চট্টগ্রামের নৈসর্গিক স্থান সিআরবি শিরীষতলায় শুরু হয়েছে ‘অমর একুশে বইমেলা’। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে এ মেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী।
এই মেলার স্থান নির্ধারণ ও পরিবর্তিত স্থানে মেলা জমবে কিনা এ নিয়ে শুরুতে কিছুটা জটিলতা সংশয় ছিল। তবে শুরুর দিনে সে সংশয়ও দূর হয়েছে। কারণ সিআরবি শিরীষতলায় প্রথম দিনেই জমে উঠেছে ‘অমর একুশে বইমেলা–২০২৪’।
সিটি করপোরেশন আয়োজিত এই বই মেলা চলবে ২ মার্চ। মেলা প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে ছুটির দিন সকাল ১০টা শুরু হয়ে এই চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এবার বইমেলার স্থান নিয়ে লালদীঘি মাঠসহ আরো কয়েকটা জায়গার প্রস্তাব এসেছিল। আমি সিআরবি শিরীষতলার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এতে অনেকে নাখোশ হয়েছিলেন। কিন্তু আজকে এই বিপুল সমাগম দেখে নাখোশ হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। যেখানেই মেলা করেন না কেন বইপ্রেমীরা সেখানে যাবেন। আমি আশা করছি, এবারের বইমেলা প্রাণবন্ত হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, বইমেলার সাথে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য জড়িত। বই মেলাকে সফল করতে মেলার নিরাপত্তার জন্য আমরা সচেষ্ট থাকব।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বই মেলার উপযোগী কোন খাস জমি পাওয়া গেলে সেখানে বই মেলাসহ বিভিন্ন আয়োজনের জন্য স্থায়ীভাবে ইনশাল্লাহ বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম মেলার আয়োজন করায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
চসিকের আয়োজনে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতায় এবার মেলায় ৪৩ হাজার বর্গফুটের সুবিশাল সিআরবির শিরীষ তলার মাঠ জুড়ে মোট ১৫৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ডাবল স্টল ৭৮টি এবং সিঙ্গেল স্টল ৭৭টি। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকার সৃজনশীল অভিজাত প্রকাশনী সংস্থাগুলো মেলায় অংশ নিচ্ছে। তাদের স্টলও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের মোট ৯২টি প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশ নিচ্ছে।
বাতিঘর, প্রথমা, অন্যধারা, সাহিত্য বিচিত্রা, মূর্ধন্য, লাবণ্য, তৃতীয় চোখ, আবির প্রকাশন, গলুই, বলাকা, খড়িমাটি, শব্দশিল্প, কাকলী, কালধারা, বিদ্যানন্দ, কথাপ্রকাশ, নন্দন, শৈলী প্রকাশন, বলাকা, ইতিহাসের খসড়া, রাদিয়া, চন্দ্রবিন্দু, গল্পকার, প্রজ্ঞালোক, নালন্দা, শিশুপ্রকাশ, প্রতীক, আদিগন্ত, ভোরের কাগজ প্রকাশন, শিখা, সত্যয়ন, নন্দন, শালিক, কথাবিচিত্রা, কথা প্রকাশ, আফসার ব্রাদার্স, বাবুই, গাজী, কিডস পাবলিকেশন, হাওলাদার, ফুলঝুড়ি, নাগরী, ফুলকি, জ্ঞানকোষ, কিংবদন্তি, প্রথমা, দ্বিমত, সালফি, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, মাইজভাণ্ডারী প্রকাশন, আলোকধারা বুকস, লাল সবুজসহ বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এব মধ্যে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি বিদ্যানন্দের স্টলটিকে ঘিরে পাঠক দর্শকদের কৌতূহল দেখা গেছে। সেখানে মেয়েদের ও ছেলেদের বই পড়ার স্থান রাখা হয়েছে।
মেলায় ঢুকতে হাতের বামে সড়কের একপাশে রয়েছে চসিকের তত্ত্বাবধানে, নগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহযোগিতায় ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। মেলায় শিশু কর্নারে বিভিন্ন রাইড, মুখরোচক খাবারের স্টল, মৃৎশিল্প সামগ্রীর স্টল ছিল জমজমাট।
এবারের বইমেলার বাজেট ৫০ লাখ টাকা। এবারও জাতীয় জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হবে।
প্রতিবারের মতো এবারও মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’, ‘লেখক আড্ডা’, ‘নারী কর্নার’, ‘শিশু কর্নার’ এবং ওয়াইফাই জোন। এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। মেলা কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে।
বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় থাকবে- রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমি উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় দেশের প্রথিতযশা লেখক-কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।
এছাড়াও মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, রবীন্দ্র-নজরুল- লোক সঙ্গীত, সাধারণ নৃত্য, লোকনৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, দেশের গানের আয়োজন করা হবে। মেলাকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মী ও বইপ্রেমীদের নিয়ে বিভিন্ন উপ-পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হবে।