আওয়ামী লীগ অজেয়, অবিনাশী দল। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে এই দল ক্ষমতার ভেতরের এবং এমনকি বাইরেরও অনেক শক্তির চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কম চেষ্টা হয়নি। কিন্তু যতবারই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে ততবারই আওয়ামী লীগ যেন ফিনিক্স পাখির মতই ছাই ভস্ম থেকে জেগে উঠেছে এবং দ্বিগুণ-বহুগুণ শক্তিশালী হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ভারতের কংগ্রেস এবং পাকিস্তানের মুসলিম লীগের চাইতেও রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব বা সাফল্য অধিক। কংগ্রেস (১৮৮৫) অবিভক্ত ভারতের প্রাচীনতম ও প্রথম রাজনৈতিক দল; মুসলিম লীগ (জন্ম ১৯০৬) অবিভক্ত ভারতের দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল। যে তুলনায় আওয়ামী লীগ অর্বাচীন দল। তবে আওয়ামী লীগের বয়সও কম হলো না, ৭৪ বছর চলছে এখন দলটির বয়স। কংগ্রেসের ১৩৮ বছর পর ও মুসলিম লীগের ১১৭ বছর পর আওয়ামী লীগের জন্ম। সুতরাং আওয়ামী লীগ কংগ্রেসের ১৩৮ বছর পর ও মুসলিম লীগের ১৭৭ বছর পর যার জন্ম। আওয়ামী লীগের যখন জন্ম হয়, ততদিনে ভারত উপমহাদেশ ১৯৪৭ সালে ভাগ হয়ে যথাক্রমে পাকিস্তান (১৪ আগস্ট ’৪৭) ও ভারত (১৫ আগস্ট ’৪৭) দু’টি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সুতরাং আওয়ামী লীগের জন্মসনকে (১৯৪৯) ভিত্তি বছর হিসেবে ধরে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে কর্মকৃতিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের চেয়ে আওয়ামী লীগের সাফল্যের পাল্লাই ভারি। দুটি দলই একাধিকবার ভেঙেছে এবং বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। পাকিস্তান দেশটাও ভেঙে গেছে। মুসলিম লীগ তো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কংগ্রেস ১৯৬৯ সালে ভেঙে গেলে আর কখনো এক হতে পারেনি। ক্রমান্বয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বিশিষ্ট নেতারা একে একে কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গেও বর্তমানে কংগ্রেসের একটি খ-িত দল মমতার তৃলমূল কংগ্রেস বর্তমানে সেখানে ক্ষমতায় আছে।
সে তুলনায় আওয়ামী লীগ দু’বার ভাঙলেও দু’বারই জোড়া লেগেছে; ঘরের লোকেরা ঘরে ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সামরিক ও স্বৈরাচারি শাসনের কারণে ২৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। এরপর দু’দফা আরো ১০ বছর বিরোধী দলের আসনে বসে ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে সক্ষম হয় এবং সেই থেকে অদ্যাবধি ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে দলটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি নতুন দেশ বাংলাদেশÑযেখানে আমরা এখন বসবাস করছিÑ সে দেশটি প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ অন্যন্য অনন্য গৌরবের অধিকারী হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এখন সুদিন। তবে দুর্দিনও কম দেখেনি দেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম এ দলটি। ২০০৮ সাল থেকে উপর্যুপরি তিন টার্ম ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বেশ লম্বা সুদিন দেখছে আওয়ামী লীগ। তবে এই সুদিন দেখে আত্মতৃপ্ত হয়ে সুখের সাগরে গা ভাসিয়ে দিলে কিন্তু বিপদ। কারণ সুদিন কখন দুর্দিনে বদলে যায় সেটা কেউ বলতে পারে না। ইতিপূর্বে যতবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুসময় এসেছিলো, ততবারই ভাগ্যলক্ষ্মী আওয়ামী লীগকে ছেড়ে যেতে বিলম্ব করেনি। স্বাধীনতার পরও আওয়ামী লীগে জোয়ার এসেছিলো কিন্তু সাড়ে তিন বছর বছরের মধ্যেই ভাটার টানে আওয়ামী লীগের ভরা নদী হাজা মজা শীর্ণ জলধারায় পরিণত হয়। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবার সপারিষদ শাহাদাত বরণ করলে আওয়ামী লীগ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী নদীতে প্রথম জোয়ার আসলে ৭০-এর নির্বাচনে নৌকা ভেসে ওঠে। সেই জোয়ারে পাকিস্তান ভেসে গিয়েছিলো। তারপর মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ওপর চরম দুর্যোগ নেমে আসে। কারণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম গড়ে উঠেছিলো এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, তাই আওয়ামী লীগই ১নং শত্রুতে পরিণত হয়েছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর। অবশ্য মুষ্টিমেয় রাজাকার, আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটি ছাড়া গোটা বাঙালি জাতিই পাকিস্তানি বাহিনীর শত্রুতে পরিণত হয়েছিলো।
আওয়ামী লীগের জোয়ার দেখে অনেক সুখের পায়রা ডালে ডালে এসে বাসা বাঁধে। আবার ভাটার টান দেখলে চিড়িয়া ফুরুৎ; আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য কোন দলে গিয়ে ভিড় করে তারা। এমন ঘটনা অতীতে বারে বারে ঘটেছে।
১৯৬৯-এ যখন প্রথম আওয়ামী লীগে জোয়ার আসলো, বঙ্গবন্ধু আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে জনতার ভালোবাসায় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হলেন, তখন উকিল, ব্যারিস্টার, অধ্যক্ষ, অধ্যাপক, অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও সেনা কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ীদের মধ্যে দলে দলে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পড়ে গিয়েছিলো। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক শাহাদাতের পর ৬৯-এ আওয়ামী লীগে যোগদানকারী বহুরূপীরা বোল ও ভোল পাল্টে ভিড়ে গেলেন প্রথমে মোশতাকের সঙ্গে, পরে জিয়ার দলে। চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কলামিস্ট ইদরিস আলমের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আমার। তিনি বলতেন রসুলের মক্কা বিজয়ের আগের ও পরের মুসলমানের মধ্যে অনেক তফাৎ। মক্কা বিজয়ের আগে যাঁরা রসুলের কথায় ঈমান এনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছিলেন, তাঁরা সাচ্চা মুসলমান। তখন পরিস্থিতি এত প্রতিকূল ছিলো যে, কাফেরদের অত্যাচারে রসুলকে হিজরত করে মদিনা চলে যেতে হয়েছিলো। অনেক যুদ্ধে কাফেরদের পরাজিত করে রসুল যখন চূড়ান্ত আঘাত হেনে বিজয়ীর বেশে বীরদর্পে মক্কা প্রবেশ করলেন তখন ইসলামের জয়জয়কার। তখন অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে এগিয়ে আসলো। এদের ইসলাম ধর্ম কবুল করার মধ্যে যেটা ফাঁকি সেটা হচ্ছে এরা ইসলামের বিজয়কালের মুসলমান। অনুকূল পরিবেশে মুসলমান শিবির যোগ দিয়েছিলো। আওয়ামী লীগে যারা ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর, স্বাধীনতার পর ৭২-এ এবং ৯৬ ও ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ভরা জোয়ারের সময় দলে যোগ দিয়েছিলো, তাদেরকে মক্কা বিজয়ের পরের মুসলমাদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। পঞ্চাশের দশককে ৪৯-এ জন্ম নেয়া আওয়ামী লীগের শৈশব-কৈশোরকাল বলা যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় যাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অভিযাত্রায় আস্থা জ্ঞাপন করে দলের সদস্য হয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মক্কা বিজয়ের পূর্বের মুসলমানের উদাহরণ প্রযোজ্য হতে পারে। ৫৮ থেকে ৬১ পর্যন্ত আইয়ুবের সামরিক শাসনকাল। সেই সময়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিলো। গ্রেফতার ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। সেই দুর্দিনে যাঁরা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন, তাঁরাই প্রকৃত আওয়ামী লিগার। আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত অনুসারী। ৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দেয়ার পর আওয়ামী লীগের ওপর চরম বিপদ নেমে এসেছিলো। সেই সময় যাঁরা বঙ্গবন্ধুর ওপর ঈমান এনে বা বিশ্বাস স্থাপন করে আওয়ামী লীগ করেছেন এবং ৬ দফাকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাঠে ময়দানে সভা, রাজপথে মিছিল করে স্লোগানে গলা ফাটিয়ে ৬ দফার প্রচার চালিয়েছিলেন, তাঁরাই আওয়ামী লীগের সত্যিকার নেতা, কমী। অর্থা মক্কা বিজয়ের আগের মুসলমানের সঙ্গে তুলনীয়। সেইসব সোনার মানুষেদের কিছুু নাম এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। জহুর আহমদ চৌধুরী, এম এ আজিজ, আবদুল্লাহ আল হারুন, এমএ হান্নান, ডা. ছৈয়দুর রহমান চৌধুরী, এমএ মন্নান, এ কে এম আবদুল মান্নান, মিঞা আবু মোহাম্মদ ফারুকী, এমএ ওহাব, সৈয়দ ফজলুল হক বিএসসি, মানিক চৌধুরী, বিধান কৃষ্ণ সেন, ইসহাক মিয়া, সিরাজ মিয়া, কবি বদন দীদারি, ইদরিস আলম, আশরাফ খান, নুরুল আলম চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ চৌধুরী, শাহ বদিউল আলম, জয়নাল আবেদীন প্রধান, হালিশহর ও হামজারবাগের দুই এজাহার মিয়া, এসএম ইউসুফ, পাথরঘাটার কিন্তু ক্লাবÑখ্যাত সুলতান উল কবির চৌধুরী (বাঁশখালীর সাবেক এমপি), শামসুল আলম, সম্পদ বড়–য়া প্রমুখ। স্থানাভাবে আরো অনেকের নাম উল্লেখ করা সম্ভব হলো না। তাঁরা অথবা তাঁদের সন্তানের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
বলা বাহুল্য শেখ মোজাফফর আহমদ, এমএ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, আমীর হোসেন দোভাষÑএই তালিকার প্রথমে আসবেন।
নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ও শাহ বদিউল এখনো বেঁচে আছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দ কী তাঁদের খোঁজ খবর রাখেন। এজাহার মিয়া ও হারিছদা সহ আওয়ামী লীগের বাগানে ষাটের দশকে ফোটা ফুলের মধ্যে অবশিষ্ট মাত্র চারটি গোলাপ অদ্যাবধি সৌরভ বিলিয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অনেকেই এখন ধনবান, খুঁজলে দু’একজন কোটিপতিও পাওয়া যেতে পারে। তাঁরা কী মাইক এজাহার, হারিছদা, নূর মোহাম্মদ চৌধুরী, শাহ বদিউল আলমদের আর্থিক অবস্থার খোঁজ নেন, প্রয়োজন হলে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেন। যদিও তাঁরা কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী নন। কিন্তু নেতাদের তো একটা দায়িত্ব আছে।
যখন খুব লোকই আওয়ামী লীগ করতেন, তখন উপরে উল্লেখিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা আওয়ামী লীগের ঝা-া হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং পুলিশ ও সরকারের পেটোয়া বাহিনীর আক্রমণ, নির্যাতন এবং অসচেতন মানুষের কটূক্তি, তিরস্কার হাসিমুখে মাথা পেতে নিয়ে নির্ভীক চিত্তে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়েছিলন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে তাঁদেরকে সপরিবারে সম্মান জানানো নগর শাখার নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। তাঁদেরকে ক্রেস্ট, সম্মাননা, মাল্যভূষিত করে ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজপথে শোভাযাত্রা করা দরকার। এমনকি নগদ অর্থও দেয়া যেতে পারে।
কলামিস্ট ইদরিস আলমের মুখে শুনুন : “বদি (শাহ বদিউল আলম)-বদন (বদন দীদারি)-লোহা (বক্সিরহাটের নূর মোহাম্মদ চৌধুরী)Ñসবাইকে একসঙ্গে পাওয়া মুশকিল। এরা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুব নিকটের মানুষ, আপনজন। আজ অনেকেই বঙ্গবন্ধুর কথা বলে মায়াকান্না করেন। খোন্দকারকে সোনার মানুষ বলে যারা একদিন মন্ত্রী হয়েছিলেন আজ তারাই দেখছি নতুন নতুন কথা বলছেন। এদের সম্পর্কে এক বদন যা জানে তা সারা বাংলার মানুষ জানে না। আসলে মুস্কিল হলো এরা সাধারণ মানুষ সত্যিকার অর্থেই সাধারণ। এরা মোটা টাকার বিনিময়ে নমিনেশন পায় না। চাঁদা দিয়ে জনসভার সভাপতি হতে পারে না এবং ঐ একই ধরনের কাজ করে কোন মানপত্রও পায় না। এমনকি দলের প্রথম সারিতে বসার সুযোগও হয় না।
আমিও ওদের দলে। তাই ওদের কথা লিখি। আমাকে গালি দিন। আমি গালাগাল না করে গলাগলি করবো। ওদের দেবেন না। এমন দিনও গেছে অনেক নেতার মায়ের জানাজায় তারা ছাড়া কেউ যায় নি। এমন দিনও গিয়েছে অনেক নেতার আইবুড়োত্ব ঘুচেছে ওদের চেষ্টায়।” (আমরা তখন যুদ্ধে : ইদরিস আলম; প্রজ্ঞালোক প্রকাশনী, ২০১৩, পৃষ্ঠা ৪৯৮)
মহিউদ্দিন চৌধুরী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে আওয়ামী লীগের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিষ্ঠালগ্নের নেতা ও সংগঠকদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিলা পলোগ্রাউন্ডে। শেখ হাসিনা তখনো দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বয়োবৃদ্ধ নেতা অথবা তাদের স্বজনদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা তুলে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সেদিন যাঁদেরকে সম্মান জানিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে মওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী, ইউনুছ খান, মওলানা আবু তাহের, ডা. শামসুল আলম চৌধুরী, মওলানা ছালে জহুর প্রমুখের নাম মনে পড়ছে।
গোড়ার দিকে যাঁরা আওয়ামী লীগ করতেন, তাঁদের মধ্যে ক’জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম আমরা পাই, যাঁরা পরবর্তী জীবনে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, কিংবা তাঁদের সন্তানরা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে কর্মনৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখে দেশজুড়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। কিন্তু তাঁদের খ্যাতিমান ও কীর্তিমান উত্তরপুরুষদের যখন দেখি তাঁরা আওয়ামী লীগ করেন না, নিদেনপক্ষে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগই রাখেন না, তখন ব্যথা পাই। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ গঠন এবং পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামের মাটিতে আওয়ামী লীগকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যাঁরা বিশেষ অবদান রেখেছেন, সে কারণে যদি তাঁদের বংশধরদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়, তাহলে তাঁরা আওয়ামী লীগ ও তাঁদের পূর্ব পুরুষদের জন্য গর্ববোধ করবেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়ে বলতে চাই, ‘পঞ্চাশের দশকের আওয়ামী লীগ নেতাদের জীবিত পুত্রকন্যা, নাতি-নাতনিদের সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রতি বছর দু’একটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করুন। কারণ তাঁরা আওয়ামী লীগের দুর্দিনের সাহসী সৈনিক।
যেমন পাথরঘাটার আশরাফ আলী রোডের মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বি.এ-তিনি বঙ্গবন্ধুর বন্ধু, সতীর্থ, বিখ্যাত ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী তাঁরই পুত্র। কবিরউদ্দিন বি.এ-তাঁর পুত্রগণ একেকজন চট্টগ্রামের একেকটি রতœ বিশেষে। জ্যেষ্ঠ পুত্র আইয়ুব কাদেরী সিএসপি-সাবেক সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা; দ্বিতীয় পুত্র কর্ণেল আজগর কাদেরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিস কাদেরী, নওশাদ কাদেরী (ব্যবসায়ী), আরিফ কাদেরী (এমডি-ইউসিবিএল), আশফাক কাদেরী (ব্যবসায়ী); বাঁশখালী নিবাসী মাহবুব-এ-আনোয়ারÑতিনিও বঙ্গবন্ধুর বন্ধু, সতীর্থ। তিনি রেকিট এন্ড কোলম্যানের কান্ট্রি চিফ ছিলেন। তাঁর দু’পুত্রই কৃতী। প্রথম রাহবার-এ আনোয়ার, তিনিও রেকিটের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক ছিলেন। কনিষ্ঠ পুত্র আবরার-এ-আনোয়ার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মালয়েশিয়ার প্রধান হিসেবে সেখানে কর্মরত আছেন। বুলবুল স্টোরÑখ্যাত শিল্পপতি ইউসুফ টেক্সটাইল ও সুলতানা জুট মিলের মালিক ইউসুফ মিয়াও বঙ্গবন্ধুর বন্ধু ছিলেন। আওয়ামী লীগের অন্যতম আর্থিক যোগানদাতা ছিলেন তিনি। তাঁর পুত্র মুরাদ। আবিদর পাড়ার সুলতান কন্ট্রাক্টরও আওয়ামী লীগের অন্যতম আর্থিক যোগানদাতা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রিয়পাত্র ছিলেন। আমীর হোসেন দোভাষের পুত্র আবদুল লতিফ দোভাষ ও আবদুর রহমান দোভাষ আওয়ামী লীগ করতেন। কিন্তু দু’জনই আজ পরপারে। এখন নবী দোভাষ আছেন, রাজনীতির সাথে তাঁর সং¯্রব নেই, পুরোদস্তর ব্যবসায়ী তিনি। বাচনি বাপের (আমীর হোসেন দোভাষ) নাতি বদরপাতির আনোয়ার হোসেন মামুন (সাবেক কমিশনার) আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। মামুন অকাল প্রয়াত। তাঁর ছোট ভাই নজরুল ইসলাম বাহাদুর বাংলাবাজারে অভিবাসিত হয়ে বর্তমানে পাঠানটুলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর। বাহাদুর সম্ভবত মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য। বাংলাবাজারের মুসলিম লীগ নেতা জলিল চৌধুরীর নাকের ডগায় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি গড়ে তুলেছিলেন ত্রিরতœ-বজল মিয়া, বালির বাপ ও আবুল খায়ের চৌধুরী; চানবালি ঘাটের ইজারাদার আমীর হোসেন দোভাষকে নিয়ে একটা চতুর্ভুজ তৈরি হয়েছিলো। বাংলাবাজারের বজল মিয়ার পুত্র রফিক আহমদ লায়ন জেলার প্রাক্তন গভর্ণর, উন্নয়ন সংগঠন ‘মমতা’র প্রধান নির্বাহী তিনি। বাংলা বাজারের বালির বাপ অর্থাৎ নুরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র আবু তাহের জিইসি মোড়ের কিছুটা দক্ষিণে ‘প্যাভিলিয়ন’ নামে একটি চীনা রেস্তোরাঁর মালিক। ‘লন্ডন সমশু’Ñখ্যাত ডা. শামসুল আলম চৌধুরীর পুত্র কানাডা প্রবাসী আবদুস সালাম, যিনি ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আদায়ের অন্যতম উদ্যোক্তা। অধ্যাপক মওলানা নুরুল ইসলাম, চৌধুরী এনজি মাহমুদ কামাল, এমএ গণি, তারিক আহমদ চৌধুরী, ইউনুছ খান, মওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী, মওলানা ছালে জহুর, মওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদীর উত্তর পুরুষদের কথাও উল্লেখ করা যায়। বাদুরতলার খড়ম ছালেহ’র ভ্রাতুষ্পুত্র চকবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। আলকরণের এমইউসি মোহাম্মদ ছালেহ’র জ্যেষ্ঠ পুত্র সাবেক ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা তারেক সোলেমান সেলিম অকালে পরলোকগমন করেছেন; তাঁর অন্য ছেলেরাও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী। হামজারবাগের এজাহার মিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান তাঁর পিতার নামে হামজারবাগে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা এজাহার মিয়া নিবাস’ নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। মুরাগনগরের কবি বদন মিয়া দীদারির পুত্র বহুদিন বিদেশে থেকে বর্তমানে দেশে আছেন। বদন দীদারির নাতিও আওয়ামী লীগের একজন নবীন কর্মী। হালিশহরের এজাহার মিয়ার এমএ আজিজ ও চান্দগাঁওর ইউনুছ খানের খালাতো ভাই। তিনি মাইক ব্যবসায়ী, কিন্তু তাঁর মাইকটি আওয়ামী রাজনীতির প্রচারেই বেশি কাজে লাগিয়েছেন তিনি। তাঁর ছেলেরাও আওয়ামী রাজনীতির ঘোর সমর্থক।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা আর একটা কাজ করতে পারেন, সেটা হচ্ছে এমএ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, শহীদ শেখ মোজাফফর আহমদ, আমীর হোসেন দোভাষ, আবদুল্লাহ আল হারুন, এমএ মান্নান, শহীদ মুরিদুল আলম, ইদ্রিস বি কম, এ কে এম আবদুল মান্নান, সৈয়দ ফজলুল হক বিএসসি, এম এ ওহাব- এইসব নেতাদের কবর সংস্কার (পাকা) করে সেখানে ফলক স্থাপন করে তাদের সম্পর্কে কিছু কথা লিখে রাখতে পারেন। মানুষ যাতে স্মৃতিফলক পড়ে নেতাদের সংগ্রামী জীবনী এবং দল ও দেশের জন্য তাদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারে।
এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে। সেটা হলো আওয়ামী লীগ সমর্থক বা আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরাও কী সম্মান পেতে পারেন না। বুদ্ধিজীবীরা সরাসরি আওয়ামী লীগের সদস্য না হয়েও এই দলটির বিকাশে এবং দুঃসময়ে তাদের লেখনি দিয়ে সৃজনকলা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দেয়ার পর, যতদিন পর্যন্ত ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মিয়া ৬ দফা সমর্থন করেননি, ‘মুসাফির’ ছদ্মনামে লেখা রাজনৈতিক কলামে তাঁর ক্ষুরধার কলম দিয়ে ৬ দফার সমর্থনে যুক্তিতর্ক দিয়ে লেখনি আরম্ভ করেননি এবং সারাদেশে ৬ দফার সমর্থনে অনুষ্ঠিত সভা-সমিতি ও বক্তৃতা বিবৃতির সংবাদ ইত্তেফাকের পাতায় ফলাও করে ছাপা শুরু করেননি, ততদিন পর্যন্ত ৬ দফার পালে বাতাস লাগেনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের ওপর যেভাবে আক্রমণ শুরু করেছিলো, তাতে বাড়িঘরেও টেকা দায় হয়ে পড়েছিলো। সারাদেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এমনি ভয়ার্ত পরিবেশ শুধু চারজন বুদ্ধিজীবীর কণ্ঠই সরব হয়ে উঠেছিলো। তাঁরা হচ্ছেন-আবদুল গাফফার চৌধুরী, ড. মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির ও আবেদ খান। শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতার করে নির্যাতনও চালানো হয়েছিলো। সেদিন বুদ্ধিজীবীদের নির্ভীক কণ্ঠ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ঘর থেকে বের হতে পারতেন কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ ভাষণ করার যথেস্ট কারণ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংকটে বুদ্ধিজীবীদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা অবগত আছেন বলেই তিনি বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে দলের জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে নিয়মিত তাঁদের মতামত জানার ও শোনার জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সেজন্যই তো চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাত সমাজবিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. অনুপম সেন এবং অধ্যক্ষ ড. প্রণব বড়–য়া আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হতে পেরেছেন। কিন্তু চট্টগ্রামে মহানগর আওয়ামী লীগের যে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে সাংবাদিক লেখক বুদ্ধিজীবীদের কোন স্থান হয়নি; শুধু প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের ঠাঁই হয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা সরাসরি দলীয় কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করেন না, কিন্তু তাঁদের কলমের লেখনি দ্বারা অথবা বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে একই কাজই তো করেন তাঁরা।
বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে সমাজ থেকে অন্ধত্ব, কূপম-ুকতা, কুসংস্কার সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদ, ফতোয়াবাজি নির্মূল করে সমাজকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। সেজন্য আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা ছাড়া তাদের সামনে অন্য কোন পথ খোলা থাকে না। বিএনপি, জামায়াত বা অন্য কোন পশ্চাৎপদ শক্তি ক্ষমতায় আসলে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, মানবাধিকার তথা সমাজ প্রগতির প্রবহমান ধারা ব্যাহত হওয়ার আশংকা থেকে যায়। এ কারণে সর্বাবস্থায় আওয়ামী লীগ বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন পেয়ে যায়। সংখ্যালঘুদের যে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তারও উৎস এটাই। এ এক নিদারুণ পরিস্থিতি। এটা লক্ষ্য করেই কবি শামসুর রাহমান এবং সাহিত্যিক আহমদ ছফা বলেছিলেনÑ“শেখের বেটি হারলে বাংলাদেশ হেরে যায়। আর শেখের বেটি জিতলে শুধু আওয়ামী লীগই জেতে”।
পঁচাত্তরে আওয়ামী লীগ সীমাহীন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে কিছু গ্রেফতার হন, অন্যেরা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এই সময় অন্ধকারের শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে; রাজাকার, আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটি, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলমী গর্ত থেকে বের হয়ে এসে আস্ফালন শুরু করে। আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা সুযোগ সন্ধানীরা সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের সাথে হাত মেলায়। এদের দেখেই ইদরিস আলম বলেছিলন ‘মক্কা বিজয়ের পরের মুসলামান’। এসএম ইউসুফ, মৌলভী সৈয়দ, মহিউদ্দিন চৌধুরী, গোলাম রব্বান, কাজী ইনামুল হক দানু, আনোয়ারুল আজিম, সীতাকু-ের দিদারুল আলম, অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন হারুন, বাড়বকু-ের চেয়ারম্যান মহসিন জাহাঙ্গীর, নায়েক শফিউল আলম, নগরের অমল মিত্র, ফকির জামাল, শফিকুল আহসান, সৈয়দ মাহমুদুল হকÑ তাঁর পিতা ও ভাই, হাটহাজারীর অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন, মোহাম্মদ ইউনুছ, দীপেশ চৌধুরী, বোয়ালখালীর পীষুষ রক্ষিত, কেশব সেন, আবুল মনসুর ছিদ্দিকী, এসএম সেলিম, আহমদ হোসেন, বাঁশখালীর সুভাষ আচার্য, শফিকুল ইসলাম, পটিয়ার শামসুদ্দিন আহমদ, আ.ক.ম শামসুজ্জামান, কাজী আবু তৈয়ব, এমএ জাফর প্রমুখ সূর্য সৈনিক, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ৭১-এর ন্যায় ভারতে গিয়ে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। তাঁরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দুর্দিনের সাহসী সৈনিক।