চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুব আলম তালুকদার একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি করে এবার নিজের রেকর্ডও ভাঙ্গলেন। তাঁর রেকর্ড ভাঙার জন্য ধারে কাছে কেউ নেই, সুতরাং তাঁকেই ভাঙ্গতে হলো নিজের করা রেকর্ড। টানা চারবার তিনি প্রেসিডেন্টের পালক তুলে নিলেন তাঁর উষ্ণীষে।
আরেকটা রেকর্ড গড়েছেন এবার। সেটা হলো চিটাগাং চেম্বারে নতুন বসন্ত নিয়ে আসা। এমন অনেক পরিচালক নিয়ে তিনি চতুর্থ বারের মতো ক্ষমতাসীন হলেন, যারা একেবারেই নিউ ব্রিড। অবশ্য বেশ আগে থেকেই নতুন প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের চেম্বার পরিচালকম-লীতে নিয়ে আসা শুরু করেছিলেন চেম্বারের ‘কিং মেকার’ লতিফ ভাই। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ তিনি। বৃহত্তর কর্মের আহবানে যখন তিনি পার্লামেন্টে চলে গেলেন, তখন তাঁর এমন একজন ভদ্র, ন¤্র, বিশ্বস্ত উত্তরসূরীর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো, যাঁর হাতে তিনি চেম্বারের ‘রাজ্যভার’ সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকতে পারেন। সৌভাগ্যক্রমে মাহবুব ভাইকেই হাতের কাছে পেয়ে যান, যার ওপর চোখ বুজে নির্ভর করা যায়। মাহবুব ভাই শান্ত-শিষ্ট, নির্বিরোধী মানুষ। তিনি কারো লেজে পা দেন না, কারো পাকা ধানে মই দেন না। তাঁর আনুগত্য প্রশ্নাতীত।
চট্টগ্রামে চেম্বার নেতৃত্বে বহুকাল বয়স্ক, রাশভারি লোকদেরই প্রাধান্য ছিলো। পাকিস্তানের এক যুগ এবং বাংলাদেশের চার দশকই এই ধারাই অনুসৃত হয়েছে। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ব্যবসায়ীদের অভিষেক ঘটতে থাকে চেম্বার নেতৃত্বে। গত দুই টার্ম এমন অনেক নতুন মুখের ইন্ডাকশান হয়েছে। শুধু এবারই প্রথম গ্যালাক্সিতে এক ঝাঁক তারার মেলা বসে গেছে। শিল্প-বাণিজ্য জগতের এই যুবরাজরা তাদের পৈতৃক ব্যবসায়-শিল্পে আগেই অভিষিক্ত হয়েছিলেন, এখন চেম্বারে তাদের শুভাগমন ঘটলো। দুন্ধুভি, ঢোল-নহবৎ, নাকারা বাজিয়ে তাদেরকে চেম্বারে স্বাগত জানালেন মাহবুব ভাই। বেশ ক’বছর আগে বাদশা শাসিত আরব ভুখ-ে-গণতন্ত্রের দাবিতে তুমুল আন্দোলন হয়েছিলো। মিসর, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরান কম বেশি এই আন্দোলনের ঢেউয়ে দুলে উঠেছিলো। তখন এই আন্দোলনকে ‘আরব বসন্ত’ নামে সনাক্ত করা হয়।
ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থান চট্টগ্রামের বিগ বিজনেস এস্পায়ার এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কঙ্গলোমারেট থেকে বেছে বেছে নব্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের অভ্যর্থনা জানিয়ে যখন লতিফ ভাই ও মাহবুব ভাই তাদেরকে চেম্বারের পরিচালকম-লীতে উপবেশন করালেন; তখনই আমার মনে হলো আরব বসন্তের ন্যায় আরেক বসন্তের হাওয়া প্রবেশ করলো চেম্বারে। বসন্ত যৌবনের দূত-নবজীবনের বার্তাবাহী। চেম্বারের এই তরুণ তুর্কীরাও চেম্বারকে নবজীবন দান করবেন এমন প্রত্যাশা করা নিশ্চয়ই অসঙ্গত হবে না। তাঁদের অভ্যন্তরে যে প্রাণশক্তি, উদ্যাম, স্পৃহা, কর্মোদ্দীপনা, শক্তি, সৃজনশীলতা, সাহস ও সততা নিহিত আছে, সেটা চেম্বারের কর্মকা-ে বিপুল গতিবেগ সঞ্চার করবে। যৌবন তাদেরকে সুদূরের স্বপ্ন দেখাবে, কল্পনাশক্তি নতুন নতুন পরিকল্পনার প্রণোদনা দেবে, সৃজনশক্তি নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য উন্মুখ হয়ে উঠবে, তাদের প্রতিভা অনেক পথের সন্ধান দেবে।
বিদেশে পড়াশোনার সুবাদে তারা নানা বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেছেন। ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ব্যবসায় প্রশাসন, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে তাঁরা পিতৃ ব্যবসায় যোগ দিয়ে পিতাকে যোগ্য সহায়তা দিয়েছেন এবং তাদের অর্জিত জ্ঞান পিতার প্রতিষ্ঠিত শিল্প-বাণিজ্যে প্রয়োগ করে তার ভলিউম বাড়িয়েছেন, পরিধি বিস্তৃত করেছেন, শিল্পে বৈচিত্র ও ডাইভারসিফিকেশন এনেছেন।
আমাদের এই গ্রহের পাখায় বর্তমানে রকেটের গতি সঞ্চারিত হয়েছে। অভাবনীয় সব আবিষ্কার এবং অকল্পনীয় সব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীটাকে যে কোথায় নিয়ে চলেছেন সেটা বুঝতে পারার আগেই চোখের পলকে আরো নতুন কা–কারখানা তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। আমাদের চট্টগ্রামের শিল্প-বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ দিকপাল এবং চেম্বারে নবোদিত তারকারা বিশ্বের তাবৎ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বশেষ আবিষ্কার ও অগ্রগতি সম্পর্কেও ওয়াকিফহাল।
চট্টগ্রাম তথা দেশের কর্পোরেট শিল্প সা¤্রাজ্য শাসন করছেন তরুণ-যুবকরাই। যেমন বসুন্ধরার শাহ আলম সাহেবের শিল্প সা¤্রাজ্য সামাল দিচ্ছে তাঁর সুযোগ্য পুত্র; এমনিভাবে পারটেক্স গ্রুপের হাশেম সাহেবের পুত্র, আকিজ গ্রুপের আকিজ সাহেবের পুত্র, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মেজর জেনারেল আমজাদ সাহেবের পুত্র, স্কয়ার গ্রুপের স্যামসন এইচ চৌধুরীর সন্তানরা স্ব স্ব পিতার শিল্প-কারখানার সুন্দর ব্যবস্থাপনা করে উত্তরাধিকারের মর্যাদা ও মহিমা বৃদ্ধি করে চলেছেন।
চেম্বারের নবনির্বাচিত পরিচালক, যাঁদের কথা আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম, এখনো তাঁদের নাম বলা হয়নি, এবার সেটাই বলছি। চট্টগ্রামের দূর অতীতের একজন প্রধান ব্যবসায়ী নজু মিয়া সওদাগরের পুত্র হাবিব মিয়ার পুত্র প্রয়াত মাহাবুব আলীর পুত্র সালমান হাবিব (চেম্বারের নবনির্বাচিত পরিচালক) (আহা মাহবুবটা অকালে চলে গেল। মাহবুবের মত এমন উদার হৃদয়, মহাৎপ্রাণ মানুষ আমি কম দেখেছি।) টি.কে. গ্রুপের পরলোকগত চেয়ারম্যান, তৈয়ব ভাই’র পুত্র হাসনাত মোহাম্মদ মো. ওবায়দা (মার্শাল), এশিয়ান গ্রুপের এমডি সালাম ভাইয়ের পুত্র সাকিফ আহমদ সালাম এবং পটিয়ার এমপি শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র পাওয়ার বাংলা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান নাজমুল করিম চৌধুরী সারণ, প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের নাসির ভাইয়ের পুত্র সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, কেএসআরএম গ্রুপের শাহজাহান সাহেবের পুত্র শাহরিয়ার জাহান রাহাত, তাঁদের পারিবারিক শিল্পগোষ্ঠীর হাল ধরে তারা আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং ভিশন দিয়ে যেভাবে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প গ্রুপকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তেমনিভাবে চিটাগাং চেম্বারকেও তাঁদের বলিণ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্ব দিয়ে কাক্সিক্ষত মানে উন্নীত করবেন।