সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৯ পৌষ, ১৪৩১, ১২ রজব, ১৪৪৬

বঙ্গবন্ধু টানেল ও একজন স্বপ্নবাজ প্রধানমন্ত্রীর গল্প

শেখ হাসিনা শোধনাগার

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের এমন উচ্চতায় উপনীত করে এক একটি রেকর্ড সৃষ্টি করে যাচ্ছেন যে, যাঁরা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবেন তাদের জন্য এই রেকর্ড স্পর্শ করার কাজটি তিনি কঠিন করে তুলছেন। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু ‘পদ্মা সেতু’ তিনি তৈরি করে ফেলেছেন। এই সেতু তৈরি করার পূর্বে অনেক কাহিনী হয়ে গেল; বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিলো, প্রতিশ্রুত অর্থ দিতে অস্বীকার করে বসলো, শেখ হাসিনা অকুল পাথারে পড়লেন। কিন্তু তিনি তো সিংহ শাবকÑশেখের বেটি, তিনি তো হতাশ বা ভেঙে পড়তে পারেন না। তাহলে তো বাংলাদেশই হেরে যায়। তাঁর পিতা জাতিকে স্বাধীন বাংলাদেশ এনে দিয়েছেন। এখন মুজিবপুত্রীর আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে এই স্বাধীনতাকে পাহারা দিতে হবে, রক্ষা করতে হবে। গর্জে উঠলেন মুজিবপুত্রী। নিজের দেশের সম্পদ, অর্থে পদ্মা সেতু করবেন ঘোষণা দিলেন এবং করেও ফেললেন। সেই সেতু এখন বাস্তব। কীর্তিনাশা পদ্মার বুকে নতুন কীর্তি স্থাপন করলেন শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতের কোন সরকার প্রধানের সামনে এমন চ্যালেঞ্জ আসতে পারে তেমন ক্ষেত্র কোথায় ?
পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনা যে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তাকে প্রশংসাই শুধু নয়, তাঁর প্রতি আপনা থেকেই আমাদের মাথা নত হয়ে আসে। পদ্মা সেতুতে তিনি বিশ্বব্যাংকের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করলেন। কিন্তু পরাশক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রস্তাব তিনি যেভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন, তাতে শেখ হাসিনাকে দুঃসাহসীই বলতে হয়। ক্লিনটন প্রস্তাব দিয়েছিলেন গ্যাস রপ্তানির, ক্লিনটনের মুখের ওপর না করতে একটুও দ্বিধা সংকোচ হয়নি নিষ্কম্প শেখ হাসিনার। এপ্রসঙ্গে তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথাও উল্লেখ করতে হয়। তাঁর কাছে আমেরিকা দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি করার কথা বলেছিলো, বঙ্গবন্ধু তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ফ্লাইওভার বা উড়াল সেতু বাংলাদেশে ছিলো না, শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ ফ্লাইওভার যুগে পদার্পণ করলো। ঢাকায় মেট্রোরেল হাসিনা সরকারের আরেক কীর্তি। বাংলাদেশে মেট্রোরেল? কল্পনা করা যায়। চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ করেছেন তিনি। ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাটে কর্ণফুলীর ওপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এই সেতু নির্মাণের জন্য বোয়ালখালীর সাংসদ মোছলেমউদ্দিন আহমদের চোখে ঘুম নেই। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি ঢাকায় দৌড়ঝাপ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন আদায় করে নিয়েছেন। তিনি আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন বলেই না বহু প্রত্যাশিত কালুরঘাট দ্বিতীয় সেতুর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এত বেশি উন্নয়ন কাজ করছেন যে, অতীতে যারা ক্ষমতায় থাকাকালে চট্টগ্রামের উন্নয়ন করেননি, তারা এখন লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। মোছলেম ভাই হিসেব রেখেছেন বিএনপি সরকারের আমলে এক সময় চট্টগ্রাম থেকে ১০জন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাঁরা অশ্বডিম্ব প্রসব করেছেন। কাণে সেই তো কথা আছে নাÑঅধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হয়।
শেখ হাসিনাই মিরসরাইতে ‘বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর’ নামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৬ লেইন সড়ক, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ, ঘুংধুম পর্যন্ত এশিয়ান হাইওয়ে, কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ি এলএনজি প্রকল্প, বাঁশখালী বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রামে পানি সংকট কাটাতে ওয়াসার তিনটি পানি শোধনাগার নির্মাণ এবং সর্বশেষ শেখ হাসিনার আমলেই চট্টগ্রাম টার্মিনাল যুগে প্রবেশ করলো। নদীর তলদেশে টিউব আকৃতির সুড়ঙ্গ তৈরি করে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থাকেই বলা হচ্ছে টানেল। এই টানেল বস্তুটি বাংলাদেশে ছিলো না, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায়ও ছিলো না। শেখ হাসিনাই সর্বপ্রথম দেশে একটি টার্মিনাল নির্মাণ করলেন এবং সেটি তাঁর প্রিয় শহর চট্টগ্রামেই করলেন। ৯৬’র নির্বাচনকালে তিনি ওয়াদা করেছিলেন চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিজের হাতেই রাখছেন। সত্যিই সে দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে পালন করে চলেছেন। চট্টগ্রামে এখন বিএনপির মতো ১০ মন্ত্রী নেই বটে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীই তো এখন চট্টগ্রামের। আওয়ামী লীগ বলতে পারে, আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামেরই স্বজন, একান্ত আপনজন। তিনি চট্টগ্রামে থাকেন না বটে, সরকার প্রধান হিসেবে তাঁকে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করতে হয়। কিন্তু তাঁর দেহ ঢাকায় থাকলেও তাঁর মন পড়ে থাকে চট্টগ্রামে। সে কথাই তিনি বলেছেন ২৬ নভেম্বর কর্ণফুলী টানেলের একটি টিউবের নির্মাণ সমাপ্তি উৎসব উদযাপন অনুষ্ঠানে।
করোনা সংকটের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকদিন চট্টগ্রামে আসতে পারেন নি। ২০১৮ সালে পটিয়ায় রাহাত আলী হাইস্কুলে এক জনসভায় ভাষণ দানের পর তিনি এখন আবার চট্টগ্রামে আসলেন। আজ পলোগ্রাউন্ডে তাঁর জনসভার কর্মসূচি রয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ পর তিনি পলোগ্রাউন্ডে জনসভা করছেন। পলোগ্রাউন্ডের সাথে মোগল ও ইংরেজ আমলের স্মৃতি জড়িত রয়েছে। এই মাঠের প্রাচীন নাম ‘নেজামত পল্টন’, যা’ মোগল আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইংরেজ আমলে সাহেবরা মাঠটিকে পলো খেলার জন্য ব্যবহার শুরু করে। এর ফলে মাঠের নাম পাল্টে পলোগ্রাউন্ড হয়ে যায়। কিন্তু মাঠটির একটি বিপ্লবী ঐতিহ্য রয়েছে। ১৯৩১ সালে এই মাঠে খেলা দেখার সময় অত্যাচারী পুলিশ কর্মকর্তা খান বাহাদুর আহছানউল্লাহকে কিশোর বিপ্লবী হরিপদ খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। বিপ্লবী নেত্রী শেখ হাসিনাকে বিপ্লবের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। চট্টগ্রাম তো বিপ্লবীদেরই চারণভূমি। ১৯৬১ সালে মাননীয় নেত্রী তাঁর পিতার সঙ্গে চট্টগ্রাম সফরে এসে এই পলেগ্রাউন্ডের পার্শ্ববর্তী টাইগারপাস রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর পিতৃবন্ধু এমএ আজিজ, সুলতান কন্ট্রাক্টর, ‘বুলবুল ইউসুফ’, মানিক চৌধুরীরা সেসময় ছিলেন।
উন্নয়ন ছাড়াও শেখ হাসিনার আরো যেসব কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করতে হয়, সেগুলি হলো মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী বৃদ্ধি, ঘর তৈরির জন্য ঋণ প্রদান; দুঃস্থ, অস্বচ্ছল, বিধবাদের ভাতা প্রদান, সাংবাদিকদের চিকিৎসা সহায়তা, ১০ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা, রিজার্ভ বহু গুণ বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি, হতদরিদ্রের সংখ্যা ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, উত্তরবঙ্গের মানুষের এক সময়ের নিয়তি আশ্বিন-কার্তিক মাসের মঙ্গা দূরীভূত করা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়ে হ্যারিকেনকে বিদায় করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিন মেয়াদে প্রাপ্ত টানা দেশ শাসনের সুযোগে শেখ হাসিনা নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের উন্নয়ন সাধন করেছেন। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনা সম্মান ও সমাদর লাভ করে চলেছেন। বিশ্বব্যাপী আজ তিনি উন্নয়নশীল দেশের মুখপাত্র হিসেবে নন্দিত ও বন্দিত; তাঁকে মনে করা হয় এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক যিনি বিশ্বশান্তি, গণতন্ত্র, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক, বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি চূড়ান্তভাবে একজন সৎ, আত্মত্যাগী নেত্রী। তাঁর নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্র হচ্ছে তিনি সহজ, সরল মানুষ; উদ্যমী, পরিশ্রমী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেত্রীÑ যাঁর রয়েছে ভিশন, যিনি বাংলাদেশের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন, যিনি জ্ঞানচর্চা করেন এবং জ্ঞানী মানুষের সঙ্গ ভালোবাসেন। এমন নেত্রীর হাতে শাসিত হচ্ছে বলেই বাংলাদেশ প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে সোনালী ভবিষ্যতের পানে।
একদিন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী সা¤্রাজ্যবাদী আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিজার সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ অপবাদ দিয়ে স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে মলিন করার অপচেষ্টা চালিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু সেই অপবাদ ঘুচিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন করে দেশকে যখন উন্নয়ন, উৎপাদন ও অগ্রগতির পথে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই দেশী-বিদেশী চক্রান্তে সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে; শুধু বিদেশে থাকার কারণে লোমহর্ষক হত্যাকা- থেকে বেঁচে যাওয়া তাঁর দু’কন্যার একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর জনগণ তাঁকে নির্বাচনী রায়ে রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকার প্রদান করলে তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার ব্রত গ্রহণ করেন। সেই ব্রত হচ্ছে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা করছেন। রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যাতে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে; সেদিকে তাঁর তীক্ষ্ম নজর।
তাঁর পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভালোমানুষি, সরলতা ও উদারতার জন্য ষড়যন্ত্রের যূপকাষ্ঠে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রকারীদের যড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য জাল ছিন্ন করে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটির সদস্যদের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করে তাদেরকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের কাঠগড়ায় সোপর্দ করেছেন। বিচারের রায়ে যাদের ফাঁসির দ- হয়েছে তাদেরকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-, জেল হত্যা, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হত্যা মামলার বিচার করেছেন। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক চক্রের বিষদাঁত ভেঙে দিয়েছেন। সাম্প্রদায়িক তমসায় দেশজুড়ে যে বিষাক্ত জঞ্জাল স্তপীকৃত হয়েছে, তাকে সাফ করার জন্য শেখ হাসিনার আরো দু’তিন টার্ম রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দরকার।
আজ চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ গৌরবের দিন। আজ বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিলো। কোন কারণে তা পিছিয়ে গেলেও সে উপলক্ষেই আজ পলোগ্রাউন্ডে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভা কর্মসূচি স্থির করা হয়েছিলো।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলটি বাংলাদেশের গর্ব, মর্যাদা এবং একটি মেগা কাঠামো সম্পন্ন করার সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটাবে। টানেলের কারণে সড়ক নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কর্ণফুলী টানেল দিয়ে আনোয়ারা ক্রসিং হয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
এতে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকায় গতি সঞ্চারিত হবে এবং জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থান বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উন্নয়নে এই টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের প্রথম টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।
টানেলটি পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড (কাফকো) কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার । এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটি টিউবে দুটি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। ক্রস প্যাসেজগুলো জরুরি পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার। ভেতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার। টানেলের সাথে ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে মোট ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। চীনের এমি ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বাকি অর্থ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দিয়েছে। ৬ শতাংশ কাজ বাকি থাকা টানেলটি আগামী জানুয়ারিতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হতে পারে।
শেখ হাসিনা আজ নেতৃত্বের যে স্তরে উপনীত হয়েছেন, তার ধারে কাছেও আর কোন নেতা-নেত্রীকে দেখা যাচ্ছে না। নেতৃত্বের এই পর্যায়ে পৌঁছতে তাঁকে কম কষ্ট করতে হয়নি, বাধা-বিঘœও পোহাতে হয়নি। একবার তো দলকে নির্বাচনী বিজয় এনে দিতে না পারায় তিনি দলের দায়িত্ব থেকেও সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।
সেই অবস্থা থেকে দলকে কিভাবে আজকের অবস্থানে টেনে তুললেন, সেটা এক বিস্ময়কর সাফল্যগাথা। কিভাবে তিনি বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে দলকে বরমাল্য গলায় পড়াতেও সক্ষম হলেন, বিশ্লেষণ করে আমি যা খুঁজে পেয়েছি তা হলো তাঁর উচ্চাভিলাষমুক্ত সহজ সরল জীবনবোধ, দেশের প্রধান জাতীয় নেত্রী হলেও সে কারণে তাঁর কোন অহমিকা নেই, সাধারণ বাঙালি নারীর মতোই তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাপন; সত্য উচ্চারণের জন্য সৎসাহস, মিথ্যা কথা বলাকে মনে করেন পাপ, মিথ্যাবাদীকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করেন; মাটি ও মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা, সত্য, শুভ্র, সুন্দরের পূজা, ব্যক্তিগত চরিত্রের প্রশ্নাতীত সততা, অন্তরে নিত্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের লালন। বাংলাদেশের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার জন্য শেখ হাসিনা তাঁর জীবনের উপর চড়া দরে বাজি ধরেছেন। এসব কারণে শেখ হাসিনা এক অপরাজেয় নেত্রী হয়ে উঠেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, জনস্বার্থ এবং গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে ওঠায় শেখ হাসিনার জীবনের ওপর চরম ঝুঁকি বিরাজ করছে। অদৃশ্য আততায়ীরা বন্দুক, গুলি, বোমা, ছুরি নিয়ে আঘাত করে তাঁর জীবনকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁকে ছায়ার মত অনুসরণ করছে। ইতিমধ্যে অনেকবার তাঁর জীবনের ওপর মারাত্মক হামলা হয়েছে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে অনেকে শহীদ হয়েছেন কিংবা পঙ্গু হয়ে গেছেন জীবনের তরে। শেখ হাসিনা জানেন দেশীয় জঙ্গী, মৌলবাদী, স্বাধীনতা বিরোধী এবং বিদেশী সা¤্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী, বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি সুযোগ পেলে তাঁকে ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবে। কিন্তু সেজন্য তো তিনি ঘোমটা দিয়ে ঘরে বসে থাকতে পারেন না। জনগণ তাঁকে দেশ শাসনের ভার দিয়েছে, জনগণের আমানত নিজের জীবন দিয়ে হলেও তাঁকে রক্ষা করতে হবে। তাঁকে হাটে মাঠে ঘাটে জনগণের কাছে জনগণের কাজে যেতে হবে। তাতে জীবন যদি যায়, যাবে। তাঁর পিতামাতা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রীরা দেশের জন্য তাঁদের মূল্যবান জীবন নিঃশেষে বিলিয়ে দিয়েছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

জয় বাংলা

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত গতকাল এক রায়ে বলেছে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান নয়। ইতিপূর্বে হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান বলে রায় দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সেই

বিস্তারিত »

সাংবাদিক মাহবুব উল আলমের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, বাম রাজনীতির নীরব সমর্থক ও সংগঠক, মাইজভাণ্ডারী দর্শন ও মওলানা ভাসানীর একনিষ্ঠ অনুসারী এবং সাহিত্যিক মোহাম্মদ মাহবুব উল আলম হাটহাজারী

বিস্তারিত »

আতাউর রহমান খান কায়সার

আতাউর রহমান খান কায়সার চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আনোয়ারার জমিদার এয়ার আলী খান বঙ্গীয় আইন পরিষদ

বিস্তারিত »

বাংলাদেশে আবার পাকিস্তানের জিগির

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী শেখ হাসিনার যুগপৎ পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা উঠতে না উঠতেই প্রধান

বিস্তারিত »

এস আলমের সমর্থনে চট্টগ্রামের মানুষ রাস্তায় নামতে পারে

সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছে, চট্টগ্রামের এস আলম শিল্পগোষ্ঠী। এস আলমের স্বত্ত¡াধিকারী সাইফুল আলম মাসুদ, তাঁর স্ত্রী এবং শিল্পগোষ্ঠীর পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত তাঁর ভাইদের ব্যাংক

বিস্তারিত »

ব্যবসায়ী শিল্পোদ্যোক্তারা আতঙ্কিত

দেশের বৃহৎ কর্পোরেট শিল্পগোষ্ঠীগুলি সরকারের হয়রানির ভয়ে কুঁকড়ে আছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদেরকে নিয়ে যে টানা হ্যাঁচড়া শুরু করেছে, তার কোনো থামাথামি

বিস্তারিত »

কক্সবাজার রেললাইন, বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মা সেতু অনেক প্রধানমন্ত্রীর কাজ এক প্রধানমন্ত্রী করে ফেলছেন :

কেউ কি ভেবেছিলো কক্সবাজারে ট্রেন যাবে ? কেউ কি ভেবেছিলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গ হবে এবং সেই সুড়ঙ্গ পথই কর্ণফুলীর পানি পাড়ি দিয়ে এপার ওপার

বিস্তারিত »

আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযোদ্ধা এজাহার মিয়া প্রথম বঙ্গবন্ধুর কবর জেয়ারত করেন

পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্য এবং নিকট আত্মীয়স্বজনকে পৈশাচিক উপায়ে হত্যা করার পর দেশে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ

বিস্তারিত »

বঙ্গবন্ধুর কবর প্রথম জেয়ারত করেন মুক্তিযোদ্ধা এজাহার মিয়া

পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্য এবং নিকট আত্মীয়স্বজনকে পৈশাচিক উপায়ে হত্যা করার পর দেশে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ

বিস্তারিত »