বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এম.পি. বলেছেন, প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে জনগণ ও দেশের স্বার্থে অনেক কাজ করেছি। তিনি একজন সাহসী ও আপসহীন জননেতা ছিলেন। অধিকার আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সব সময় অগ্রভাগে ছিলেন। কখনো পিছপা হননি। দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি আমাদেরকে এক ও অভিন্ন রেখেছিলেন। আমরা যদি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণে রেখে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন থাকতে পারি তাহলে সকল আন্দোলন ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হবোই-এই বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করি বলেই আমি ঐক্যের আহ্বান জানাই। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর আইসিসি কনভেনশন সেন্টারে প্রয়াত জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সিটি মেয়র মরহুম এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী ও প্রয়াত এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এম.পি.। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফর হোসেন এম.পি. তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী বড় হৃদয়ের মানুষ। জনগণের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন। আমাদেরকে নানা সময়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে যৌক্তিক পরামর্শ দিতেন এবং দল গোছাতে নেতা ও কর্মীদের সমন্বয় সাধন করতেন। সত্যিকার অর্থে মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজেই একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং পরিপূর্ণ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। তাঁর এই রাজনৈতিক পাঠশালা থেকে অসংখ্য সৃজনশীল কর্মী ও নেতা গড়ে উঠেছেন এবং এরা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক জীবনে সফলও হয়েছেন। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করে বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় আস্থা ও ভরসার প্রতীক ছিলেন। ১৯৭৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া তখন ক্ষমতায়। ঐসময় একটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। আমাদের আবদুর রাজ্জাক ভাই সেদিন হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু হতে চেয়েছিলেন। তিনি ইচ্ছেমতো তার মাইমেনদের নমিনেশন দিচ্ছিলেন। ঐসময় মহিউদ্দিন চৌধুরী ফেরারী ছিলেন। গভীর রাতে আমার বাসায় আসতেন। দলের অবস্থা এবং রাজ্জাক ভাইয়ের কুটকৌশল নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করতাম। মহিউদ্দিন ভাই সেসময় এমন কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সেগুলো কাজে এসেছিল। বঙ্গবন্ধুকে যারা ভালবাসতেন তারা যাতে নমিনেমন পান সে ব্যাপারে আমাকে উদ্যোগী হতে বলেছিলেন। আমাকে ঢাকায় গিয়ে রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে কথা বলে কি করতে হবে সে ব্যাপারেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন আমি যাদের পছন্দ করি তাদের নিয়ে ঢাকায় যেতে। আমি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বলেছিলাম আমার সাথে যারা ঢাকায় যাবে তাদেরকে রাজ্জাক সাহেব নমিনেশন দেবেন না। মহিউদ্দিন আমাকে এও বলেছিলেন হাল ছাড়বেন না। আমি হাল ছাড়িনি কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় চট্টগ্রামে ২৩টি আসনে একটিতেও আওয়ামী লীগ জিতে নি। এমনকি মীরসরাইতে আমার পরিবর্তে যাকে নমিনেশন দিয়েছিল ঐ ব্যক্তিকে আমি যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা করার পরও তিনি জঘন্যভাবে ধরাশায়ী হয়েছিলেন। তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত চিত্তে বলেন, না বলে পারছি না, রাজ্জাক ভাই দলের অনেক ক্ষতি করেছেন। শেখ হাসিনা নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে এলে তিনি দলের হাল ধরেন। সে সময়ও রাজ্জাক ভাই দলকে টুকরো করেছেন এবং আলাদা দল করেছেন। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাজ্জাক ভাইকে নমিনেশন দিয়েছিলেন। দল ক্ষমতায় গেলে রাজ্জাক ভাইকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। এতেই বুঝা যায় শেখ হাসিনা প্রতিশোধ পরায়ন ছিলেন না, তিনি বড় হৃদয়ের মানুষ। তাই আজ বলতে ইচ্ছে হয় আমরা অতীতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরামর্শে জিলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বড় পদবীধারী নেতারা এক ও অভিন্ন ছিলাম। আজও সময় এসেছে এক ও অভিন্ন থাকার এবং দলকে শক্তিশালী করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিজয় নিশ্চিত করা। তাহলেই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষা পাবে এবং দেশ ও জাতি আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকালের শিক্ষা উপমন্ত্রী ও প্রয়াত এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এম.পি. তাঁর পিতার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, আমার পিতা আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অন্তরে ধারণ করতেন। পিতাকে নিয়ে আমার নতুন করে কিছু বলার নেই। আজ আমরা একটি কঠিন সময়ের মুখোমুখি অবস্থান করছি। এক বছরেরও বেশি সময় বাকি আছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের। বিএনপি জামাত এবং স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি এখন থেকেই তাদের বিদেশী লবিস্টদের দিয়ে কীভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া যায় সেজন্য চক্রান্তের জাল বোনা শুরু করে দিয়েছে। এই চক্রান্তের জবাব দিতে হলে সংগঠনকে নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে এবং প্রবীণদের অভিজ্ঞতায় ও নবীনদের উজ্জীবিত তেজে এক সুতোয় গেঁথে সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে হবে এবং জনগণের মাঝে দলের পরিধি বিস্তৃত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিগত ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় চট্টগ্রামবাসী প্রমাণ করেছেন তারা শেখ হাসিনাকে আবারো চান। একথা শেখ হাসিনা অকপটে স্বীকার করেছেন। কেননা তিনি আকাশ থেকে হেলিকপ্টারে জনসভায় জনগণের বিশাল উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তিনি দেখেছেন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের শক্তি অভিন্ন ও ঐক্যবদ্ধ। আমার পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে সকল সংকীর্ণতা ও ব্যক্তিস্বার্থ কেন্দ্রিক স্বার্থ দূরে ঠেলে দলের এক ও অভিন্ন শক্তিকে চাঙ্গা করার সময় এসেছে বলে মনে করি।সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী যতটুকু সফল রাজনীতিক ছিলেন তার চেয়ে বেশি মানবিক। মানুষের বিপদে-আপদে সংকটে তিনি সব সময় মানুষের জন্য নিবেদিত ছিলেন। একারণেই মহিউদ্দিন চৌধুরী সর্বজনীন। আজও আমরা যারা নেতৃত্বের আসনে আছি তাদেরকে অবশ্যই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো সর্বজনীন হতে হবে এবং সুখে দুঃখে সবসময় জনগনের পাশে থাকতে হবে। তাহলেই আমরা জনগণের আস্থাভাজন হতে পারবো। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধানিবেদন করে বলেন, প্রয়াত জননেতা মহিউদ্দিন ভাই একজন সফল রাজনৈতিক ব্যক্তি। কেননা তিনি সময়ের দাবি অনুযায়ী সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করতে পারতেন। তিনি সব সময় আমাদের কাছে ছিলেন ঠিক অবিকল একজন বঙ্গবন্ধুর ছায়া হিসেবে। একজন সফল রাজনীতিকের সবচেয়ে বড়গুণ হলো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার। তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন প্রত্যেকটি সঠিক সময়োপযোগী ছিল। একারণে তিনি সফল রাজনীতিক এবং একজন অন্যন্ন গুণী মানুষ। আজ আমাদের অনেকের মাঝে এই গুণটি নেই। তিনি আরো বলেন, মহিউদ্দিন ভাই সভাপতি হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যখন হাল ধরেছিলেন শেষের দিকে চার বছর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁর সাথে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। আমরা যারা আজও মহিউদ্দিন ভাইকে অন্তরে ধারণ করি তাদেরকে সকল সংকীর্ণতা ও ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। যদি আমাদের ঐক্য অটুট থাকে এবং আমরা যদি এক ও অভিন্ন থাকি তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা অবশ্যই বিজয়ী হব এবং এই বিজয় ছাড়া আর অন্য কোন বিকল্প নেই। এই বিজয় নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সরকারের সাফল্য ও অর্জনগুলো বার বার জনগণকে বলতে হবে, বোঝাতে হবে শেখ হাসিনা মানে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রার একমাত্র অবলম্বন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান হাসনীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য বখতিয়ার উদ্দীন খান, মোঃ জাবেদ, থানা আওয়ামী লীগের এম.এ হালিম, মোঃ ইছহাক, মোমিনুল হক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সামশুল আলম, আবছার উদ্দীন চৌধুরী, গিয়াস উদ্দীন, পরিবারের পক্ষে এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন, ইউনিট আওয়ামী লীগের মামুনুর রশিদ মামুন। সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. সুনীল কুমার সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব বদিউল আলম, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আবদুচ ছালাম, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ফারুক, সৈয়দ হাসান মাহমুদ সমশের, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মোঃ হোসেন, হাজী জহুর আহমদ, জালাল উদ্দীন ইকবাল, আব্দুল আহাদ, আবু তাহের, ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, শহিদুল আলম প্রমুখসহ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, ১৫টি থানা, ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ অসংখ্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে চশমা হিল জামে মসজিদের পার্শ্বস্থ কবরস্থানে আলহাজ্ব এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী কবরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় কাজির দেউরীস্থ ইন্টানন্যাশনাল কনভেনশন হলে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।