সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমে সোমবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে একটি খবর। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, দেশের বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। প্রমাণ হিসেবে এই অভিনেতার পুরোনো একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করা হচ্ছে।
তবে বিষয়টি একেবারেই গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দিলেন প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন চাঁদ। সমকালকে তিনি বলেন, আমার বাবা ধর্মান্তরিত হননি। এই গুজব কোথা থেকে ছড়াল জানি না। আমাকে বেশ কয়েকজন ফোন দিয়েও জানতে চাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশ বিব্রত একই সঙ্গে বিরক্ত। এসব গুজব কারা ছড়ায়, কিভাবে ছড়ায় আমি ঠিক জানি না।
মিঠুন আরও বলেন, ‘আমার মা মুসলিম ছিলেন। তবে বাবা তার সনাতন ধর্মই পালন করছেন। যারা এমন খবর ছড়াচ্ছেন তারা ঠিক কাজ করছেন না। বাবার মতো একজন অভিনেতার নামে এমন গুঞ্জন গ্রহণযোগ্য নয়। আমি সবার কাছে অনুরোধ করছি, না জেনে কোনো তথ্য ছড়াবেন না।’
এর আগেও একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবীর মিত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়েছিল। যা সবই পরে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। এবারও অভিনেতাকে ঘিরে নতুন গুজব ছড়িয়ে পড়ায় পরিবারের মানুষও বেশ বিরক্ত হয়েছেন।
তিনি জানান, বাবা অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। সারাদিন বাসায় সময় কাটে। নানারকম অসুখ বাসা বেঁধেছে শরীরে।নতুন করে যোগ হয়েছে স্মৃতি ভুলে যাওয়ার সমস্যা। প্রায়ই তিনি কিছু মনে করতে পারেন না। বাবার শ্রবণশক্তিও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। উচ্চস্বরে কথা বললে উত্তর দিতে পারেন। হৃদরোগের জটিলতাও রয়েছে।
১৯৭১ সালে এইচ আকবরের ‘জলছবি’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করেন প্রবীর মিত্র। এরপর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পর্দায় নায়ক চরিত্রে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও সমানভাবে আলো ছড়িয়েছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’-এর মতো সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় দেখা গেছে প্রবীর মিত্রকে। এ ছাড়া ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে ছিলেন তিনি। এ কারণেই অনেকে তাকে ঢাকাই সিনেমার ‘রঙিন নবাব’ বলে ডাকেন।
তার অভিনীত অনান্য উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সীমার’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘অঙ্গার’, ‘পুত্রবধূ’, ‘নয়নের আলো’, ‘চাষির মেয়ে’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘আবদার’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়ান’, ইত্যাদি।
প্রবীর মিত্র চার শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও আজীবন সম্মাননা। তার আলোচিত সিনেমার মধ্যে আছে— তিতাস একটি নদীর নাম, পুত্রবধূ, নয়নের আলো, জলছবি, জয় পরাজয়, রঙিন সিরাজউদ্দৌলা, তাসের ঘর, জন্ম থেকে জ্বলছি, বড় ভালো লোক ছিল, দহন, দুই পয়সার আলতা, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, হারানো সুর ইত্যাদি।
কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। আর ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
১৯৪০ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুর জেলার নতুন বাজারে জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তবে তার শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)।
ব্যক্তিজীবনে অজান্তা মিত্রকে বিয়ে করেছিলেন প্রবীর মিত্র। তার স্ত্রী ২০০০ সালে মারা যান। অভিনেতার সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা হলেন মিঠুন মিত্র, ফেরদৌস পারভীন, সিফাত ইসলাম, সামিউল ইসলাম। এর মধ্যে সামিউল মারা গেছেন।