শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে শিক্ষার্থী পড়ে আহত হবার জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) যে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তার সঙ্গে জড়িত ছিল ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক তিনটি গ্রুপের সদস্যরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে এক শিক্ষার্থী নিহতের গুজব ছড়িয়ে তারা ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় যে দুটি মামলা হয়েছে তাতে নাম উল্লেখ করা আসামিদের বেশিরভাগই সংগঠনটির কর্মী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার পর নজিরবিহীন ভাঙচুর চলে উপাচার্যের বাসভবনসহ ক্যাম্পাসজুড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার গুজব ওঠার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠে আন্দোলনকারীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতে, গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি গোষ্ঠীর ইন্ধনে চলে এই তাণ্ডব।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অন্যদিকে মোর নিতে অনেকে গুজব ছড়িয়েছে। আমাদের এক বন্ধু মারা গেছে বলে আমদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর পেছনে অন্য কোনো চক্রান্ত ছিল কিনা তা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ওই রাতে এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসেছিলেন ব্লগার ইমরান নাজির ইমন। তার দাবি বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষার্থী নিহতের খবর দেখে লাইভে আসেন তিনি। যদিও সেটিই কাল হয় তার। ভাঙচুরের মামলায় এখন দুই নম্বর আসামি ইমরান।
ব্লগার ইমরান নাজির ইমন বলেন, আমি মূলত একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর। আমি কনটেন্ট বানানোর জন্য ফুটেজ সংগ্রহ করতে সেখানে গিয়েছিলাম। আমার একটাই দাবি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে যেন আসল আসামিকে শনাক্ত করা হয়।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, বিক্ষোভ শুরু পরপরই দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে চলে ভাঙচুর। যাতে জড়িত ছিলে ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক সিক্সটি নাইন, সিএফসি ও বিজয় গ্রুপের সদস্যরা। যদিও গ্রুপগুলো যারা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের দাবি ভিন্ন।
চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, আমার মনে হয় না ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই আন্দোলনের ভিন্ন যে প্যাটার্নের কথা বলা হচ্ছে ওই প্যাটার্নের কোনো কু-কর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
চবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, আমার কোনো অনুসারী তো দূরের কথা আমিও যদি এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত থাকি তবে আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক।
চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদাফ খান বলেন, যেই জড়িত থাকুক সেটা যদি আমার ছোটভাইও হয়ে থাকে সেও অপরাধী। এটা ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত বিষয় নয়।
ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলায় যে ১৪ জনের নাম রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিক্সটি নাইন গ্রুপের সদস্যদের। অভিযোগ উঠে গেল ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয় গ্রুপটির নেতা রাজু মুন্সীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া চার সেপ্টেম্বর হলে গিয়ে তার কক্ষ সিলগালা করে প্রশাসন। তাই শাটল ট্রেনের দুর্ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে সিক্সটি নাইন। যদিও কারো ব্যক্তিগত ক্ষোভের দায় সংগঠনটি নেবে না বলে জানান ছাত্রলীগ সভাপতি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, চবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। যারা এ কাজ করেছে তারা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের দায় নেয়ার সুযোগ নেই। তবে ভাঙচুরের ঘটনায় কার কার ইন্ধন আছে তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।
চবি প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার বলেন, মামলা করা হয়েছে। পুলিশের কাছে তথ্য আছে, আমাদের কাছেও তথ্য-প্রমাণ আছে। সবকিছু অনুসন্ধান করে যে বা যারা দোষী তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ঘটনায় ১৫টি মত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ আছে প্রশাসনের কাছে। সে ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করছে প্রশাসন।