জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতে শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচনি গুঞ্জন।যদিও এখনো ঠিক হয়নি আগামী উপজেলা নির্বাচনের দিন তারিখ। তারপরও এই নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে ফটিকছড়িতে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। চলছে হিসাব নিকাশ। বিশেষ করে কারা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন, আর কার ভাগ্যে জুটবে টিকেট? কারা হবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী- মূলত এসব বিষয় নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
এদিকে, মনোনয়ন প্রত্যাশিরাও শুরু করে দিয়েছেন দৌঁড়ঝাঁপ। যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন দলের নেতাকর্মীদের সাথে। এলাকার বিবাহ, মেজবান, মাহফিল, খেলাধুলাসহ নানা অনুষ্ঠানে যথাসাধ্য উপস্থিত হয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। তদবির চালাচ্ছেন উপরমহলেও। এলাকার জনগণ ও দলের হাইকমান্ডের নজর কাড়তে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। বিভিন্নভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীর।
অন্যদিকে বৈঠক, আড্ডায় চায়ের চুমুকে ঝড় উঠছে উপজেলা নির্বাচনের বিষষে। সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ
সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় উপজেলা নির্বাচনে না করার সম্ভবনা বেশি। যেকারণে আওয়ামীলীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম সবার মুখে মুখে। এছাড়া শোনা যাচ্ছে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নামও।
তবে দীর্ঘদিন পর আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি পাওয়ায় ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা যথেষ্ট ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। উচ্ছাস দেখা দিয়েছে তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে। উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় চেয়ারম্যান পাবেন এমনটি আশা করছেন তারা। নেতৃবৃন্দের মধ্যে নিজ দলীয় এমপির সঙ্গে মিলে মিশে ফটিকছড়ির উন্নয়নে কাজ করতে অনেকেই মুখিয়ে আছেন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে। তবে মনোনয়ন প্রত্যশী অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা মেনে নিবেন এমনটি মত প্রকাশ করেছেন।
এদিকে গুঞ্জন উঠেছে, আগামী উপজেলা নির্বাচনে থাকছে না দলীয় প্রতীক। যে কারণে দলীয় প্রতীক না থাকলে অনেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তবে যে কোন একজনের জন্য দলীয় সমর্থন থাকতে পারে এমনটিও মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।
এরই মধ্যে সম্ভাব্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছেন তারা হলেন—উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম নাজিম উদ্দিন মুহুরী, উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ বাকের, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাদাত আনোয়ার সাদি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাসিবুন সুহাদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আবুল বশর, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট সালামত উল্লাহ চৌধুরী শাহীন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট উত্তম কুমার মহাজন, লেলাং ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাহীন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যন মুজিবুল হক চৌধুরী, ধর্মপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যন ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল কাইয়ুম, ব্যবসায়ী হেলাল মোহাম্মদ নুরী, উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা এডভোকেট আফসার উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আরো অনেকের নাম উঠে আসতে পারে।
২০১৯ সালের ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি উপজেলাতে মোট ১১ জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করেছিল। সে সময়ে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নাজিম উদ্দিন মুহুরী। তিনি স্বতন্ত্র পদের প্রার্থী হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়বের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। হুসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী খাজিদাতুল আনোয়ার সনির কাছে পরাজিত হন। তবে তিনি এ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা, বা তাঁর সমর্থিত কোন প্রার্থী থাকবেন কিনা সাধারণের মাঝে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে?
নাজিম উদ্দিন মুহুরী গত উপজেলা নির্বাচনে তাঁর উপর অবিচার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এলাকাবাসী যদি চায় আসন্ন নির্বাচনে আবারো দলের মনোনয়ন চাইবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে দেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যেভাবে দলকে সুসংগঠিত করে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করেছি, তেমনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও এর ব্যত্যয় হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবো না। আমার ক্ষমতার দরকার নেই, দলের আনুগত্য দরকার।
আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ বাকের বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে জড়িত। দলের একজন পরীক্ষিত কর্মী। ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করার মতো দক্ষতা আমার আছে। আমার রাজনীতির বয়স ৩৭ বছর। আমাদের থেকে অনেক কম বয়সী মানুষ জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। এক্ষেত্রে আমার চাওয়ার মতো প্রায়োরিটি আছে। দলের সবাই সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর যদি আমাকে মনোনীত করেন আমি নির্বাচন করব। দলের বাইরে গিয়ে কিছু করব না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাদাত আনোয়ার সাদী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সকল ভালো কাজের সঙ্গে জড়িত। রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কাজ করেছি। করোনার সময় ফটিকছড়িতে কোভিড হাসপাতালে ১৭ লক্ষ টাকা মানুষের জন্য দিয়েছি। ফটিকছড়ির বৃদ্ধাশ্রমের যে ব্রিজটি সেটা আমি টেন্ডার করে এনেছি। আমি চাই এলাকার সকল স্তরের মানুষের জন্য কাজ করতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো দায়িত্ব দেন সেটা পালন করতে প্রস্তুত আছি।
উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল বশর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবায় জড়িত। সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট কাজেও জড়িত আছি। মানুষের সেবার পরিধি বাড়াতে এবং উপজেলাজুড়ে বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের সারথি হতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার বিশ্বাস, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
উপজেলা জাতীয় পার্টি নেতা মোহাম্মদ আবছার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দল থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আমি নির্বাচন করব।
ফটিকছড়ির আসনে এবারে ভোটার সংখ্যা ৪,৫৬,৪৯০ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৩৯,৯০৪ জন।মহিলা ভোটার ২,১৬,৫৮৩ জন। হিজড়া ভোটার ৩ জন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার অরুন উদয় ত্রিপুরা বলেন, ফটিকছড়িতে প্রথম ধাপে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ফটিকছড়ির প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী, পরবর্তী এটি এম পেয়ারুল ইসলাম, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, এম তৌহিদুল আলম বাবু, হুসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন।বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে জেবুন্নাহার মুক্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
এখন অপেক্ষার পালা তফশীল ঘোষণার পর কারা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন এবং কে হতে যাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যন।