বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন, ১৪৩১, ১১ রমজান, ১৪৪৬

রাউজানে গণহত্যা ও ১৩ এপ্রিলের শহীদেরা

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

১১ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কালুরঘাট সেতুতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে আটকা পড়েছিলো। তারপর উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের শান্ত পল্লীগুলিতে নরক ভেঙে পড়ে। স্বঘোষিত ক্যাপ্টেন সাকা চৌধুরী তাদেরকে পথঘাট চিনিয়ে টার্গেটে নিয়ে যাচ্ছিলো। টার্গেট মানে আওয়ামী লীগ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি। এমনিভাবে ১৩ এপ্রিল রাউজানে একদিনে শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। মানুষের সাধারণ বিশ্বাসে ১৩ এপ্রিলকে একটি অশুভ সংখ্যা বিবেচনা করা হয়। ঘটনাক্রমে রাউজানের পাহাড়তলী, কু-েশ্বরী, জগতমল্লপাড়া এবং ঊনসত্তরপাড়ায় পাক বাহিনীর গণহত্যাও একই দিনে সংঘটিত হয়।
পাহাড়তলী হত্যাকাণ্ড
জহুর আহমদ চৌধুরীর প্রথম পুত্র সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী, চাকসুর প্রথম জিএস আবদুর রব, সিটি কলেজের জিএস সুলতান উল কবির চৌধুরী ছিলেন পরস্পর বন্ধু। সুলতান অসাধারণ সাহসী ও তেজস্বী ছাত্রনেতা। সাইফুদ্দিন ও সুলতান সিটি কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। আবদুর রব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ক্লাসের ছাত্র-তুখোড় বক্তা, দক্ষ সংগঠক। চট্টগ্রামের ছাত্র রাজনীতিতে তিনজনই বিশিষ্ট স্থানের অধিকারি।
সাইফুদ্দিন ২৬ মার্চ সকালে দামপাড়ায় তাঁর বাসভবনের সামনে দাঁত মাজছিলেন। এমন সময় বাল্যবন্ধু ছাত্রনেতা শফর আলী সেখানে আসলে সাইফুদ্দিন তাঁকে বলেন ‘পাকিস্তানিরা বাঙালি কোন যুবককে আস্ত রাখবে না। যেভাবে ভিয়েতনামে মার্কিনিরা সেদেশের যুবকদেরকে ধরে ধরে হত্যা করেছিল, বাংলাদেশেও সেভাবে পাঞ্জাবিরা আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইবে। আমাদেরকে যুদ্ধে যেতে হবে, দেশ স্বাধীন করতে হবে’।
এরপর সাইফুদ্দিন এই বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান যে তিনি প্রথমে আলি আকবর সওদাগরের কাছে যাবেন, সেখান থেকে চকবাজারে যাবেন টাকার জন্য। তাঁর ৭০টি টাকার প্রয়োজন গাড়ি ভাড়ার জন্য, পটিয়া যেতে হবে। পটিয়া সদরে তখন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্য যারা বিদ্রোহ করে বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন তাদের শক্ত ঘাঁটি। তবে সাইফুদ্দিন সেখানে নয়, তিনি যান তাঁর শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফের কুসুমপুরার বাড়িতে। সুলতানও ইউসুফ সাহেবের ছাত্র, সেই হিসাবে তারা সবাই হয়ত কর্ণফুলী পার হয়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ গ্রামীণ জনপদে সাময়িক আশ্রয় নিতে গিয়েছিলেন। সাইফুদ্দিনের বন্ধু এবং অধ্যাপক ইউসুফের ছাত্র কলামিস্ট ইদরিস আলম লিখেছেন, তিনি এবং সাবেক মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম এ মান্নান ২৮ মার্চ সাইফুদ্দিনকে কোরবাণীগঞ্জ থেকে পটিয়া থানার কুসুমপুরা গ্রামে সিটি কলেজের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফের বাড়িতে রেখে আসেন। সম্ভবত কুসুমপুরা থেকেই পরে কোন এক সময় সাইফুদ্দিন পটিয়া সদরে যান এবং সেখানে সুলতান ও ফিরোজের সাথে তাঁর দেখা হয়। ইদরিস আলমের সাথে পটিয়ায়ও সাইফুদ্দিনের দেখা হয়েছিল। তিনি তখন একবার ভারত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আবার দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি সাইফুদ্দিনকে তাঁর সঙ্গে ভারতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু সাইফুদ্দিন রাজি হননি।
পরবর্তীকালে সুলতান উল কবির চৌধুরী যখন ভারতে যাওয়ার উদ্যোগ নেন, তখন সাইফুদ্দিন তাঁর সঙ্গে যেতে রাজি হয়ে যান। সেই যাত্রাপথেই তাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যদের সামনে পড়ে যান এবং তাদের ব্রাশ ফায়ারে সাইফুদ্দিন, রব, অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী, মোজাফফর আহমদ ও চালক ইউনুস কচুকাটা হয়ে যান।
এই হত্যাকাণ্ড থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া বাঁশাখালীর সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান উল কবির চৌধুরীর কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১১ এপ্রিল পটিয়া ডাক বাংলোয় সাইফুদ্দিন, রব ও ফিরোজের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তাঁরা সেখানে বসে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা বান্দরবানগামী ইপিআরের একটি লরিতে উঠে পড়েন। বান্দরবান পৌঁছে তারা সেখানকার এসডিও আবদুল শাকুরের সাথে দেখা করে ভারতে যাওয়ার রুট নিয়ে খোঁজ-খবর নেন। এসডিও তাদেরকে বলেন, আপনারা ভুল পথে এসেছেন, এই পথে ভারতে যেতে হলে আপনাদেরকে প্রায় চারশ মাইল পথ পাড়ি দিতে হবে। তিনি তাদেরকে বিকল্প সহজ পথ হিসেবে চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, পাহাড়তলী হয়ে রামগড় দিয়ে ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী সুলতান, সাইফুদ্দিন, রব, ফিরোজ, রামুর সিদ্দিক, মিরসরাই’র রুস্তম বা শামসু-এই সাত জনের দলটি চৌদ্দ মাইল পথ পায়ে হেঁটে চন্দ্রঘোনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে তাঁরা দ্রুত ধাবমান একটি জিপকে থামানোর চেষ্টা করেন কিন্তু জিপের চালক তাদের ইশারায় কর্ণপাত না করে দ্রুত তার গন্তব্য পথে চলে যান। বিধি বাম! জিপটি কিছুদূর গিয়ে ছড়ার মধ্যে অচল হয়ে পড়ে থাকে। সুলতানদের দল কাছে এসে দেখেন জিপের আরোহীরা তাদের পূর্ব পরিচিত। তাদের মধ্যে ছিলেন কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজের গণিতের অধ্যাপক সাতকানিয়ার দিলীপ চৌধুরী, বোয়ালখালী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাফফর আহমদ, ইউনুস, নুরুল ইসলাম, ইদ্রিস।
সবার গন্তব্য অভিন্ন জেনে একসঙ্গে যাওয়া সাব্যস্ত হলো এবং সবাই ধরাধরি করে জিপটিকে খাড়া করে চড়ে বসলেন। রাতেই তারা চন্দ্রঘোনা পৌঁছলেন কিন্তু কর্ণফুলী পার হবার ফেরি পেলেন না। সকালে পার হলেন। দোভাষী বাজারে নাস্তা সেরে আবার যাত্রা শুরুর উপক্রম করতে স্থানীয় লোকজন বাধা দিয়ে বললেন, শুনেছি, কাপ্তাই রোডে পাকিস্তানি আর্মি এসে গেছে, আপনারা এখন সেদিকে গেলে বিপদ হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধের উন্মাদনায় স্থানীয় লোকদের কথায় কর্ণপাত করার মানসিকতা কারো ছিলো না। তারা রওনা দিলেন। জিপের সামনের আসনে অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী, আবদুর রব ও মোজাফফর আহমদ। পেছনের সিটে সুলতান, সাইফুদ্দিন, ফিরোজ, সিদ্দিক, রুস্তম, নুরুল ইসলাম ও ড্রাইভারের সহকারী। জিপে ছিলো বঙ্গবন্ধু’র স্বাধীনতার ঘোষণার কপি, প্রচারপত্র, অয়্যারলেস সেট ও কিছু বেতার যন্ত্রপাতি। জিপের সামনে ছিলো একটি সাবমেশিন গান, কয়েকটি রাইফেল ও বেশ কিছু হ্যান্ড গ্রেনেড। জিপ দ্রুত ছুটে যাচ্ছিলো।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কিছু আগে একটি মাজারের মোড় পার হতেই হঠাৎ খোলা রাস্তা। একপাশে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, অন্য পাশে ইমাম গাজ্জালী কলেজ। চৈত্রের সকাল বেলার সূর্যের তেজ ঠিকরে পড়ছিলো, রাস্তায় সুনসান নীরবতা। হঠাৎ একটি লোক যেন মাটি ফুঁড়ে উদয় হলো। ড্রাইভার ইউনুস গাড়ির গতি শ্লথ করে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন রাস্তা পরিষ্কার আছে কি না। সে হ্যাঁ বলতে ড্রাইভার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। ইমাম গাজ্জালী কলেজ পার হবার সাথে সাথেই সেটআপটা ধরা পড়ে গেলো। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমানের বুয়েট) সামনে একটি প্রাইমারি স্কুল; মোড় ঘুরে জিপ সেই স্কুলের সামনে পড়তেই রব দেখলেন পাকিস্তানি পতাকা উড়ছে কলেজে, তিনি সবাইকে সাবধান করার জন্য চেঁচিয়ে উঠলে ড্রাইভার কড়া ব্রেক কষলেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও স্কুলের ছাদে ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলিবৃষ্টি উপহার দিয়ে তাঁদেরকে অভ্যর্থনা জানালো। ঝাঁক ঝাঁক রাইফেল, মেশিনগানের গুলিবৃষ্টির সামনে উলঙ্গ জিপ। কোনো আড়াল নেই কোথাও। প্রথম গুলিতেই চাকা ফেটে গাড়ি অচল হয়ে যায়। অরক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যুত্তর দেয়ার চেষ্টা করলেন। গুলি নিঃশেষ হয়ে যায়। টপ টপ করে একজন একজন করে পড়ে গেলেন চট্টগ্রামের ভবিষ্যতের অসীম সম্ভাবনাময় দুই নেতা। প্রথমে সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী, তারপর চাকসু ভিপি আবদুর রব।
এখন জানা যাচ্ছে হারুনুর রশিদ রুশ্নি নামে আনোয়ারার একজন ছাত্রনেতাও পাহাড়তলী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে মারা যান। সুলতান, সাইফুদ্দিন, রবদের দলে তিনি ছিলেন না। তাই তিনি কখন পাহাড়তলীতে মারা যান, সেটা একটা প্রশ্ন থেকে যায়। তবে তিনিও সেখানেই শহীদ হয়েছেন বলে তাঁর ছোটভাই অধ্যক্ষ এনামুর রশীদ চৌধুরী জানিয়েছেন। মায়ের কাছে একটি টাকা চেয়ে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে আর মায়ের কোলে ফিরে যান নি।
এবার এই দলটি কিভাবে গঠিত হয়েছিলো, সে সম্পর্কে আলোকপাত করা যেতে পারে।
অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী ছিলেন কানুনগোপাড়া কলেজের গণিত শাস্ত্রের অধ্যাপক, তিনি সাতকানিয়া থানার ঢেমশা গ্রামের একটি জমিদার পরিবারের সন্তান। এই পরিবারের আরো একজন সদস্য স্বপন চৌধুরীও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি কানুনগোপাড়াতেই ছিলেন। মোজাফফর আহমদ বোয়ালখালী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ড্রাইভার ইউনুসও বোয়ালখালীর আকুবদণ্ডী গ্রামের বাসিন্দা। অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরীর অনুজ সঙ্গীত শিল্পী দীপেন চৌধুরী জানান, অসহযোগ আন্দোলন থেকে তাঁর দাদা অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী বোয়ালখালী থানা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করতে থাকেন এবং কালুরঘাটে যুদ্ধরত বাঙালি সৈনিকদের সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদেরকে খাদ্য ও অন্যান্য রসদ সরবরাহ করেন।
৩০ মার্চ বেলা ২-১০ মিনিটে কালুরঘাট রেডিও স্টেশন বোমা ফেলার মধ্য দিয়েই চট্টগ্রামের পতন শুরু হয়। ঐদিন বিকেলে অধ্যাপক দিলীপ, মোজাফফর ও রব বন্দুকের দোকান থেকে সংগৃহীত ৩০৩ রাইফেল ও অন্যান্য অস্ত্রসহ একটা জিপ নিয়ে বোমা-হামলায় অচল হয়ে যাওয়া রেডিও স্টেশনে যান। তাঁরা রেডিও স্টেশন থেকে কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে জিপে উঠেন এবং বোয়ালখালী ফিরে আসেন। বোয়ালখালীতে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআরসহ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দুটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। একটি গোমদণ্ডীর কাছে বহদ্দারপাড়া স্কুলে অন্যটি চরখিদিরপুর বসত নগর ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে।
এ পাড়ে আসার অব্যবহিত পরেই তাঁরা খবর পান যে সিএন্ডবি রোডের মাথা পর্যন্ত পাকিস্তানি সৈন্য এসে গেছে। এবং ঐ রোডের চারতলা ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। চারতলা ভবনের ছাদে ভারী সমরাস্ত্র বসানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে মুজিববাহিনী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এপাড়ে গুলি বর্ষিত হলেই প্রত্যুত্তর দেয়া হবে। হলোও তাই। এদিকে গোলাগুলি বর্ষিত হবার সাথে সাথেই এপাড়ে নদীর কাছাকাছি থেকে ক্যাপ্টেন মাহফুজের নেতৃত্ব বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর এর সৈন্যরা আর পেট্রোল পাম্পের দিক থেকে আর্টিলারির খালেকের নেতৃত্বে কিছু সৈন্যসহ মোজফফর, রব দিলীপ ও অন্যরা সরাসরি গুলিবর্ষণ করতে লাগলেন। স্পিড বোটে গুলি লেগে সাথে সাথেই প্রাণ হারায় দু’জন।
রাত ৮ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে অধ্যাপক দিলীপসহ বাকিরা কালুরঘাট ছেড়ে চরখিদিরপুরের দিকে রওয়ানা হন। চরখিদিরপুর প্রাইমারি স্কুলের ক্যাম্পে তখন কিছু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাসহ অবস্থান করেছেন মেজর (পরে লে. জেনারেল ও রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমান ও কর্নেল অলি আহমদ; ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছে যান ক্যাপ্টেন মাহফুজ। তিনি মেজর জিয়াকে জিজ্ঞেস করেন, “স্যার এখন কি করবো”। জিয়া কিছু একটা ভাবলেন, বললেন, “আমাদের এ জায়গা ছাড়তে হবে, আমরা পরবর্তীতে বান্দরবানে গিয়ে মিলবো”।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী জিপ নিয়ে গোমদণ্ডীতে বহদ্দারপাড়া স্কুলে আসেন (জিপটি গোমদণ্ডী হেলথ কমপ্লেক্সের)। তাদেরকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে ঐ রাতেই সবাই পটিয়ায় চলে আসেন। পটিয়ায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে তাঁদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর কেটে যায় কটি দিন। এই দিনগুলোতে তাদের কাজ ছিলো সেনা এবং সদ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও খাদ্য সংগ্রহ করা।
৯ এপ্রিল দিলীপ চৌধুরী ও তাঁর সহযোদ্ধারা ছিলেন সাতকানিয়া রাস্তার মাথায়। অধ্যাপক দিলীপের বাড়ি সাতকানিয়ার ঢেমশায়। তিনি ঐ রাতে তাঁর মায়ের সাথে দেখা করতে যান। আসার সময় মাকে বলে আসেন, “মা, আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে যাচ্ছি। এ দেশকে স্বাধীন করে সোনার বাংলা গাইতে গাইতে আবার তোমার কাছে ফিরে আসবো, আমার জন্য চিন্তা করো না। এ দেশের সবাইতো তোমার সন্তান।”
৯ এপ্রিল থেকেই গ্র“প করে ভারতে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে প্রাথমিকভাবে সবাই বান্দরবান গিয়ে উঠবেন। ১১ এপ্রিল খবর আসে পাকিস্তানি সৈন্যরা দক্ষিণ চট্টগ্রামের দিকে রওয়ানা দিচ্ছে। এর মধ্যে অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরীর আবার পটিয়ায় ফিরে যান। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের খবর পেয়ে ঠিক করলেন এবার যেতেই হবে, আর থাকা সমীচীন নয়। ঐদিন মধ্যরাতেই শুরু হয় বান্দরবানের উদ্দেশে যাত্রা। ১২ এপ্রিল সকালে তাঁরা পৌঁছে যান বান্দরবান ফরেস্ট অফিসে। সেই সময় বান্দরবানে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর সহ বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সেনা নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জিয়া, লে. মাহফুজ, আর্টিলারির খালেক প্রমুখ। বান্দরবান থেকে আবার শুরু হয় তাদের যাত্রা। উদ্দেশ্যÑবান্দরবান থেকে পাহাড়ি পথে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পদুয়া হয়ে চন্দ্রঘোনা গমন। দুর্গম পথে এগুতে থাকে জিপ কখনো ছড়ার পানিতে, কখনো বা বালিতে আটকে যায়। আবার ঠেলে তোলা হয় মাটির রাস্তায়। সেখানেই সুলতানদের সঙ্গে তাদের দেখা হয় এবং কিভাবে তারা চন্দ্রঘোণা পৌঁছলেন, ফেরি পার হয়ে পাহাড়তলী পৌঁছে আক্রমণের সম্মুখীন হলেন-এসব কথা আগেই বলা হয়েছে।
ফিরোজের বক্তব্য : পুরো নাম ফিরোজ আহমদ, তার পিতার নাম নজির আহমদ।
ফিরোজ চট্টগ্রামের শহরের দামপাড়ার অধিবাসী, সাইফুদ্দিন খালেদের পড়শি এবং বন্ধু। পড়তেনও একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানÑসিটি কলেজে। সাইফুদ্দিন যখন ৬৯-৭০ সালে বাগমনিরাম ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি, ফিরোজ তখন সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক; সাইফুদ্দিন পূর্ববর্তী কমিটিতে (৬৮-৬৯) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে (১৯৭০-৭১) ফিরোজ সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ছিলেন।
১৩ এপ্রিলের ঘটনার বিবরণ দিতে যেয়ে ফিরোজ বলেন, ১২ এপ্রিল রাতে জিপ নিয়ে তারা কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে পৌঁছেন। কিন্তু ফেরির চালক ফেরি চালাতে রাজি হন নি। কারণ এর আগে প্রচণ্ড বৃষ্টি হওয়ায় নদীতে স্রোত বেড়ে গিয়েছিলে। নদী পার হতে না পেরে তাঁরা স্থানীয় চাকমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রাত্রিযাপন করেন। ১৩ এপ্রিল ভোনের তারা ফেরি দিয়ে নদী পার হয়ে চন্দ্রঘোণা দোভাষী বাজারে উপস্থিত হন। সেখানে ব্রেকফাস্ট করে জিপে করে পাহাড়তলীর দিকে যাচ্ছিলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বাঁকে গাড়ি পৌঁছার পর তারা দেখেন সুনসান রাস্তায় একজন মানুষ হেঁটে আসছেন, তার মাথায় টুপি। তারা গাড়ি থামিয়ে তার কাছে জানতে চান তারা পাহাড়তলী হয়ে রামগড় যাবেন; নিরাপদে যেতে পারবেন কিনা? জবাবে লোকটি বলেছিলো ‘রাস্তা কিয়ার’; তারা আবার রওনা হন, কিন্তু বাঁক ঘুরতেই পাকিস্তানি বাহিনী তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালাই। সামনের সিটে ছিলেন অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী, মোজাফফর আহমদ ও ইউনুস; মাঝখানের সিটে আবদুর রব, সুলতান, সিদ্দিক, নুরুল ইসলাম; পেছনের সিটে ফিরোজ, সাইফুদ্দিন, শামসু, ইদ্রিস। পাকিস্তানি সৈন্যরা টিলার ওপরে বাংকার থেকে গুলি করছিলো। তারা প্রথমেই গুলি করে চাকা ফাটিয়ে গাড়ি থামিয়ে দেয়।
সুলতান সবার আগে জিপ থেকে লাফিয়ে পড়ে করে রাস্তার দক্ষিণ পাশে অনুচ্ছ পাহাড়ে ওঠে অদৃশ্য হয়ে যান; তাকে অনুসরণ করেন সিদ্দিক, শামসু, নুরুল ইসলাম, ইদ্রিস।
গাড়ি অচল হয়ে গেলে সবাই লাফ দিয়ে নিচে পড়ে দক্ষিণ দিকের টিলার ছুটতে থাকেন। মেশিনগানে গুলি তাদের পিছু ধাওয়া করছিলো। এ অবস্থায় প্রথম গুলিবিদ্ধ হন ফিরোজ, তারপর সাইফুদ্দিন, রব, সাইফুদ্দিন ও রব ঘটনাস্থলেই শাহাদাতবরণ করেন। এর মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করতে করতে রাস্তায় নেমে আসে। এবং তরা যেখানে কতগুলি ¯তূপীকৃত ইটের আড়ালে আত্মগোপনের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, সেখান থেকে ধরে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে। তারপর সবাইকে হাঁটিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে সামান্য জিজ্ঞাসাবাদের পর সবাইকে মাটিকে বুক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ করে শুইয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রত্যেকের পকেট হাতড়ে যা পাওয়া যায় বের করে নেয় তারা। যেকোন মুহূর্তে মৃত্যু, এটা বুঝতে পেরে সবাই যখন সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছিলো, তখনই শুরু হয় ব্রাশফায়ার। যখন মনে হয় সবাই মরে গেছে, তখনই গুলি থামায় তারা। কতক্ষণ হবে খেয়াল নেই, হঠাৎ ফিরোজের মনে হলো তিনি মারা যান নি। সত্যিই কি বেঁচে আছেন? চোখ খুলে দেখেন তিনি দেখতে পাচ্ছেন। হাত পাও নাড়ানো যাচ্ছে। তারপর আশেপাশে গোঙানির শব্দ, জবাই করা প্রাণীর মতো গরগর আওয়াজ বের হচ্ছে কারো গলা থেকে। তাও থেকে গেলো; জীবনের আর কোনো সাড়া নেই। ফিরোজের গলা দিয়ে এ সময় শুধু একটি আওয়াজ বের হলো “পানি”। পাকিস্তানি সৈন্যরা চলে যাচ্ছিলো। আওয়াজ শুনে একজন পিছিয়ে এসে কাছে দাঁড়াতে ফিরোজ উর্দুতে বললেন তাকে পানি দিতে। তার মুখে উর্দু কথা শুনে পাকিস্তানি সৈন্যটি দৌড়ে অফিসারের কাছে গিয়ে বললো এখানে একজন পাকিস্তানি আছে।
এবার অফিসারও তার কাছে আসলো; ফিরোজ তার উদ্দেশ্যে উর্র্দুতে বললেন আমাকে পানি দিন, নইলে গুলি করে মেরে ফেলুন। অফিসার সে কথা শুনে বললেলা “তু তো আচ্ছা উর্দু জানতা হ্যায়। তুম কাহাকে রেহলেওয়ালা হ্যায়”। ফিরোজ বাঁচার শেষ অবলম্বন খুঁজে পেলেন। তিনি বললেন তার মা পাঞ্জাবী, বাবা বাঙালি, পাঞ্জাবের একটি জায়গার নাম করে বললেন, সেখানে তার নানার বাড়ি। দামপাড়ায় জহুর আহমদ চৌধুরীর বাড়ির পাশে মোস্তফা সাহেব নামে একজন পাঞ্জাবী থাকতেন। তিনি ও তার পরিবারের সাথে মেলামেশার সুবাদে পাঞ্জাবের দু একটা ঠিকানা ফিরোজের জানা ছিলো। বিপদের সময় সেটাই কাজে লেগে গেলো।
ফিরোজ দেখতেও ধবধবে ফর্সা, অবাঙালির মতো ছিলেন। তার উর্দুতে স্বচ্ছন্দে কথা বলার ক্ষমতা আর গায়ের রং দেখে পাকিস্তানি অফিসারটির মনে দয়া হলো। ততক্ষণে ফিরোজকে বাঁধন খুলে তুলে বসানো হয়েছে এবং পানিও খাওয়ানো হয়েছে। এরপর তার রক্তমাখা কাপড়-চোপড় বদলে দিয়ে তাকে চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিন মাস পর সেখান থেকে পালিয়ে যান ফিরোজ।

শহীদ আবদুর রব
আবদুর রব ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রথম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র আন্দোলনের পুরোভাগে থেকে তিনি চট্টগ্রামের ছাত্র-রাজনীতিকে মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, নেতৃত্বের বলিষ্ঠতা সেই অসহযোগের দিনগুলিতে যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়েছিল।
আবদুর রবের জন্ম ১৯৪৫ সালে বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ার বান্ধাবাড়ি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আবেদ আলী মিঞা। আড়াই বছর বয়সে পিতার সাথে রব চট্টগ্রামে আসেন। এনায়েত বাজার কলিমুল্লাহ প্রাইমারি স্কুল, মুসলিম হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে চট্টগ্রাম কলেজ আই এ-তে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে রব ছিলেন সামনের কাতারের সংগ্রামী ছাত্রনেতা। হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলনে সতেরটি স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত স্কুল ছাত্র সংগ্রাম কমিটির তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে তিনি মুসলিম হাইস্কুলের ছাত্রদের ভোটে ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হন।
আবদুর রব পঞ্চম শ্রেণী থেকে একজন বয় স্কাউট ছিলেন। চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠ স্কাউট হিসেবে পুরস্কৃত হন। ১৯৬১-৬২ সালে শ্রেষ্ঠ স্কাউট ও বক্তা, ১৯৬৩ সালে শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক হিসেবে স্বীকৃতি পান।
রব সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক ছিলেন। তিনি নাটকে অভিনয় ও পরিচালনা করতেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হলো ‘মানচিত্র এলবা’, ‘শেষফল’, আমরা ভাবছি’, ‘চাঁদের ছেলে’। তিনি অনেক গীতি নকশা রচনা করেন এবং গীতি নকশার ধারা বর্ণনায় দক্ষতার পরিচয় দেন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে আবদুর রব তাঁর মাকে বলেছিলেন ‘মা তোমার তো আরো ছেলে আছে। আমাকে তুমি ওদের হয়ে মরতে দাও,Ñমাকে বলা এই কথাগুলো তার জীবনে এমন নির্মমভাবে সত্য হয়ে দেখা দেবে কে জানত?
রবের পিতা এখন প্রয়াত, যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন পুত্রের নানা স্মৃতি, তার সম্পর্কে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, নিবন্ধ যক্ষের ধনের মতো বুকে আঁকড়ে ধরে রাখতেন তিনি। রব ছিল তার আদরের পুত্র, এই পুত্রকে নিয়ে তার গর্বের সীমা ছিল না। গোয়ালপাড়া রব কলোনিতে তাঁর বাসায় গেলে রবের ছোট ভাই বিখ্যাত ফুটবল রেফারি আলাউদ্দিন আমাকে এসব কথা বলেন। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম পরিবারের প্রথম ছেলেটি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, সেজন্য তারা কি কোন রকম সরকারি স্বীকৃতি কিংবা সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন? তার নিরাসক্ত কণ্ঠের উত্তর ছিল নেতিবাচক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সড়ক, একটি হল এবং শহরে রবের নামাঙ্কিত একটি কলোনি আছে এতেই তারা সন্তুষ্ট। সরকারের কাছে সাহায্যের মুখাপেক্ষী তারা কখনো হননি। কিন্তু তাই বলে সরকারের কি কোনো দায়িত্ব নেই?

সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী
সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী ১৯৪৭ সালে দামপাড়া পল্টন রোডে পৈত্রিক বাসভবনে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সিটি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সাবেক পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে লিবারেশন কাউন্সিল ইস্টার্ন জোনের চেয়ারম্যান এবং বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার সদস্য জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরী। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে তা’ দেশে-বিদেশে প্রচারের জন্য জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছেই পাঠিয়েছিলেন। সাইফুদ্দিনের মাতার নাম জাহানারা বেগম।
সাইফুদ্দিন দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বাগমনিরাম প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর এম ই স্কুলে (চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার পর সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি হন। মুসলিম হাই স্কুলে অধ্যয়নকালে ৬২’র ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
মুসলিম হাই স্কুলে পড়ার সময় তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। তখনকার দিনে মুসলিম হাই স্কুলে বৃহস্পতিবার পাঠ্য বিষয়ের বাইরে এক ঘণ্টা অতিরিক্ত ক্লাশ হতো। বিভিন্ন আলোচনা, বিশেষত নিয়মিত বিতর্কের আসর বসতো। সাইফুদ্দিন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে থাকেন।
১৯৬৭ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে সিটি কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বছরেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দিবা বিভাগের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) নির্বাচিত হন। ৬৭ থেকে ৭১-এর ৩০ মার্চ পর্যন্ত সিটি কলেজ ছিলো ছাত্র আন্দোলনের দুর্ভেদ্য দুর্গ। আর এ আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকে যারা চট্টগ্রামের রাজপথ প্রকম্পিত করে তুলতেন, সাইফুদ্দিন তাদের অন্যতম। তিনি তুখোড় বক্তা, অপ্রতিদ্বন্দ্বী তার্কিক, অসাধারণ সংগঠক, মেধাবী ছাত্রনেতা, নিষ্পাপ চেহারার নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারি, সদালাপী, বন্ধুবৎসল ছিলেন। সর্বোপরি তিনি এক খাপখোলা তলোয়ারের তুলনাÑসত্যের জন্য, আদর্শের জন্য যিনি প্রয়োজনের সময় ঝলসে উঠতে পারেন। সাইফুদ্দিন খালেদ অর্থও ‘ধর্মের তলোয়ার’। স্ত্রী জাহানারা বেগমের কোল আলো করে যখন প্রথম শিশুপুত্রটি জন্মগ্রহণ করে, তখন জহুর আহমদ চৌধুরী সাধ করে তার নাম রেখেছিলেন সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী। পুত্রটি বড় হয়ে সার্থকনামা হয়েছিলো। অন্যায় দেখলেই এই তরবারি ঝলসে উঠতো। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মুখোমুখি হয়েও এমনি ঝলসে ওঠেছিলেন; বীরের মতো লড়াই করতে করতে প্রাণ বিলিয়ে দিতে এতটুকু বুক কাঁপেনি তাঁর।
সাইফুদ্দিন বন্ধুর কলামিস্ট ইদরিস আলম লিখেছেন র শরীর থেকে বিন্দু বিন্দু রক্তে দেশমাতৃকার মাটি ভিজিয়ে দিয়ে মাতৃঋণ শোধ করেছিলেন এবং অবশেষে অমৃতের পুত্র হয়ে যান দামপাড়ার পল্টন রোডের সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী।
জহুর আহমদ চৌধুরী এমন একজন রাজনৈতিক নেতা, যিনি পাকিস্তান আন্দোলন করতে আপন ভাইকে হারিয়েছিলেন কলকাতার দাঙ্গায়, তার নাম মাহবুবুল আলম। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির একমাত্র নেতা, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ করতে গিয়ে নিজের জ্যেষ্ঠ পুত্রটিকে কোরবানি দিয়েছিলেন। তিনিই একমাত্র নেতা, যাঁর কাছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা প্রেরণ করেছিলেন; তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি কলকাতা থেকে বহুদূরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আগরতলায় অবস্থান করে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ বাদে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিস্তীর্ণ এলাকায় লিবারেশন কাউন্সিল ইস্টার্ন জোন গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; তিনিই একমাত্র নেতা যিনি মুক্ত স্বদেশের মাটিতে প্রথম বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করেন; তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি সর্বপ্রথম ঢাকা রেডিওতে ভাষণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রেডিও চালু করেছিলেন এবং সম্ভবত তিনিই একমাত্র নেতা যিনি কপর্দকশূন্য অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। অথচ তখন তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ মন্ত্রী। সেজন্য জহুর আহমদ চৌধুরীর অনুশোচনা ছিলো না, তিনি পরিপূর্ণ জীবনযাপন করে পরিতৃপ্তি নিয়েই পরলোকে যাত্রা করেন।
জগতমল্লপাড়া হত্যাকাণ্ড
রাউজান পৌরসভার আওতাধীন পশ্চিম সুলতানপুর গ্রামের একটি ক্ষুদ্র পাড়ার নাম জগতমল্লাপাড়া। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের লাগোয়া এই পাড়াটি যখন ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আমি পরিদর্শনে যাই, তখন নিতান্তই সাদামাঠা এক পাড়াগাঁ রূপেই প্রতিভাত হয়েছে। বাংলাদেশের আর দশটা পাড়াগাঁর তুলনায় যার আলাদা কোন বিশেষত্ব আমার মন কাড়তে পারেনি। এ সত্ত্বেও জগতমল্লপাড়ার একটি বৈশিষ্ট্য আমাদের অনভ্যন্ত চোখেও ধরা পড়ে গেল। সেটি হলো একটি ব্যস্ত রাজপথের পাশেই যে পাড়া, তা যেন কেমন নিঝুম, সুনসান। পাড়ার ডানপিটে শিশু, দামাল ছেলে, নেড়ি কুত্তাটাও ডাকতে ভুলে গেছে।
এক বুক কান্না, এক সাগর রক্ত ও দুঃখের পাষাণভার বুকে ধারণ করে জগতমল্লপাড়া এমন স্তব্ধ, এমন মৌন। ৩৭ বছর পূর্বে যে লোমহর্ষক ঘটনাটি এ পাড়ার নারী পুরুষ জোয়ান বুড়োর বুকের পাঁজর ভেঙ্গে দিয়েছিলো, বিদীর্ণ করে দিয়েছিলো হৃদয়, সে বেদনা বুকে চেপে বেঁচে থাকার শাস্তি যাদের ললাটলিপি, জগতমল্লপাড়ায় জীবন্মৃত মানুষগুলো নিশ্চয়ই হিংসা করছে তাদেরকে যারা সেদিনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে প্রাণ দিয়েছিলো।
অন্যান্য দিনের মতই একাত্তর সালের ১৩ এপ্রিলের দিনটির সূচনা হয়েছিলো পাখিডাকা ভোরে রাঙামাটি সড়কে যখন একটি-দুটি বারে বাস চলতে শুরু করেছে, লাঙল জোয়াল গরু নিয়ে যখন হলকর্ষণের জন্য মাঠের পানে গরুর পাল নিয়ে ধাবমান রাখাল, ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো বাংলার চিরায়ত জীবনের এই ছবিটা যখন মহশিল্পীর তুলির আঁচড়ে সবে ফুটে উঠতে শুরু করেছে-বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ ও উপাসনার এমনি মাহেন্দ্র ক্ষণে জেগে ওঠে ভক্তজনঅধ্যুষিত জগতমল্লপাড়া পূর্ব দিগন্ত রাঙিয়ে সূর্যদেবতার পাটে বসার আয়োজন তখন সারা হয়ে গেছে। তখনো শান্ত, নিবির জগতমল্লপাড়া।
ঘড়িতে সময় ১০টার কাঁটা পেরিয়ে গেলে পশ্চিম দিক থেকে হঠাৎ গুলির শব্দ। সেদিকটায় কুণ্ডেশ্বরী, সবাই চলে গেছে, নূতন বাবু একাই আগলে রেখেছেন বিশাল বাড়িটাকে। তাঁর কিছু হলো না ত? ক্ষণিকের জন্য সে আশংকা কারো কারো মনে উদয় হলেও তা আবার মিলিয়ে যায়। কারণ তখনো পর্যন্ত রাউজানে পাকিস্তানি বাহিনী যায় নি। তাই সন্দেহটা সেদিকে গেল না। সবাই যার যার কাজে লেগে গেল। হায়! সেটা যে কত বড় ভুল ছিলো, তা যদি তখন কেউ বুঝতে পারতো, তাহলে হয়তো জগতমল্লপাড়ায় এত বড় গণহত্যা এড়ানো যেত।
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই যমদূতের ন্যায় হাজির হয়ে গেল হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যরা। কি হাজির হল না। হাজির করানো হলো তাদের। এটা সেই দালালদেরই কীর্তি, মাবুদ, গোলাম আলী, নওয়াব মিয়া- মোহাম্মদ বখ্শ যারা কু-েশ্বরীতে অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যার ঘটনা সমাধা করে এসেছে। এই দালালরা নূতন চন্দ্র হত্যা মামলার আসামি। আরো পরে রাজাকার বাহিনী গঠিত হলে এরাই সবার আগে যোগ দেবে।
পাঞ্জাবি নরপশুদের আগে আগে পথ দেখিয়ে জগতমল্লাপাড়া নিয়ে আসে এই দালালরা। তারা স্থানীয় মানুষ, এ পাড়ার কোন কোন লোকের সাথে তাদের দিনরাত ওঠাবসা। তাই পাঞ্জাবী দেখে ভয় পেলেও তারা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি যে, তাদের হত্যার মঞ্চ সাজাতেই এই ‘বন্ধ’ুরা এসেছে। যেভাবে তারা কথা পাড়ল, তাতে ক্ষীণ সন্দেহ একেবারেই উবে গেল। নন্টু মেম্বারের বাড়ির এক চিলতে উঠোনে দাঁড়িয়ে তারা বলেছিল এরা বাঙালি (আসলে পাঞ্জাবি) সৈনিক, শান্তি কমিটির মিটিং করতে এসেছে। তাই সবাইকে ডেকে সেই উঠোনে জড়ো করার জন্য তারা অনুরোধ করে। একজনকে মিষ্টি আনার জন্য দোকানে পাঠিয়ে দেয়। এমনভাবে তারা কথাগুলো উপস্থাপন করে যে, কারো মনে কোন সন্দেহই সৃষ্টি হয়নি। সবাই আসার পর এবার তারা স্বমূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করে এবং সবাইকে লাইন ধরে দুই সারিতে বসে পড়তে বলে। অতঃপর সেই ছোট জায়গায় ঠাসাঠাসি করে বসা মানুষগুলোর ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলি বৃষ্টি চলতে লাগলো সমানে, যতক্ষণ তারা মাটিয়ে লুটিয়ে না পড়ে ততক্ষণ ধরে পাকি হানাদার খুনিদের সদস্যদের গুলিবর্ষণ থামে নি। যাকে মিষ্টি আনতে পাঠানো হয়েছিল সে মিষ্টি নিয়ে আসলে তাঁকেও হত্যা করে খুনিরা। শুধু একজন বুড়ি সেই গণহত্যার সাক্ষী হিসেবে এখনো বেঁচে আছেন। তিনি নিজেও গুলি খেয়েছিলেন, কিন্তু কিভাবে যেন প্রাণে বেঁচে যান। এই বেঁচে থাকাটা যে কত কষ্টের, কী দুঃসহ যাতনার সেটা একমাত্র তিনিই বুঝতে পারছেন। এই জীবনতো জীবন নয়, মরণেরই অপর নাম ১৩ এপ্রিল যাঁরা গুলিতে জীবন দিয়েছেন, তারা একবারই মৃত্যুবরণ করেছেন। এবং প্রতিদিনের মৃত্যুযন্ত্রণার হাত থেকে বেঁচে গেছেন। কিন্তু বুড়ি প্রতিদিনই মৃত্যুবরণ করছেন। দুঃস্বপ্নের মতো মৃত্যুর সেই বিভীষিকা প্রতিদিন তাঁকে তাড়া করে। ৩৭ বছর ধরে এই ঘটনার বিবরণ দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত, বিক্ত। সাংবাদিক দেখলেই খেঁকিয়ে উঠেন, তাড়িয়ে দিতে পারলেই যেন বেঁচে যান। খেদোক্তির সুরে বলেন, হত্যাকা-ের শিকার পরিবারগুলো কোন সরকারি বেসরকারি কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা কখনো পায়নি। তাদের পুনর্বাসনের কোন চেষ্টা কেউ করে নি। তেমন কেউ দেখতে আসেনি। শুধু বঙ্গবন্ধু একবার সেই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় পাড়ার লোকেরা তাঁর গাড়ি আটকে তাদের ওপর পৈশাচিক অত্যাচারের কাহিনী তাঁকে জানায়।
জগতমল্লপাড়ায় মোট ৬০টি পরিবারের মধ্যে প্রায় প্রতিটি পরিবারই গণহত্যার শিকার। পরিবারের কোন না কোন সদস্য গুলিতে প্রাণ দিয়েছে। সারাজীবনের জন্য অকাল বৈধব্য বরণ করে নিতে হয়েছে বহু নারীকে। জগতমল্লপাড়ার ৩৯ জন নারী-পুরুষ যে স্বপ্নের স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য তাদের প্রিয়তম জীবনকে নিঃশেষে বিলিয়ে দিয়েছিলো। তাঁর সেই আতেœাৎসর্গের গৌরদীপ্ত ঘটনাটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য রাউজান পৌরসভা বিলম্বে বলেও একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। মাসেই জগতমল্লাপড়ায় স্মরণ ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পৌর কমিশনার জাহাঙ্গীর। স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয় এপ্রিল মাসে। কার্যাদেশ প্রদান করা হয় সপ্তাহ খানেক আগে। স্মৃতিসৌধের নকশা তৈরি করেছেন প্রতিভাবান তরুণ শিল্প মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে কর্মরত জিয়ার বাড়ি রাউজানেই। কমিশনার জাহাঙ্গীর ও শিল্পী জিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেল, মাস ছয় পূর্বে জানালী হাটে একটি মিটিংয়ে গিয়েছিলেন রাউজান পৌরসভা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবী। সেই মিটিংয়ে কমিশনার জাহাঙ্গীর তাঁর বক্তৃতায় জগতমল্লপাড়া ট্র্যাজেডি সবিস্তারে বর্ণনা করে জগতমল্লপাড়ায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানান। পৌরসভার চেয়ারম্যান পৌরসভার পক্ষ থেকে জগতমল্লপাড়ায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার পর রাউজান পৌরসভা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে শিল্পী জিয়াকে প্রস্তাবিত স্মৃতিসৌধের নকশা আহ্বানের দায়িত্ব প্রদান করে। জিয়া যথাসময়ে নকশা তৈরি করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। শিল্পী জিয়া স্মৃতিসৌধে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করেছেন, যার নীচে থাকবে মানুষের অবয়ব , যা স্বাধীনতার বেদীমূলে মানুষের উৎসর্গের ঘটনাকেই প্রতীকী ব্যঞ্জনায় উপস্থাপিত করবে। পিলারের ওপর দু’পাশে শহীদদের নাম খোদাই করা থাকবে। তাছাড়া এই স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে যুদ্ধের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বন্দুকের নল।
ইতিমধ্যে স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এখন জগতমল্লপাড়ায় গেলে গণহত্যায় সাক্ষী স্মৃতিসৌধটি চোখে পড়ে।
ঊনসত্তরপাড়া হত্যাকাণ্ড
স্থান : সতীশ মহাজনের বাড়ি: হাফেজ বজলুর রহমান সড়কের গৌরি শংকর হাটের রাস্তা সংলগ্ন পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত। তাং : ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ইং, বিকেলে শহীদের সংখ্যা ৬৮Ñ৪৯ জনের নাম পাওয়া গেছে ১. যোগেশ চন্দ্র মহাজন, পিং-মৃত হরচন্দ্র মহাজন, ২. রনজিত কুমার মহাজন, পিং-মৃত যোগেশ চন্দ্র মহাজন, ৩. গোপাল চন্দ্র মালী, পিং-মৃত যোগেশ চন্দ্র মালি, ৪. বাবুল চন্দ্র মালী, পিং-মৃত গোপাল চন্দ্র মালী, ৫. সন্তোষ মালী, পিং-যোগেশ চন্দ্র মালী, ৬. উপেন্দ্র লাল ঘোষ, পিং-মৃত দুর্গা চরণ ঘোষ, ৭. মনোরঞ্জন ঘোষ, পিং-নগেন্দ্র লাল ঘোষ, ৮. অভিমুন্য পাল, পিং-রমেশ চন্দ্র পাল, ৯. পাখি বালা পাল, স্বামী-অভিমুন্য পাল, ১০. বেনী মাধব পাল, পিং-মৃত বামা চরণ পাল, ১১. তারাপদ পাল, পিং-মৃত বেণী মাধব পাল, ১২. ধীরেন্দ্র লাল পাল, পিং-রমেশ চন্দ্র পাল, ১৩. বিরাজা বালা পাল, পিং-মৃত খগেন্দ্র লাল পাল, ১৪. হিমাংশু বিমল পাল, পিং-মৃত বংশী বদন পাল, ১৫. সতীশ চন্দ্র পাল, পিং-মৃত হরিশ চন্দ্র পাল, ১৬. সুপ্রিয় পাল, পিং-মৃত যোগেন্দ্র লাল পাল, ১৭. দুর্গাচরণ পাল, পিং-মৃত ওখিল চন্দ্র পাল, ১৮. শান্তি বালা পাল, পিং-দুর্গাচরণ পাল, ১৯. নিকুঞ্জ বিহারী পাল, পিং-নবীন চন্দ্র পাল, ২০. চন্দ্র কুমার পাল, পিং-নিকুঞ্জ বিহারী পাল, ২১. বলরাম পাল, পিং-মৃত জয় চন্দ্র পাল, ২২. শ্রীরাম পাল, পিং-মৃত জয় চন্দ্র পাল, ২৩. ফনীন্দ্র পাল, পিং-মৃত রজনী পাল, ২৪. বলরাম পাল, পিং-মহেশ চন্দ্র পাল, ২৫. তারাচরণ পাল, পিং-মৃত মহেন্দ চন্দ্র পাল, ২৬. পুলিন বিহারী পাল, পিং-মৃত নিমাই চরণ পাল, ২৭. নিকুঞ্জ বিহারী পাল, পিং-রমেশ চরণ পাল, ২৮. উত্তমা বালা পাল, পিং-পুলিন বিহারী পাল, ২৯. নকুল চন্দ্র পাল, পিং-অজ্ঞাত, ৩০. হেমন্ত কুমার পাল, পিং-সতীশ চন্দ্র পাল, ৩১. ধীরেন্দ্র লাল চৌধুরী, পিং-গুরুদাশ চৌধুরী, ৩২. নির্মল চন্দ্র চৌধুরী, পিং-চৌধুরী বেণী মাধব, ৩৩. মধুসূদন চৌধুরী, পিং-নিসর্মৃর চন্দ্র চৌধুরী, ৩৪. প্রতিমা দাশ, স্বামী-রনজিত দাশ, ৩৫. শান্তিপদ চৌধুরী, পিং-রেবতী রমণ চৌধুরী, ৩৬. নিরঞ্জন চৌধুরী, পিং-চন্দ্র কুমার চৌধুরী, ৩৭. বাবুল চৌধুরী, পিং-অঘোর চৌধুরী, ৩৮. কৃষ্ণা চৌধুরী, পিং-বাবুল চৌধুরী, ৩৯. মনি কুন্তলা চৌধুরী, ৪০. কৃষ্ণা চৌধুরী, ৪১. শ্রী চৌধুরী, পিং-রেবতী মোহন চৌধুরী, ৪২. স্বপন কুমার সেন, ৪৩. ক্ষেত্র মোহন রুদ্র, পিং-অজ্ঞাত, ৪৪. উনেশ চন্দ্র রুদ্র, ৪৫. রনজিত কুমার রুদ্র, ৪৬. ডা. নিরঞ্জন দত্ত, পিং-কিশোরী মোহন দত্ত, ৪৭. মনীন্দ্র লাল চৌধুরী, পিং-অজ্ঞাত, ৪৮. শক্তিপদ চৌধুরী, পিং-রেবতী চৌধুরী, ৪৯. নীরোদ বরণ ঘোষ, পিং-রামমণি ঘোষ।

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

জয় বাংলা

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত গতকাল এক রায়ে বলেছে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান নয়। ইতিপূর্বে হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান বলে রায় দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সেই

বিস্তারিত »

সাংবাদিক মাহবুব উল আলমের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, বাম রাজনীতির নীরব সমর্থক ও সংগঠক, মাইজভাণ্ডারী দর্শন ও মওলানা ভাসানীর একনিষ্ঠ অনুসারী এবং সাহিত্যিক মোহাম্মদ মাহবুব উল আলম হাটহাজারী

বিস্তারিত »

আতাউর রহমান খান কায়সার

আতাউর রহমান খান কায়সার চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আনোয়ারার জমিদার এয়ার আলী খান বঙ্গীয় আইন পরিষদ

বিস্তারিত »

বাংলাদেশে আবার পাকিস্তানের জিগির

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী শেখ হাসিনার যুগপৎ পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা উঠতে না উঠতেই প্রধান

বিস্তারিত »

এস আলমের সমর্থনে চট্টগ্রামের মানুষ রাস্তায় নামতে পারে

সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছে, চট্টগ্রামের এস আলম শিল্পগোষ্ঠী। এস আলমের স্বত্ত¡াধিকারী সাইফুল আলম মাসুদ, তাঁর স্ত্রী এবং শিল্পগোষ্ঠীর পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত তাঁর ভাইদের ব্যাংক

বিস্তারিত »

ব্যবসায়ী শিল্পোদ্যোক্তারা আতঙ্কিত

দেশের বৃহৎ কর্পোরেট শিল্পগোষ্ঠীগুলি সরকারের হয়রানির ভয়ে কুঁকড়ে আছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদেরকে নিয়ে যে টানা হ্যাঁচড়া শুরু করেছে, তার কোনো থামাথামি

বিস্তারিত »

কক্সবাজার রেললাইন, বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মা সেতু অনেক প্রধানমন্ত্রীর কাজ এক প্রধানমন্ত্রী করে ফেলছেন :

কেউ কি ভেবেছিলো কক্সবাজারে ট্রেন যাবে ? কেউ কি ভেবেছিলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গ হবে এবং সেই সুড়ঙ্গ পথই কর্ণফুলীর পানি পাড়ি দিয়ে এপার ওপার

বিস্তারিত »

আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযোদ্ধা এজাহার মিয়া প্রথম বঙ্গবন্ধুর কবর জেয়ারত করেন

পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্য এবং নিকট আত্মীয়স্বজনকে পৈশাচিক উপায়ে হত্যা করার পর দেশে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ

বিস্তারিত »

বঙ্গবন্ধুর কবর প্রথম জেয়ারত করেন মুক্তিযোদ্ধা এজাহার মিয়া

পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্য এবং নিকট আত্মীয়স্বজনকে পৈশাচিক উপায়ে হত্যা করার পর দেশে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ

বিস্তারিত »