বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ২০১৫ সালে প্রথম ঢাকায় আসা। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়ায় ঢাকায় থাকা শুরু।
দীর্ঘ সাত বছর ধরে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে আছি। ঢাকায় আরও কিছু আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। বারবার ক্যাম্পাসে ঘুরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেও যানজটের এই শহরে আমার ক্যাম্পাসে আসতে তাদের বেশ অনীহা।
কারণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর শেষ প্রান্ত সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত। রাজধানীর অন্য যে কোনো জায়গা থেকে ক্যাম্পাসে আসতে অথবা এই এলাকায় আসতে একজন ব্যক্তিকে ঢাকা শহরের প্রায় প্রধান সবগুলো যানজট অতিক্রম করে আসতে হবে।
একজন ব্যক্তি যদি মিরপুর থেকে সদরঘাটে আসার পরিকল্পনা নেয়, তবে পাঁচ মিনিট পথ আধাঘন্টার বেশি অনুপাতে ধরেই তাকে বের হতে হয়। দেখা যাবে সামান্য দূরত্বের যাতায়াতে জন্য লেগে যাচ্ছে পুরো দিন।
আমার মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজারও শিক্ষার্থীর গল্পও হয়তো একই। পাশাপাশি যারা স্থায়ীভাবে বাস করছেন এই এলাকায় তাদের জীবনেও অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ যানজট।
আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক, বন্ধুরা মিলে সদরঘাটের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ড থেকে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। জাবির বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে সকাল ১০টায় বাসে উঠে বসল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তাদের বাসটি ক্যাম্পাস থেকে এক থেকে দুই কিলোমিটার অতিক্রম করতেই অন্তত আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা সময় প্রয়োজন পড়বে। কারণ বাসটিকে অতিক্রম করতে হবে আদালত পাড়া, রায় সাহেব বাজার মোড় এবং তাঁতীবাজার মোড় সিগন্যাল। এরপর শুরু হবে গুলিস্তানের যানজট। যা বংশাল এলাকা থেকেই শুরু। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড পার হতে আরও এক থেকে আধা ঘন্টা সময় অর্থাৎ এক থেকে দুই ঘন্টা সময় লেগে যাবে।
এরপর শুধু গুলিস্তান পার হতে সময় লাগতে পারে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা। পরে পল্টন মোড় থেকে হয়তো শাহবাগের আগ পর্যন্ত কিছুটা জ্যাম মুক্ত গতি থাকবে। এই পথ অতিক্রম করতে হয়তো পাঁচ মিনিট সময় লাগবে। এরপর যদি শাহবাগ মোড়ে যানজট তৈরি হয় তবে আরও আধা ঘন্টা। এরপর রয়েছে কাটাবন সাইন্সল্যাব পর্যন্ত কয়েকটি সিগন্যালের যানজট। তারপর রয়েছে আসাদগেট, কলেজগেট, শ্যামলী, গাবতলী এলাকার যানজট। রাজধানীর এই পথ পাড়ি দিতেই দুপুর গড়িয়ে পড়বে। ফিরতি পথেও একই বিড়ম্বনা। শিক্ষার্থীর দলটিকে যদি মিরপুর, গাজীপুর বা অন্য কোথাও যেতে চায় একই যানজটে পড়তে হবে।
প্রতিদিন সদরঘাট নদী বন্দর ব্যবহার করে রাজধানীতে আসছে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষেরা। এদিকে রয়েছে ফল-সবজি অন্যান্য নিত্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার ও আড়ৎ। পদ্মা সেতু থেকেও রাজধানীতে প্রবেশের একটি অন্যতম পথ হচ্ছে এই পুরান ঢাকা। এখান থেকে লাখো মানুষের প্রতিদিন যাতায়াত রাজধানীর নানা প্রান্তে।
২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হলো রাজধানীবাসীর স্বপ্নের মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল। যে মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে দিনের পর সড়কে দূর্ভোগ ও কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়েছিল রাজধানীবাসীকে, এখন তার সুফল নেওয়ার সময়। কিন্তু পুরান ঢাকার মানুষ কেন এই সুফল পাবে না? কেন পুরান ঢাকার মানুষ যানজট থেকে মুক্তি পাবে না? কেন পুরান ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী এলাকা যাতায়াত জটিলতায় এখনও প্রান্তিক হয়ে থাকবে?
মেট্রোরেল প্রকল্পে পুরান ঢাকাকে যুক্ত করা হলে এই এলাকার মানুষের জীবন যাপন ও ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই অঞ্চলের মানুষেরা চলাচলে স্বস্তি পেলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অর্থনীতিতেও আসবে গতি।