বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেছেন, ’আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে মানবিক সংকট এবং প্রতিক্রিয়া আজকের বিশ্বে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকতা রাখে। ন্যায়বিচারের রক্ষক হিসাবে আমরা নিপীড়িতদের সহায়তা প্রসারিত করবো, তবে আমাদের বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করে নয়। ন্যায়পরায়ণতা, ন্যায্যতা এবং সহযোগিতা বজায় রাখার মাধ্যমে আমরা বিশ্বমঞ্চে আমাদের অবস্থান সুরক্ষিত করি’। আসুন আমরা এমন আইন প্রণয়ন করি, যা একটি টেকসই বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে এবং সংঘাতের সময় আইন সুরক্ষা এবং সমাধান প্রদান করে।’
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ অডিটোরিয়ামে ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে আইন’প্রতিপাদ্য নিয়ে আইন সম্মেলনের প্রথম দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ’শরণার্থী আইন এবং স্থানচ্যুতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সহানুভূতি অবশ্যই কর্মে রূপান্তরিত করতে হবে। আসুন আমরা এমন আইনের পক্ষে ওকালতি করি যা নির্যাতিতদের আশ্রয় দেয়, তাদের মর্যাদা এবং নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের জীবন পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক আইন অত্যন্ত তাৎপর্য ধারণ করে। ন্যায়বিচারের রক্ষক হিসেবে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা। পাশাপশি আমাদের আইনি কাঠামো আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ আইন, কেবল বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, পরবর্তী প্রজন্ম আমরা যে উত্তরাধিকার রেখে যাচ্ছি তাদেরও অধিকার প্রতিষ্ঠা বা রক্ষা করা। তাই টেকসই বাংলাদেশ গড়াতে সহযোগিতা করে এমন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একধরনের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। বিভিন্ন ধরনের আইন সেই শৃঙ্খলা মেনে চলতে সাহায্য করে থাকে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানবজীবনে বাহ্যিক পরিবর্তন করে না বরং মানব সমাজের সামগ্রিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। সারাবিশ্বে আইনের শাসনে পরিবর্তন এসেছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আইনের শাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আইনের শাসন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সমাজে গণতন্ত্রের চর্চা অনিবার্য।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমি আশা করি, দেশ ও জাতি এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য আজকের এই আইন সম্মেলন ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
সম্মেলনে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুকের সভাপতিত্বে ও চবি আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. রকিবা নবীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক বোরহান উদ্দিন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহীন চৌধুরী এবং মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসেবে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে এবং সিনিয়র জেলা ও সেশন জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় আইন সম্মেলনে দেশি-বিদেশি প্রায় ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৭০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। এছাড়াও ৩০জন প্যানেল স্পীকার থাকবেন। এটি ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।
-মুক্তি৭১/জেএ