রমজানকে কেন্দ্র করে যারা দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করবে তাদের বিরুদ্ধে নাগরিক উদ্যোগ রাজপথে থাকবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উত্তর কাট্টলীস্থ তাঁর নিজ বাসভবনে নাগরিক উদ্যোগের এক সভায় উক্ত আহবান জানান সুজন।
সভার শুরুতে পর পর চারবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী পরিষদ এবং সংসদ সদস্যদের অভিনন্দন জানান খোরশেদ আলম সুজন। নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। নাগরিক উদ্যোগ নবগঠিত সরকারকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সকল প্রকার সহযোগিতা করবেন বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়া দুইজন পূর্ণমন্ত্রীকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন নাগরিক উদ্যোগ।
এসময় সুজন বলেন, সরকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায় হচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন সাবরেজিস্ট্রার অফিস, এসিল্যান্ড অফিস ও তহসিল অফিসসমূহ। সাবরেজিস্ট্রার অফিস, এসিল্যান্ড অফিস ও তহসিল অফিসের অবাধ দুর্নীতি এবং ঘুষ বাণিজ্যের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারন জনগন। এসব অফিসকে সত্যিকার অর্থে হয়রানি মুক্ত করে জনগনের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাংখিত সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জোরালো ভূমিকা পালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট উদাত্ত আহবান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন নগরীর সেবাসংস্থাসমূহ যেমন: গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং ওয়াসার বিরুদ্ধে এখনও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বছরের পর বছর পার হলেও এসব অভিযোগের কোন সুরাহা হয় না। সাধারন নাগরিকগণ এসব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নাগরিক সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই সেবাসংস্থাসমূহকে জনগনের সেবায় আরো আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে দ্রব্যমূল্য জনগনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে সাধারণ ক্রেতাগণ উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তিনি। সরকারের এ প্রচেষ্টাকে সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
পাশাপাশি সারাবছর দ্রব্যমূল্য জনগনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য প্রতিটি জেলায় জেলায় ক্রেতা সাধারণ, ব্যবসায়ী এবং সরকারী সংস্থার সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী বাজার মনিটরিং কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান নাগরিক অধিকার আদায় নিয়ে সোচ্চার এই নেতা। সুজন আরো বলেন, আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই ভেজাল পণ্যের মজুদ এবং ভেজাল খাদ্য উৎপাদনে সক্রিয় হয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। তারা নগরীর বাহিরে বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে তাদের ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং বিপণনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এসব ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং বিপণনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
এছাড়া ভেজাল খাদ্য উৎপাদনের খবর পেলে সাথে সাথে স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ জানান সুজন। পাশাপাশি আসন্ন রমজানে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন, বিপণন এবং মজুতদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকারও ঘোষণা দেন তিনি। নগরীর খেলার মাঠগুলোকে উদ্ধার করে প্রকৃত ক্রীড়া প্রেমীদের নিকট ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান খোরশেদ আলম সুজন। জেলা প্রশাসকের মহতী এতোসব উদ্যোগের মাঝেও দেখা যাচ্ছে যে, নগরীর বিভিন্ন খেলার মাঠকে বানিজ্যিকভাবে মেলার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে ক্রীড়ামোদীরা মাঠের অভাবে খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই খেলার মাঠকে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার না করার যে উদ্যোগ, সে উদ্যোগ পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, নগরীর বিভিন্ন সরকারি স্কুল কলেজের মাঠ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এসব মাঠ খেলার উপযোগী করে গড়ে তুলে ক্রীড়ামোদী ছাত্র যুবকদের শরীর গঠনের কাজে ব্যবহার করা গেলে তরুনদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে এবং তরুন সমাজ বিভিন্ন ধরণের খারাপ আসক্তি থেকে মুক্তি পাবে বলে মত প্রকাশ করেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ এবং সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ছালেহ আহমদ জঙ্গী, নুরুল কবির, শিশির কান্তি বল, মোরশেদ আলম, জমির উদ্দিন মাসুদ, মো. শাহজাহান, জাহাঙ্গীর আলম, সমীর মহাজন লিটন, মো.ওয়াসিম, শহীদুল আলম লিটন, রকিবুল আলম সাজ্জী, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি এম. ইমরান আহমেদ ইমু, সাজ্জাদ হাসান মনু, মনিরুল হক মুন্না, তৌহিদুল ইসলাম, ফরহাদ বিন জামাল শুভ, নুর নবী মারুফ, আনন্দ আচার্য্য, হাসানুজ্জামান চৌধুরী তানিম, অসিত দেব হৃদয়, ফারহানা শারমিন রশনী প্রমুখ।