মুক্তি রিপোর্ট : এরশাদের পতœী রওশন এরশাদ ও তাঁর ভাই জিএম কাদেরের মধ্যে চলমান বিরোধে আজ বৃহস্পতিবার রওশন এরশাদের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে। দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ ঘোষণা দেন।
তিনি আরো বলেন, “রওশন এরশাদ পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে গণতান্ত্রিক উপায়ে স্থায়ী চেয়ারম্যান ঠিক করব।”
এরশাদের ভাই জিএম কাদের জাতীয় পার্টির ‘গঠনতন্ত্র ভেঙে’ চেয়ারম্যান হয়েছেন অভিযোগ করে আনিসুল ইসলাম বলেন, “জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের সম্মান দেবেন রওশন এরশাদ।”
দলে বিভাজনের বিষয়টি স্বীকার করে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা রওশন বলেন, “পার্টি এখন উদ্বিগ্ন আছে। পার্টিতে কী হচ্ছে? জাপা অতীতেও ভাগ হয়েছে, এবারও কি সেটি হচ্ছে নাকি?
“হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এত কষ্ট করে পার্টি গড়ে তুলেছেন, এখন সেই পার্টিটা ভালেভাবে চলুক, মান অভিমান ভুলে যারা চলে গেছে, তারা ফিরে আসুক। আমি চাই পার্টির সবাই মিলেমিশে জনগণের সেবা করব।”
অবশ্য রওশনের সঙ্গে মহাসচিব পদে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁই থাকছেন বলে জানান আনিসুল ইসলাম। তবে রওশনের বাসায় এই সংবাদ সম্মেলনে রাঙ্গাঁ উপস্থিত ছিলেন না।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, মজিবুল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন খোকা ও নাসিম ওসমান উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
গত ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেছিলেন, “জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১ (ক) ধারা অনুযায়ী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, তার অবর্তমানে জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যান হবেন। আজ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জি এম কাদেরই আজ থেকে দলের চেয়ারম্যান হবেন।”
এরপর থেকে ভাবি রওশনের সঙ্গে কাদেরের দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পায়। রওশন অভিযোগ করেন, জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করার আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামত নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে জি এম কাদের বলেছিলেন, দলে কোনো সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করবেন তারা। চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে মঙ্গলবার জি এম কাদেরকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ঘোষণার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে চিঠি পাঠান হয় জাতীয় পার্টির নামে।
এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বুধবার স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, দলীয় ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই জি এম কাদের নিজেকে বিরোধীদলীয় নেতা ঘোষণা করতে বলেছেন।
এর জবাবে জি এম কাদের বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে তার ভাই এরশাদ ‘যেভাবে’ সিদ্ধান্ত নিতেন, তিনিও ‘সেভাবেই’ নিয়েছেন।
অন্যদিকে রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জিএম কাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সেখানে কে কী বলেছে, সেটা আমি আগে দেখব, জানব, তারপর বলব। প্রেস কনফারেন্স করব। তবে এভাবে চেয়ারম্যানের ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নাই।”
পার্টির পদ বণ্টন ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত নিয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে রওশনের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকাশ্য। তবে, সে বিরোধ সামাল দিয়ে আসছিলেন এরশাদ।
অসুস্থ থাকা অবস্থায় এরশাদ গত এপ্রিলে তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। এরপর থেকে রওশন ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছিল না।
গত ১৪ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।
তার চার দিনের মাথায় এক সংবাদ সম্মেলনে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নাম ঘোষণা করা হয়। এরশাদের স্ত্রী রওশন ওই সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন না।