গণতন্ত্র দূরের কথা, সভ্য পরিবেশই বিরাজ করছে না: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গণতন্ত্র তো দূরের কথা, এখানে সভ্য সামাজিক পরিবেশই বিরাজ করছে না।’
গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চক্রান্ত হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ১০ তারিখের সমাবেশ নস্যাৎ করতে, গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য চক্রান্ত হচ্ছে।’
আজ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বেলা পৌনে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এর কিছুক্ষণ আগে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে নাইটিঙ্গেল মোড়ে ফখরুলের গাড়ি আটকে দেয় পুলিশ। তখন কার্যালয়ের দিকে যেতে বাধা দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
সে সময় মির্জা ফখরুল পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘আমি আমার কার্যালয়ে যেতে পারব না? এটা কেমন কথা?’ উত্তরে পুলিশকে বলতে শোনা যায়, ‘সরি স্যার, বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।’
ফখরুল বলেন, ‘এটা আমাদের অফিস, আমাদের প্রপার্টি। আমি কেন যেতে পারব না?’
পুলিশ উত্তরে বলে, ‘হতে পারে এটা আপনার অফিস…। আমাদের ক্রাইম সিনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারোরই যাওয়ার অনুমতি নেই। পুলিশের ওপর সেখান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা সেই জায়গাটিকে ‘প্লেস অব অকারেন্স’ হিসেবে বিবেচনা করছি। সিআইডি ক্রাইম সিন নিয়ে কাজ করছে।’
পরে মির্জা ফখরুল সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে পার্টি অফিসে যেতে দেওয়া হলো না। একটি গণতান্ত্রিক দেশের শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক দল তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। একজন মহাসচিব যদি তার অফিসেই যেতে না পারে…। এখানে গণতন্ত্র তো দূরের কথা, সভ্য সামাজিক পরিবেশেই বিরাজ করছে না।’
নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া, গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘১০ তারিখের সমাবেশ যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সেজন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে, নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে গতকাল বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর আজ বৃহস্পতিবারও সেখানে বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ। বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ নিরাপত্তা রক্ষায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
আরামবাগ মোড় ও নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বসানো ব্যারিকেট দেখা গেছে। পরিচিতি নিশ্চিত না হয়ে কাউকে এখান দিয়ে যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না। যানবাহন ও সাধারণ মানুষ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাতায়াত করছেন না।
এ অঞ্চলের বাসিন্দারা যাতায়াতে সমস্যা পড়েছেন। গতকালে ঘটনার পর থেকে তারা কিছুটা আতংকের মধ্যে রয়েছেন বলে জানান। সকাল সোয়া নয়টা পর্যন্ত পল্টন এলাকার কোনো অফিস ও দোকানপাট খুলতে দেখা যায়নি।
এদিকে, আজ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
উল্লেখ্য, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশস্থল নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। দলটি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শর্তসাপেক্ষে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ। তবে বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ না করার ব্যাপারে অনড়। তবে বিকল্প স্থান হিসেবে তারা আরামবাগ, জাতীয় ঈদগাহে যেতে রাজি।
তবে সরকার বলে আসছে, কোনোভাবে রাস্তার ওপর বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। সোহরাওয়ার্দীর বিকল্প হিসেবে তারা উন্মুক্ত কোনো মাঠ চাইলে দেওয়া হবে। সমাবেশের স্থান নিয়ে দুইপক্ষ ভিন্ন মেরুতে অবস্থানের মধ্যে নয়াপল্টনে গতকাল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও শনিবার নয়াপল্টনে গণসমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় ছিলেন নেতারা