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’র হাতেই।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

শহীদ অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যাকাণ্ড

সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হওয়ার পর এটা নিশ্চত হয়ে যায় যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, যে কোন মূল্যেই তারা

বিস্তারিত »

৭১-এ চেরাগী পাহাড়ে ইউসিসে বোমা মেরেছিলেন দু’জন বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধা

ওসমান গণি চৌধুরী ষাট ও সত্তরের দশকের চট্টগ্রামের একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে রাউজান থানার গহিরা গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা আলহাজ্ব জহুরুল হক চৌধুরী ও

বিস্তারিত »

ওসিকে ‘মারধর’: চট্টগ্রামের ৩ আনসার, এক পুলিশ কর্মকর্তাকে সরানো হল

চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনার পর তিন আনসার ও এক পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত সোমবার নগরীর ফয়’স লেক এলাকায় ৩১ আনসার

বিস্তারিত »

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদে অধ্যাপক ড. মো. আহসানুল হক সম্ভাবনাময় প্রার্থী

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদে অধ্যাপক ড. মো. আহসানুল হক সম্ভাবনাময় প্রার্থী। তিনি অন্যান্যদের চেয়ে অধিকতর যোগ্য বলে বিভিন্নসূত্রে জানা যায়। তিনি বর্তমানে

বিস্তারিত »

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা আসছে

শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত প্রক্রিয়ার নানা ঘটনাবলি নিয়ে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র

বিস্তারিত »

স্বামীর ছোড়া অকটেনের আগুনে দগ্ধ গৃহবধূ নাজমা আর নেই

চন্দনাইশে স্বামীর ছোড়া অকটেনের আগুনে দগ্ধ গৃহবধূ নাজমা মারা গেছে। শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাজমা মারা যায়

বিস্তারিত »

বিএনপির লাখো নেতাকর্মী আগরতলামুখী লংমার্চকে অভ্যর্থনা জানাতে সড়কে

ঢাকা সংবাদদাতা: ভারতের আগরতলা অভিমুখী ঢাকা টু আখাউড়া লংমার্চকে স্বাগত জানাতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পথের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে

বিস্তারিত »

জয় বাংলা

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত গতকাল এক রায়ে বলেছে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান নয়। ইতিপূর্বে হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান বলে রায় দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সেই

বিস্তারিত »

দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করতে স্বাধীনতা অর্জন করিনি: রিজভী রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতা পিন্ডির কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছি দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য নয় বলে মন্তব্য

বিস্তারিত »