চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ইউনিয়ন পর্যায়ের ২০ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৮১ পদের ৫৯টিই শূণ্য। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফটিকছড়ির ১৮টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভায় প্রতিষ্ঠা করা হয় ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ১০টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশী জনগোষ্ঠীকে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন রকম সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদানের নিয়ম থাকলেও জনবলের অভাবে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। কোন কোন কেন্দ্র নিয়মিত না খোলায় সেখানে বাসা বেঁধে বসবাস করছে কবুতর।
জেলার বৃহৎ এ উপজেলায় জনসংখ্যা কয়েক লাখ। তবে সে অনুপাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও মিলছে না আশানুরূপ সেবা। ফলে কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে সেবা না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে এলাকার সাধারণ লোকজনদের। আবার দিনের পর দিন পেরিয়ে গেলেও খোলা হয় না কোনো কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কোনোটি সপ্তাহে দু-একবার খুললেও পলকেই তা বন্ধ করে চলে যান সংশ্লিষ্টরা।
নানারকম অনিয়ম, চিকিৎসক না থাকাসহ পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। সম্প্রতি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ফটিকছড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সরজমিনে ঘুরে এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তথ্য মতে- ১০টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে চলছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫০টি পদের বিপরীতে বর্তমানে পদায়িত আছেন মাত্র ১১ জন। তাদের মধ্যে ৬টিতে মেডিকেল অফিসার, ১টি করে মিডওয়াইফ, ফার্মাসিস্ট ও অফিস সহায়ক। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম বলেন- ১০টি কেন্দ্রে ৫০টি পদের বিপরীতে আছে ১১জন। জোড়াতালি দিয়ে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। একেক সময় একেকজনকে দিয়ে এগুলো খোলা হয়। নিয়মিত চিকিৎসকও থাকেন না। ২০১০ সালের পর থেকে ৩য় ও ৪র্থ নিয়োগ বন্ধ। ফলে লোকবল সংকট তৈরী হয়েছে। সরকারের উদ্যোগ আছে আউটসোর্সিং সিস্টেমে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে।
অন্যদিকে অন্য ১০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থাও একি। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে ৩ জন করে থাকার কথা । কিন্তু মোট ৩১ টি পদের মধ্যে লোকবল আছে ১১জন। উপজেলা কোন কোন ইউনিয়নে এসব স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র সপ্তাহে একদিনও খোলা হয় না। তবে সপ্তাহে কোনদিন কোন কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকলেও নির্দিষ্ট ডাক্তার ছাড়া অন্যান্য কর্মচারী দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও এমওএমসিএইচ ডা. কাউসার আক্তার পপি (অতিরিক্ত) বলেন- ১০টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৩১ টি পদের বিপরীতে আছে ১১জন। চরম জনবল সংকটে মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১০টি কেন্দ্রের মধ্যে ডাক্তার আছে ৬জন। কিছু দায়িত্বরত কর্মকর্তা বা কর্মচারী তাদের নির্দিষ্ট নিয়োগস্থানে ৪ দিন সেবা দিলে অন্যগুলো দেয় ২দিন। ফলে সপ্তাহে বেশিরভাগ সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।
সরেজমিনে উপজেলার সুন্দরপুর ইউপির ২নং ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় যুবক ওয়াশির বলেন- সপ্তাহে একদিন একজন মহিলা আসেন। তিনি কিছু ঔষুধ দিয়ে চলে যান। কাউকে চিকিৎসা করেন না। ২০১৭ সালের দিকে একজন ডাক্তার আসছিল এরপর কোনদিন আর ডাক্তার আসতে দেখেননি তিনি।
একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মুজিব বলেন- ৫-৬ বছর আগে ডাক্তার আসছিল। এখন মাঝেমধ্যে মহিলা একজন এসে ওষুধ কিছু দিয়ে চলে যায়। স্বাস্থ্য কেন্দ্র পর্যাপ্ত ভবন, চিকিৎসা সামগ্রী থাকলে এখন তা কোন কাজে আসছে না। এর ভিতর এখন কবুতরের বাসা।