অসৎ ব্যবসায়ীরা নানা উপায়ে বিদেশে টাকা পাচার করে। তন্মধ্যে একটা বহু পুরাতন কৌশল হলো রপ্তানির আড়ালে মানি লন্ডারিং করা। চট্টগ্রামের বহুল ব্যবসায়ীই মানি লন্ডারিং-এর সাথে জড়িত। সম্প্রতি রপ্তানির আড়ালে ‘মানি লন্ডারিং’ করতে গিয়ে জাহাজে কনটেইনার তোলার ডাক আসার একটু আগে অল্পের জন্য ধরা খেয়েছে ঢাকার বাংলা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড।
কালো টাকা সাদা করার কৌশল ও সরকারের নিকট হতে অবৈধ উপায়ে নগদ প্রণোদনা গ্রহণে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটির অপকৌশল রুখে দিলো চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন ইস্টার্ন লজিস্টিকস ডিপোতে বাংলা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের দুই কনটেইনার খাদ্য পণ্য আটক করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, রপ্তানির জন্য মালয়েশিয়ায় এক লাখ তিন হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ফুড স্টাফ (Food Stuff) এর দুইটি পণ্যচালান পাঠানোর কথা ছিল ঢাকার (নারায়নগঞ্জ ও মতিঝিলে অফিস) রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের। এ জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটির বন্দর গোসাইডাঙ্গার আর ইসলাম এজেন্সিকে কাজ দেয় তারা।
আর ইসলাম এজেন্সি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এক্সপোর্ট নম্বর-সি-১৭৭৬৮৮৮ গত ২১ ডিসেম্বর এবং সি-১৭৬১৯৭৭ গত ১৮ ডিসেম্বর দাখিল করে।
পরে ইস্টার্ন লজিস্টিকস ডিপোতে (কাটগড়, উত্তর পতেঙ্গা) দুইটি পণ্যচালানের বিপরীতে দুইটি ২০ ফুট কনটেইনারে পণ্য বোঝাই করা হয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে উঠার ডাক আসার অপেক্ষায় ডিপোতে কন্টেইনার দুইটি রাখা হয়।
গোয়েন্দা তথ্যে প্রতি কনটেইনারে প্রায় ১১ টন পণ্য থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই বলে জানতে পারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। এ তথ্যের ভিত্তিকে কনটেইনার দুইটি খুঁজে বের করে কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন ও রিসার্চ (এআইআর) শাখা।
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সংশ্লিষ্ট ডিপো ও সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে ওই দুইটি কনটেইনারের সীল কেটে পণ্য পরীক্ষা করে এআইআর শাখার কর্মকর্তারা।
কনইনারের সামনে সুসজ্জিত মুড়ি, ড্রাই কেক টোস্টের কার্টুন সরিয়ে পিছনে ফাঁকা এবং প্রতি কনটেইনারে প্রায় ১১ টন পণ্য থাকার কথা থাকলেও এআইআর শাখার কর্মকর্তারা পেয়েছেন মাত্র আধা টন পণ্য। ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য বুঝে নিলেও কম পণ্য থাকার বিষয়ে কোন সদুত্তোর এ সময় দিতে পারেনি ইস্টার্ন লজিস্টিকস ডিপো কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে এআইআর শাখার সহকারী কমিশনার রেজাউল করিম জানান, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে কালো টাকা পাচার করে রপ্তানির নামে টাকা সাদা করার অপচেষ্টা করেছে তারা। তাছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে খাদ্য সামগ্রী রপ্তানির ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনা দেয় বাংলাদেশ সরকার। মানি লন্ডারিং, রপ্তানির আড়ালে কালো টাকা সাদা করা ও অবৈধভাবে সরকারি প্রণোদনা গ্রহণের অপচেষ্টাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছে এ চোরাচালন চক্র।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় কাস্টমস আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং দ্রুত অনুসন্ধান শুরু করবে কাস্টম হাউসের এন্টি মানিলন্ডারিং ইউনিট।’