আজ ২৩ সেপ্টেম্বর নিখিল ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ নারী বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের আত্মাহুতি দিবস ভাব গম্ভীর পরিবেশে পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে কলাকেন্দ্র ও চট্টলীয় ইয়থ কয়ারসহ বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে। সকালে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবের (বর্তমানে রেলওয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তর) সম্মুখে প্রীতিলতার ভাস্কর্যে মাল্যদান করে ব্রিটিশ বিরোধী মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। প্রীতিলতার ভাস্কর্যে পুষ্পার্ঘ অর্পণকালে উপস্থিত ছিলেন কলাকেন্দ্রের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, কলাকেন্দ্র ও চট্টল ইয়থ কয়ারের সাধারণ সম্পাদক অরুণ চন্দ্র বণিক, নারীনেত্রী রেহেনা চৌধুরী, শিল্পী সুজিত ভট্টাচার্য্য দোলন, সাংস্কৃতিক সংগঠক প্রণব রাজ বড়–য়া, সুজিত দাশ অপু, সুজিত চৌধুরী মিন্টু, পাহাড়তলী রেলওয়ে হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল চন্দ্র শীল, শিক্ষক প্রিয়াংকা চৌধুরী, শিক্ষক রহিমা খাতুন ও আবুল কালাম, ছবির আহমদ, শিল্পী শীলা চৌধুরী, সমীরন পাল, জয়া দত্ত, বেবী দাশ নুপুর, নন্দিনী রায়, রূপা রায়, প্রত্যাশা বড়–য়া, টিটু সেন প্রমুখ। পুষ্পার্ঘ অর্পণের পর রেলওয়ে হাই স্কুলে আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯১১ সালে প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের জন্ম, পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে তাঁর পৈতৃক নিবাস। তাঁর পিতা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দাদার ছিলেন চট্টগ্রাম পৌরসভার হেডক্লার্ক। প্রীতিলতা খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি ১৯২৭ সালে জামালখানের ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৯ সালে ইডেন কলেজ থেকে মেয়েদের মধ্যে প্রথমস্থান অধিকার করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। তিনি সরকারী বৃত্তি পেয়েছিলেন। ১৯২৯ সাল থেকে প্রীতিলতা বিপ্লবী দলের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৩১ সালে তিনি কলকাতায় বি.এ পরীক্ষা দিয়ে ডিস্টিংশনসহ উত্তীর্ণ হন এবং চট্টগ্রামে ফিরে এসে নন্দনকানন অপর্ণাচরণ হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩২ সালে প্রীতিলতা ধলঘাটে মাস্টারদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু সে সময় খবর পেয়ে ইংরেজ ক্যাপ্টেন ক্যামেরুনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বাড়িটি ঘেরাও করে। এতে বিপ্লবীদের সাথে পুলিশের সশস্ত্র সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে ক্যাপ্টেন ক্যামেরুন নিহত ও বিপ্লবী নায়ক নির্মল সেন শহীদ হন।
১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাস্টারদা প্রীতিলতার নেতৃত্বে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছয়জন বিপ্লবী মাস্টারদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে যান। প্রীতিলতার পরনে খাকী পোশাক-কোমরে চামড়ার কটিবন্ধে গুলিভরা রিভলবার ও চামড়ার খাপে গুরখা ভোজালী; মাথার দীর্ঘ কেশরাশিকে সুসংবদ্ধ করে তার উপরে সামরিক কায়দায় পাগড়ি। অন্যান্য সবার হাতে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সময় লুণ্ঠন করা রাইফেল, রিভলভার, ভোজালি ও কাঁধের ঝোলাতে বোমা। সফল আক্রমণ পরিচালনা করে প্রীতিলতা বিপ্লবীদের নিয়ে বেরিয়ে আসেন এবং তাদেরকে নিরাপদ আস্তানার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে নিজেও আক্রমণস্থল থেকে সরে আসছিলেন। কিন্তু এসময় অদূরবর্তী এক নালার মধ্যে আত্মগোপন করে থাকা এক ইংরেজ যুবকের গুলিতে প্রীতিলতা আহত হয়ে পড়ে যান। তাঁর পক্ষে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ওদিকে তখন ইংরেজ সৈন্যরা ক্লাবের দিকে ছুটে আসছিল। আর কোন কিছু ভাবার সময় ছিল না, প্রীতিলতা ধরা পড়লে তাঁর সম্মান ক্ষুণœ হতে পারে এ আশংকা করে সঙ্গে থাকা সায়নাইড মুখে ঢেলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্রীতিলতার এই আত্মদান ব্যর্থ হয়নি। পরবর্তী পনের বছরের মধ্যে সা¤্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার এদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও প্রীতিলতা ছিলেন এক অবিনাশী প্রেরণা।