নিউজ ডেস্ক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলমসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ মামলা করা হয়েছে। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার মামলাটি করেন।
মামলায় বাকি আসামিরা হলেন— গোলাম সরোয়ার, সাবেরা সরোয়ার (নীনা) ও আওরঙ্গজেব নান্নু।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানাধীন ঢাকার বনানী এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর প্লটটি ডেভেলপ করার নামে ওই প্লটের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ২৫ নম্বর প্লট ক্রয় করেন। সেখানে নকশা না মেনে উভয় প্লটে ২২তলা ও ২১তলা ভবন নির্মাণ করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ৪২০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশন কর্তৃক নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাছাইকালে দেখা যায়, অভিযুক্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলম ঢাকাস্থ বনানী এলাকার ১৭নং রোডের ২৭ ও ২৫নং প্লটে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল সারিনা ইন লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডার ছিলেন।
সংগৃহীত এবং জব্দকৃত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, অভিযুক্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তার স্ত্রী মিসেস তাহেরা খসরু আলম যৌথভাবে তার ভায়রা ভাই গোলাম সরোয়ার এবং শ্যালিকা মিসেস সাবেরা সরোয়ার নীনার সাথে হোটেল সারিনা ইন লিমিটেড নামে পাঁচ তারকা হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি গোপন করেছেন। এ ছাড়াও আসামি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার ভায়রা গোলাম সরোয়ার বনানী ১৭নং রোডের ২৫নং প্লটটি (বসতি টাওয়ার) যৌথ নামে ক্রয় করে রাজউকের অনুমোদিত ১৫ তলা নকশার স্থলে ২১তলা ভবন নির্মাণ করেন। আসামি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট, সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পরিকল্পিত ভাবে প্রথমে নিজের ভায়রাকে দিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের (সিএসই) ২৭নং প্লটের ডেভেলপার নিযুক্ত করেন। পরে সেখানে নিজের স্ত্রীসহ যুক্ত হয়ে প্লটটি আত্মসাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে জব্দকৃত রেকর্ডপত্র এবং সংগৃহীত রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ ডিসেম্বর ২০০১ সাল পর্যন্ত আসামি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রথম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য ঢাকায় ‘সিএসই ভবন’ নির্মাণের প্রয়োজনে রাজউক থেকে ঢাকাস্থ বনানী বাণিজ্যিক এলাকার ১৭নং রোডের ২৭নং প্লটটির নিলাম ক্রয় করা হয়। রাজউক থেকে প্লটটির লিজ ডিডের আগেই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট আমীর খসরু মাহমুদের সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদদের ৭৪তম বোর্ডসভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ভায়রা ভাই গোলাম সরোয়ারকে হোটেল হাবর ভিউসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে ৭৪তম বোর্ডসভার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ৭৫তম বোর্ডসভায় গোলাম সরোয়ারকে একটি বেজমেন্ট ও পাঁচটি ফ্লোর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়ার শর্তে চুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। তবে ওই বোর্ডসভায় সারিনা ইন লিমিটেড নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির সিদ্ধান্ত হয়নি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ৭৪ এবং ৭৫তম বোর্ডসভার সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি অনিবন্ধিত চুক্তি সম্পাদিত হয়। অর্থাৎ ঢাকার বনানী বাণিজ্যিক এলাকার একটি মূল্যমান ফ্লোর দেওয়া থেকে বিরত থেকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের একটি ফ্লোর আত্মসাত করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়।