দেশের বর্তমান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে কীর্তনীয়া হিসেবে সুপরিচিত নাম জুসি বড়ুয়া। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কধুরখীলে জন্মজাত এই শিল্পী মাত্র ৯ বছর বয়সে স্থানীয় মিঠু চৌধুরীর কাছে সর্বপ্রথম গানের তালিম নেওয়া শুরু করেন। এরপর প্রায় ৪ বছর ওস্তাদ মিহির লালার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নেন। তবে নবম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মঞ্চে গান গাওয়া শুরু।
বিভিন্ন মঞ্চের পাশাপাশি জুসি বড়ুয়াকে গ্রামের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতো, বিশেষ করে অনেক শিল্পীর মাঝে সবসময় দর্শকদের চাহিদা থাকতো প্রথমে ধর্মীয় গান দিয়ে শুরু করতে হবে। তাই তার ধর্মীয় গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হতো। এভাবে অনেক কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে ধর্মীয় গান গাইতে গাইতে তিনি বৌদ্ধ ধর্মীয় গান শেখার প্রতি মনোনিবেশ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে যখন মাত্র ২ থেকে ৩টি ধর্মীয় গান গাইতাম এতেই সবাই খুশি হতেন। তখন অন্য কোন গান আর গাইতে হতো না। এতে করে আমার উৎসাহ আরো বেড়ে যায় এবং গানের পরিধি বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে কোন কোন অনুষ্ঠানে ৫ থেকে ৬টি ধর্মীয় গানও গাইতাম ‘এভাবে জুসি বড়ুয়ার ধর্মীয় চিন্তা -চেতনা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এক সময় বিভিন্ন গ্রামের কীর্তনীয়ারা প্রশংসা করে ধর্মীয় গান তথা কীর্তন চর্চার প্রতি উৎসাহিত করেন। অতঃপর চেষ্টা চালালেন বুদ্ধ কীর্তন সংগ্রহ করার জন্য। নিজের সেই কীর্তন সংগ্রহ ও গাওয়ার প্রতি প্রবল আগ্রহের জন্যই আজ বহু বুদ্ধ কীর্তন তিনি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন।
২০১৮ সালে জুসি বড়ুয়া একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেন। যার ভিউ এখন ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এরপর ২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড এর কারণে লকডাউনে নিজের একটি ফেসবুক পেজ ওপেন করেন। আর ফেসবুক লাইভে বুদ্ধ কীর্তন পরিবেশন করতেন।
লকডাউন যখন শিথিল হয় তখন তার পেইজে বিভিন্ন জায়গা থেকে কীর্তন গাওয়ার আমন্ত্রণ আসতে থাকে। এভাবেই শুরু হয় তার কীর্তনের জার্নি।
এই শিল্পী বলেন- চাইলে শুরু থেকেই মৌলিক গান গাইতে পারতাম। কিন্তু আমি হারিয়ে যাওয়া কীর্তনগুলোকে সম্বল হিসেবে নিয়েছি যেন এর পুনঃজাগরণ হয়। আমি চাই পুরনো কীর্তনগুলোকে আবার নতুনরূপে সবার মাঝে উপস্থাপন করতে।
জুসি বড়ুয়া আরো জানান, যখন থেকে বুদ্ধ কীর্তন গাওয়া শুরু করি ঠিক তখন থেকেই অন্যান্য গান গাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। এখন শুধুই বুদ্ধ কীর্তন নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। আমার স্বপ্ন ভবিষ্যতে বুদ্ধ কীর্তন কেউ ছেড়ে দিলেও আমি ছাড়বো না। যতদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকব ততদিন মনে প্রাণে বুদ্ধ কীর্তনকে ধারণ করে যেতে চাই।