শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। সাকিব আল হাসান আস্থা রাখেন তানজিদ হাসান তামিমের উপর। এদিন অভিষেক হওয়া তরুণ এই পেসার দিয়েছেন ৫ রান। বাংলাদেশ জয় পায় ৬ রানে। ২০১২ সালের পর এবারই প্রথম এশিয়া কাপে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ।
কলম্বোতে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক, স্ট্রাইক প্রান্তে রোহিত শর্মা। চাপটা হয়ত একটু বেশিই অনুভব করছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। ওয়াইড দিয়ে শুরু করা তরুণ এই পেসার পরের দুই বলের মাঝে দিয়েছেন আরও একটি ওয়াইড। তবে নিজের দ্বিতীয় বৈধ বল করেই উইকেটের দেখা পেলেন তানজিম সাকিব। ডানহাতি এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে একটু দূরে থেকে খেলতে চেয়েছিলেন রোহিত। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক।
কভারে থাকা এনামুল হক বিজয় সহজ ক্যাচ লুফে নিলে শূন্য রানে ফিরে যেতে হয় রোহিতকে। তিনে নামা তিলকেও টিকতে দেননি তানজিম সাকিব। অভিষেকের দিনে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সাকিবের তৃতীয় বলটি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিলক, সেটি বেরিয়েও যায়। পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করেছিলেন পরের বলেও। এবার অবশ্য বল বেরিয়ে যাওয়ার পর স্টাম্পে আঘাত করে। ফলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় ৫ রান করা এই ব্যাটারকে।
১৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দারুণভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন লোকেশ রাহুল ও গিল। শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন থাকেন তারা দুজন। বাংলাদেশ যখন উইকেটের খোঁজে মরিয়া তখন ব্রেক থ্রু এনে দেন শেখ মেহেদী। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের বলে মিড উইকেটে থাকা শামীম হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাহুল। ভারতের এই উইকেটকিপার ব্যাটার করেছেন ১৯ রান। ডানহাতি এই ব্যাটার ফেরার পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন গিল।
এদিকে রাহুল ফেরার পর ইশান কিশানকে থিতু হতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন ৫ রান করা ইশান। তবে সূর্যকুমার যাদবকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেণ গিল। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৪৫ রান। তাদের জমে উঠা জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন সূর্যকুমার। ডানহাতি এই ব্যাটার করেছেন ২৬ রান।
রান তাড়ায় দারুণ এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন গিল। সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন তরুণ এই ওপেনার। বাংলাদেশের বিপদ বাড়ানোর আগে গিলকে ফেরান মেহেদী। ডানহাতি এই স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে টেনে মারতে গিয়ে লং অফে থাকা হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১২১ রানের ইনিংস খেলা গিল। শার্দুলকে জ্বলে উঠার আগে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ।
দ্রুত রান তুলতে থাকা অক্ষরকেও নিজের শিকার বানিয়েছেন তিনি। বাঁহাতি এই পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন ৪২ রান করা অক্ষর। এরপর কেউই ব্যাট হাতে দায়িত্ব নিয়ে ভারতকে জেতাতে পারেননি। শেষ ওভারে মোহাম্মদ শামিকে রান আউট করে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে মুস্তাফিজ তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া তানজিম সাকিব ও মেহেদি দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি বাংলাদেশের ওপেনাররা। রানের খাতা খোলার আগেই মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়েছেন লিটন দাস। সিমে ফেলে শামির সুইং করে ভেতরে ঢোকানো বলের লাইন বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। ফলে শূন্য রানেই ফিরে যেতে হয় তাকে।
এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। তিনি ১২ বলে ১৩ রান করে শার্দুল ঠাকুরের ক্রস সিম ডেলিভারিতে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে ১১ বলে ৪ রান করে আউট হয়েছেন বিজয়। ফলে ২৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদেই পড়েছে টাইগাররা।
এদিন প্রমোশন দিয়ে পাঁচ নম্বরে নামানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। যদিও তার জায়গায় নিয়মিত ছিল তাওহীদ হৃদয়। শুরুতে দেখে শুনে খেললেও ভারতের ফিল্ডারদের হাতে একই ওভারে দুইবার জীবন পেয়েছেন মিরাজ। দশম ওভারের তৃতীয় বলে শার্দুলের হাফ ভলিতে স্কয়ার মিড উইকেটে মিরাজের ক্যাচ ফেলেন অভিষিক তিলক ভার্মা। ২ বল পর শার্দুলের শর্ট বল লেংথ ডেলিভারিতে সেকেন্ড স্লিপে ক্যাচ ছেড়েছেন সূর্যকুমার যাদব। অক্ষর প্যাটেলের বলে সেই সেকেন্ড স্লিপেই ২৮ বলে ১৩ রান করে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মিরাজ।
সাকিব অবশ্য একপ্রান্ত আগলে রেখে ধীরস্থির ইনিংস খেলেছেন। ৬৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। এর মধ্যে অক্ষর প্যাটেলকে সুইপ করে ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান সাকিব। এর এক বল পর মিড উইকেট দিয়ে আরেকটি ছক্কা মারেন সাকিব। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তরুণ ব্যাটার হৃদয়। ১১১ বলে হৃদয়কে নিয়ে সাকিব পঞ্চম উইকেটে যোগ করেছেন ১০০ রান। এরপর নিজের ইনিংস বেশিদূর এগোতে পারেননি সাকিব। ব্যক্তিগত ৮০ রানে। শার্দুলের বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ৩টি ছক্কা ও ৬টি চারে সাজানো ছিল সাকিবের ৮৫ বলের ইনিংসটি।
সাকিবের বিদায়ের পর শামীম পাটোয়ারির দায়িত্ব ছিল উইকেটে থিতু তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গ দেয়া। তিনি সেই দায়িত্ব পালন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। এই বাঁহাতি ব্যাটার ফিরে গেছেন মাত্র ১ রান করে। রবীন্দ্র জাদেজার বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন তিনি। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত রিভিউ করেছিলেন তিনি। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বলের হিটিং ও ইমপ্যাক্ট ছিল স্টাম্প বরাবর।
শামীম ফিরলে নাসুম আহমেদকে নিয়ে ৭৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন হৃদয়। অবশ্য এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। মোহাম্মদ শামির করা ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে তিলক ভার্মাকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ফলে শেষ হয়েছে ৮১ বলে ৫৪ রানের সম্ভাবনাময় ইনিংসের।
শেষদিকে নাসুম ও শেখ মেহেদী বাংলাদেশের রান বাড়িয়েছে। তুলনামূলক আগ্রাসী ছিলেন নাসুম। তিনি ৪৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। তার ইনিংস জুড়ে ছিল ১টি ছক্কা ও ৬টি চারের মার। এরপর মেহেদী ও তানজিম হাসান সাকিব মিলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬৫ পর্যন্ত নিয়ে যান। মেহেদী ২৯ ও সাকিব অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ২৬৫/৮ (৫০ ওভার) (সাকিব ৮০, হৃদয় ৫৩, নাসুম ৪৪, মেহেদী ২৯*; শার্দুল ৩/৬৫, শামি ২/৩২)
ভারত – ২৫৯/১০ (৪৯.৫ ওভার) (গিল ১২১, অক্ষর ৪২, সূর্যকুমার ২৬, রাহুল ১৯; মুস্তাফিজ ৩/৫০, তানজিম সাকিব ২/৩২, শেখ মেহেদী ২/৫০)