দোহায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনার পর তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ অভিযোগ করেন যে, পাকিস্তান ডুরান্ড লাইন নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
মিডিয়ার সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, এই সীমানা একটি কাল্পনিক রেখা এবং এটি শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে আলোচিত হয়নি।
মুজাহিদ বলেন, কাতার সরকার ‘সীমান্ত’ শব্দটি যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা আমাদের কোনো চুক্তির ভিত্তিতে নয়। আমরা এটি মেনে নেইনি। এই বিষয়ে আমাদের ও তাদের মধ্যে কোনো চুক্তি নেই। ডুরান্ড লাইন আফগান জাতির অবস্থান তুলে ধরে এবং একে কখনোই ‘সীমান্ত’ বলা যাবে না। এটি জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্ন এবং এ বিষয়ে জাতিই সিদ্ধান্ত নেবে।
আফগানিস্তানের আপত্তির পর কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের দেওয়া সরকারি বিবৃতির ভাষা পরিবর্তন করে। আগের বিবৃতিতে উল্লেখ ছিল — দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সীমান্তে। যা বদলে তারা করেছে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে।
ডুরান্ড লাইন কী?
ডুরান্ড লাইন হলো আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বিতর্কিত রেখা। এটি প্রথম নির্ধারিত হয় ১৮৯৩ সালে হিন্দুকুশ অঞ্চলে ব্রিটিশ ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে।
এই সীমানা নির্ধারণ করেন ব্রিটিশ কূটনীতিক স্যার হেনরি মর্টিমার ডুরান্ড এবং তৎকালীন আফগান আমির আবদুর রহমান খান। উদ্দেশ্য ছিল — দুই পক্ষের প্রভাব-সীমা নির্ধারণ ও সম্পর্ক উন্নয়ন।
চুক্তি অনুযায়ী, এই রেখা চীন সীমান্ত থেকে ইরান সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি পশতুন জনগোষ্ঠীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে — যার কারণে পরবর্তীতে জাতিগত উত্তেজনা তৈরি হয়।
এছাড়াও, বেলুচিস্তান তখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ওয়াখান করিডোর (যা এখন আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান ও চীনের সীমানার মধ্যবর্তী এলাকা) নির্ধারিত হয় ব্রিটিশ ও রুশ সাম্রাজ্যের মাঝে বাফার জোন হিসেবে।
১৯১৯ সালে অ্যাংলো-আফগান চুক্তির মাধ্যমে এই সীমানা কিছুটা পরিবর্তন হয়। চুক্তিটি ১০০ বছরের জন্য হলেও, ১৯৯৯ সালে তা নবায়ন করা হয়নি।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর দেশটি ডুরান্ড লাইনকে নিজেদের আন্তর্জাতিক সীমানা হিসেবে গ্রহণ করে, কিন্তু আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত তা স্বীকৃতি দেয়নি। আফগানদের দাবি, সিন্ধু নদীর পশ্চিম অংশের সব এলাকা ঐতিহাসিকভাবে আফগান ভূখণ্ড।
যদিও সাম্প্রতিক সংঘাতের মূল কারণ ডুরান্ড লাইন নয়, বরং পাকিস্তানে সহিংসতা বৃদ্ধি। ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা বেড়েছে।
পাকিস্তান অভিযোগ করে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আফগানিস্তানের ভেতর থেকে পরিচালিত হচ্ছে। তবে তালেবান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
সম্প্রতি, ১১ অক্টোবর কাবুলে একাধিক বিস্ফোরণের পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘটনার সময় তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে ছিলেন — যা পাকিস্তানের জন্য একটি কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। এরপর তালেবান পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর আক্রমণ চালায় এবং ইসলামাবাদ কঠোর জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়।